আমি সাবনূর। বর্তমানে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার কামারকাঠি গ্রামে আমার বাড়ি। মা-বাবা ও ছোট দুই ভাই-বোন নিয়ে আমাদের পরিবার। বাবা কাঁচামালের ব্যবসায়ী ছিলেন। ভালোই চলছিল আমাদের দিনকাল।
কিন্তু জীবনে অন্ধকার নেমে আসে আমি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াকালে। বাবা স্ট্রোক করে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। পরিবারে একমাত্র আয়-রোজগার করা মানুষটা যখন সুস্থ না থাকে, সেই পরিবারের কেউই আর স্বাভাবিকভাবে জীবন কাটাতে পারে না। বাবার চিকিৎসা খরচের পাশাপাশি সংসারের খরচসহ আমাদের পড়ালেখার খরচ—সব মিলিয়ে আমার মায়ের কাঁধে বিশাল এক দায়িত্ব এসে পড়ল।
বাবাকে দেখাশোনা করার পাশাপাশি মা কিছু কাজ করতে শুরু করলেন। অন্যের বাড়িতে কাজ করে অল্প কিছু আয় শুরু করেন। মায়ের স্বল্প আয়ে বাবার চিকিৎসা খরচ ও সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হতো। তারপর আমার পড়ালেখার খরচ দেওয়া মায়ের পক্ষে সম্ভব ছিল না। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠার পর আমার স্কুল কামারকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আমার ভালো রেজাল্ট দেখে সিদ্ধান্ত নিলেন আমাকে বিনা বেতনে পড়াবেন।
তাঁরাই বই, খাতা ও ফ্রি টিউশন দিয়ে আমাকে পড়াশোনা করতে সাহায্য করলেন। জেএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেলাম। আমার রেজাল্ট দেখে সবাই বলল বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে। আমারও স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ার। নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়া শুরু করলাম। এসএসসি পরীক্ষায়ও গোল্ডেন এ প্লাস পেলাম। এবার কলেজে ভর্তি হওয়ার পালা। ভর্তি হলাম স্বরূপকাঠি শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজে। কলেজে ভর্তিসহ বই কেনায় আমার কিছু শিক্ষক আমাকে সহায়তা করেন। এরই মধ্যে বাবা দ্বিতীয়বারের মতো স্ট্রোক করেন। তাঁর হাঁপানি ছিল আগে থেকেই। সব মিলিয়ে তখন বাবার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। আত্মীয়-স্বজনের কেউই খুব উচ্চবিত্ত ছিলেন না উপকার করার মতো। তবে সব বাধা পেরিয়ে এইচএসসি পরীক্ষায়ও গোল্ডেন এ প্লাস পেলাম। এত কষ্টের মাঝে যখন এত দূর আসতে পেরেছি, তখন আর অন্য কোনো চিন্তা আসেনি মেডিক্যালে চান্স পাওয়া ছাড়া। ভর্তিযুদ্ধ শুরু হলো। আমি সেই যুদ্ধের বিজয়ী।
সরকারি মেডিকেল কলেজে চান্স পেলাম। কিন্তু মেডিকেল কলেজে ভর্তি ও বই কেনার খরচ অনেক। মেডিকেলে পড়ার মতো কোনো পথ দেখতে পাচ্ছিলাম না। অর্থের অভাবে মেডিকেল কলেজে পড়ার আশা ছেড়ে দিলাম। যেখানে তিন বেলা খাবারের জোগান অনিশ্চিত, সেখানে পড়ালেখার জন্য এত টাকা ব্যয় করা অসাধ্য।
আশা যখন একেবারে ছেড়েই দিয়েছিলাম, তখনই আশার আলো দেখিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। শুভসংঘের মাধ্যমে আমার পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছেন ইমদাদুল হক মিলন স্যার। আমাকে মা-বাবাসহ ঢাকায় এনে মেডিকেল কলেজে ভর্তি ও বই কেনার টাকা দিয়েছেন। আমাদের সবার যাতায়াতের খরচটা পর্যন্ত বহন করেছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। আমি নিশ্চিন্তে ভর্তি হলাম। ভর্তির পর থেকেই প্রতি মাসে বসুন্ধরা গ্রুপ আমাকে ১০ হাজার টাকা করে শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে। আমার পড়াশোনার খরচ চালিয়ে ভাই-বোনের পড়াশোনা, বাবার ওষুধ, সংসার খরচের জন্য মায়ের হাতেও এখন কিছু টাকা দিতে পারছি; যার কারণে আমার পরিবারকে এখন আর অর্ধাহারে-অনাহারে থাকতে হচ্ছে না, আলহামদুলিল্লাহ। একটি অসহায় পরিবারকে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। আমি ও আমার পরিবারের সবাই বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। আমার জন্য দোয়া করবেন, যাতে একজন ভালো ও মানবিক চিকিৎসক হয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের মতো দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২৩
এসআইএস