নীলফামারী: ৩২ বছর পরিবার থেকে আলাদা। হয়ে পড়েন মানসিক ভারসাম্যহীন।
নীলফামারীর ডোমার পোস্ট অফিসের বোড়াগাড়ি শাখার পোস্টম্যান হোসেন আলী এ কাজে সার্বিক সহযোগিতা করেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে (৬ জানুয়ারি) ঘটনাটি ঘটেছে নীলফামারীর ডোমারে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রায় ৩২ বছর আগে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের ডোমার উপজেলায় টাইপিস্ট পদে চাকরি পান মো. জিয়াউল হক। প্রায় সাড়ে পাঁচশ’ কিলোমিটার দূরে গিয়ে চাকরি না করার অনুরোধ করেন তার স্ত্রী। কিন্তু তিনি কোনোভাবেই চাকরি ছাড়তে চাননি। একপর্যায়ে তাদের বিয়ে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ওই সময় তাদের দেড় বছরের এক ছেলে ও চার ও ছয় বছর বয়সী দুই মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান তার স্ত্রী। এরপর থেকে জিয়াউল হকের আর কোনো খোঁজ পায় না পরিবার।
মানসিক ভারসাম্যহীন ওই ব্যক্তি পিরোজপুর জেলার ৩ নম্বর দুর্গাপুর ইউনিয়নের মৃত মোক্তাদের আলী মাঝির ছেলে।
পরিবার হারিয়ে কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দিলে চাকরিটাও চলে যায় জিয়াউলের। সেটি প্রায় ২০ বছর আগের ঘটনা। চাকরি ফেরত পেতে বিভিন্ন দপ্তরে ঘোরাফেরা করেও লাভ হয়নি। এরপর মানসিকভাবে আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। এক সময় ভিক্ষা করতে শুরু করেন। সেই টাকা দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে পাঠাতে থাকেন। পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও, ওসিসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার নামে দুই-তিনশ’ টাকা করে ৪০ থেকে ৫০টি মানি অর্ডার করেন। মানি অর্ডারের কারণ না জানায় কোনো কর্মকর্তা সেটি গ্রহণ করেননি। ফলে বারবার সেই টাকা ফেরত যায় ডোমারে। এজন্য তিনি প্রতিদিন ডোমার পোস্ট অফিসে যাতায়াত করতেন।
বৃহস্পতিবার মানি অর্ডারের মোট সাড়ে আট হাজার টাকা জিয়াউলকে বুঝিয়ে দেয় ডোমারের পোস্ট অফিস।
পোস্টম্যান হোসেন আলী বলেন, জিয়াউল হক চাচা ডোমার পোস্ট অফিসে প্রায়ই এসে মানি অর্ডার করতেন। কেউ গ্রহণ না করায় সেই টাকা ফেরত চলে আসত। তিনি প্রতিদিন পোস্ট অফিসে এসে খোঁজ নিতেন, তার পরিবারের কেউ টাকা পেয়েছে কি না। এভাবে প্রায় ২০ বছর ধরে পোস্ট অফিসে যাতায়াত করেন। আমি কয়েকদিন আগে তার ঠিকানা নিয়ে পিরোজপুরের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে ছবিসহ পোস্ট দিই। কিন্তু কোনো কাজ হয় না। এরপর সৌরভ নামে পিরোজপুরের এক পোস্টম্যানের সহায়তায় তার পরিবারকে খুঁজে পাই। অবশেষে তার ছেলে ডোমারে এসে তাকে নিয়ে গেলেন।
জিয়াউল হকের ছেলে সহিদুল ইসলাম সজিব বলেন, আমার যখন দেড় বছর বয়স, তখন বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়। বাবা ডোমার চলে আসেন। আমার বড় দুই বোন ও আমি নানার বাড়িতে থাকি। আর তখন থেকেই বাবার কোনো খোঁজ পাই নাই। বুধবার সকালে যখন ডোমার পোস্ট অফিস থেকে হোসেন ভাই ফোন করে বলেন, আপনার বাবা ডোমারে আছেন, তাকে নিয়ে যান! তখন আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল, স্বপ্ন দেখছি। সঙ্গে সঙ্গে আমরা রওনা হই। জীবনে প্রথম আজ বাবাকে দেখলাম ও জড়িয়ে ধরলাম। এ রকম শান্তি আর কখনো পাই নাই।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২২
এসআই