ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

নামে দেশ, তবে দেশ নয়!

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
নামে দেশ, তবে দেশ নয়! প্রায় ১৪ হাজার বছর আগের বাস্ক অঞ্চলের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। ছবি: সংগৃহীত

বাস্ক স্পেনের একটি আদিবাসী জাতি-ভাষাগত গোষ্ঠী যারা ফ্রান্সের পার্শ্ববর্তী বাস্ক দেশে বাস করেন। নামে দেশ হলেও বাস্ক আসলে দেশটির সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত ১৭টি স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের একটি, যাদের ভাষাও বাস্ক বা ইস্কারা।

একটি অঞ্চল, জনগোষ্ঠী ও তাদের ভাষা- তিনটিরই একই নাম হওয়ার ঘটনা বিরল। নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষার পাশাপাশি নির্দিষ্ট পতাকাও রয়েছে তাদের।



দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপে পাইরেনিস পর্বতের পশ্চিম কোণে অবস্থিত ৭ হাজার ২৩৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাস্কের জনসংখ্যা ২১ লাখ ২৪ হাজার ৮৪৬ জন। রাজধানী ভিক্টোরিয়া-গাসটিজ, বাস্ক ছাড়াও স্প্যানিশ সেখানকার সরকারি ভাষা।

রাজধানী মাদ্রিদ থেকে উপকূলীয় উত্তরে কৃষিজমিতে ফসল উৎপাদন ও চারণভূমিতে গরু পালন, কুয়াশাচ্ছন্ন সবুজ পর্বত, গ্যাটারিয়া সমুদ্রসৈকত, জাহাজগুলো পূর্ণ আলোর ঝলকানি, আঙ্গুর ক্ষেত এবং আদিবাসী ভূমিপুত্র জুয়ান সেবাস্তিয়ান এলকানোর পঞ্চদশ শতাব্দীর বাপ্তাইজের গির্জার সঙ্গে বাস্ক ভাষাভাষি মধ্যযুগীয় মাছ ধরার গ্রাম কমপক্ষে ১৪ হাজার বছরের পুরনো অঞ্চলটির সাধারণ বৈশিষ্ট্য।

বাস্কদের ইতিহাস স্প্যানিশ ও ফরাসি এবং অন্য অতীত-বর্তমানের দেশগুলো, বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার ইতিহাসের সঙ্গে একত্রিত হয়েছে। যেখানে তাদের বংশধরদের বেশিরভাগই আশপাশে ছড়িয়ে পড়লেও নিজেদের শিকড়ের সঙ্গে সংযুক্ত থেকেছে হাজার হাজার বছর ধরে।

বংশধরদের বেশিরভাগই আশপাশে ছড়িয়ে পড়লেও নিজেদের শিকড়ের সঙ্গে সংযুক্ত থেকেছে হাজার হাজার বছর ধরে।  ছবি: সংগৃহীতএমনকি স্পেনের ক্ষমতা দখলকারী স্বৈরশাসক জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর সরকার ১৯৩৮ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত আরও কয়েকটির সঙ্গে বাস্ক ভাষা নিষিদ্ধ করে রাখলেও বাসিন্দারা তা জীবিত রাখেন।
 
সে সময়কালে গড়া হাজার হাজার বাস্ক ভাষার স্কুল প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগ ঘটায় শিক্ষার্থীদের। আশপাশের উপত্যকা, অত্যাশ্চর্য পর্বতমালা, নীল সমুদ্র সৈকত এবং নীল আকাশের বর্ণনায় বাস্ক ভাষার বিশাল শব্দভাণ্ডারেও অনুপ্রাণিত অঞ্চলটির প্রজন্মের পর প্রজন্ম।

সম্প্রতি স্প্যানিশ বাস্কের গুইপুজকোয়া প্রদেশের শহর ইরেন্টেরিয়ার একটি প্রাচীন গুহায় ১৪ হাজার বছর আগের মানুষের আঁকা গুহাচিত্র পাওয়া গেছে। অন্যান্য প্রাগৈতিহাসিক গুহায় ৯ হাজার বছর আগে মানুষের বসবাসের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

১৯৩১ সালে স্পেনে প্রজাতন্ত্র গঠিত হওয়ার পর দেশের সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে আঞ্চলিক ও সাংস্কৃতিক স্বায়ত্বশাসন দেওয়া শুরু হয়। তবে বাস্ক সম্প্রদায়ের বিভক্তির কারণে অন্যদের চেয়ে পাঁচ বছর পরে ১৯৩৬ সালে ‘বাস্ক স্বায়ত্বশাসন আইন’ পাস হয়।

এরপরও ১৯৩৮ সালে স্বৈরাচারী জেনারেল ফ্রাঙ্কো স্পেনের ক্ষমতা দখলের কারণে তা বলবৎ হয়নি। ফ্রাঙ্কো ১৯৭৫ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের আন্দোলনকে রাষ্ট্রের প্রতি হুমকি মনে করে নির্দয়ভাবে দমন করেন। তিনি বাড়ির বাইরে বাস্ক ভাষার ব্যবহার ও শিক্ষা নিষিদ্ধ করেন, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দেন এবং স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদেরকে এলাকার বাইরে থেকে নিয়ে আসেন।

নিজস্ব ভাষা, নির্দিষ্ট পতাকা ও নামের সঙ্গে দেশ থাকলেও বাস্ক স্বতন্ত্র দেশ নয়, স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল।  ছবি: সংগৃহীতফ্রাঙ্কোর এ নিবর্তনমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ১৯৫০ দশকের শেষ ও ৬০ দশকের প্রথম দিকে বাস্কে গেরিলা দল ইটিএ (বাস্ক হোমল্যান্ড অ্যান্ড ফ্রিডম) গঠনের মাধ্যমে গণআন্দোলন শুরু হয়। ফ্রাঙ্কোর পর এক দশকেরও কম সময়ের মধ্যে স্পেন পরম কেন্দ্রীভূত সরকার ব্যবস্থা থেকে বিশালাকারে বিকেন্দ্রিক হয়ে যায় এবং ১৯৮৩ সালের মধ্যে ১৭টি অঞ্চলে স্বায়ত্বশাসন দিতে আইন করা হয়।

স্থানীয় সরকার গঠন, স্থানীয় দেওয়ানি আইন, পাহাড়-পর্বত, বন, কৃষি, পশুপালন, মৎস্য, অভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ উৎপাদন, বন্টন ও সরবরাহ, নগর পরিকল্পনা, গণপূর্ত, স্বায়ত্বশাসিত সরকারের মালিকানাধীন সরকারি সম্পত্তি ও পানিসম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ, বাসস্থান, সমাজকল্যাণ, রাস্তাঘাট, অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও শিল্প, সংস্কৃতি ইত্যাদি ক্ষমতা রয়েছে স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলটির। এমনকি সংবিধান অনুমোদিত নিজস্ব বিচারিক ও স্বায়ত্বশাসিত পুলিশি ব্যবস্থাও রয়েছে।

স্থানীয়ভাবে নির্বাচিত সংসদ বাস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে, স্থানীয় বাজেটের অনুমোদন দেয় এবং জাতীয় সিনেট সভায় তাদের অঞ্চলের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করে। প্রেসিডেন্ট একইসঙ্গে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের এবং সরকারের প্রধান। তাকে সহায়তাকারী নির্বাহী পরিষদ কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ থেকে স্বাধীন এবং রাজনৈতিকভাবে স্বায়ত্বশাসিত সংসদের কাছে দায়বদ্ধ।

আর্থিক স্বায়ত্বশাসিত সরকারের আয়ের উৎস হলো স্থানীয় কর ও রাষ্ট্রের সাধারণ আয়ের একটি অংশ।

বাংলাদেশ  সময়: ০১৩৯ ঘণ্টা,  ডিসেম্বর ২৮, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।