দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত একটি বিপ্লব ও সশস্ত্র সংগ্রাম পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান ও দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। পশ্চিম পাকিস্তান-কেন্দ্রিক সামরিক জান্তা সরকার ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করে এবং নিয়মতান্ত্রিক গণহত্যা শুরু করে এর মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী সাধারণ বাঙালি নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং পুলিশ ও ই.পি.আর. কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়।
সামরিক জান্তা সরকার ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলকে অস্বীকার করে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পশ্চিম পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। পাকিস্তানি সৈন্য ও তাদের সহায়তাকারী আধা-সামরিক বাহিনী কর্তৃক গণহত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে রাজধানী ঢাকায় অপারেশন সার্চলাইট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যাসহ একাধিক গণহত্যা সংঘটিত হয়। প্রায় এক কোটি বাঙালি শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নেয়।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতাকে বুদ্ধিজীবীরা গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। বাঙালি সামরিক, আধা-সামরিক ও বেসামরিক নাগরিকদের সমন্বয়ে গঠিত মুক্তিবাহিনীর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ফলে বাংলাদেশে স্বাধীনতা অর্জন করে
১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর অচলাবস্থায় গণবিদ্রোহ দমনে পূর্ব পাকিস্তানব্যাপী শহর ও গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক সামরিক অভিযান ও বিমানযুদ্ধ সংঘটিত হয়।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী অভিযানে সহায়তার জন্য মৌলবাদীদের নিয়ে আধা-সামরিক বাহিনী রাজাকার, আল বদর ও আল শামস গঠন করে পূর্ব পাকিস্তানের উর্দু-ভাষী বিহারিরাও সেনাবাহিনীকে সমর্থন করে। এই অপশক্তি ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে বিলম্ব হয়েছিল এ সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে আমাদের ছিল স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী আওয়ামী লীগ ও ঐক্যবদ্ধ জনতা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে চূড়ান্ত বিজয় লাভের মধ্য দিয়ে বাঙালিরা পায় তাদের সার্বর্ভৌমত্বের একটি দেশ ‘বাংলাদেশ’ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে নতুন ভূখণ্ড হিসেবে আবিভূত হয়।
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ যখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালে ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপিরবারে হত্যা করে। যা বাংলাদেশের ইতিহাসের এক কলঙ্কময় অধ্যায়।
৭৫ পরবর্তী মুস্তাক জিয়া গং অগণতান্ত্রিক সামরিক সরকারের শাসনামলে সাধারণ জনগণের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। পরবর্তীতে জেনারেল জিয়াকে সরিয়ে জেনারেল এরশাদ সেই ধারা অব্যাহত রাখে। দেশের মধ্যে সৃষ্টি করে স্বৈরাচার আর এই স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন নেতৃত্বে দিয়ে শেখ হাসিনা দীর্ঘ ২৪ বছর লড়াই সংগ্রাম শেষে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে এবং বাংলাদেশ দেশ পায় একজন দক্ষ ও চৌকস সরকার প্রধান।
২০০১ সালে আবার দেশের ক্ষমতার মসনদে আসে বিএনপি। তাদের ষড়যন্ত্র ও অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা আকড়ে ধরার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭-০৮ একটি সামরিক সমর্থিত সরকার দেশ চালায় এই সুযোগে দেশের রাজনীতিতে ঢুকে পরে বিভিন্ন বিদেশি অপশক্তি আর এই অপশক্তি দেশে ও দেশের বাহিরে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন করে।
তখনও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অপশক্তির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করে এবং বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে।
পরপর তিনবার আওয়ামী সরকার গঠন করে দেশ ও দেশের কাঠামোতে লেগেছে দৃশ্যমান পরিবর্তন আর এই উন্নয়নের ছোঁয়া যখন দেশের প্রতিটি মানুষ ভোগ করছে।
শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বে যখন দেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলার দ্বারপ্রান্তে আর শেখ হাসিনার সরকারকে টানা ৪র্থ বার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব প্রদানে মানুষের আকন্ঠ সমর্থনের রব উঠেছে, ঠিক তখনই স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধী শক্তিরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তারা তাদের পুরোনো খেলায় মেতে উঠেছে আবার দেশে ১-১১ এর মতো বিএনপি জামায়াত স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বিভিন্ন বিদেশি অপশক্তির কাছে বাংলাদেশ সুনাম ক্ষুন্ন করার অপতৎপরতায় সরব। আওয়ামী লীগসহ সকল শক্তিকে ১৯৭১ এর মহান স্বাধীনতা অর্জনের মতো ঐক্যবদ্ধ থেকে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি রুখে দিতে হবে।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া
ট্রেজারার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
ও সাবেক চেয়ারম্যান ট্যুরিজম অ্যান্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০২৪
এসআইএস