ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পরিপন্থী: ড. সেলিম মাহমুদ

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৩
ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পরিপন্থী: ড. সেলিম মাহমুদ ড. সেলিম মাহমুদ

ড. ইউনূসকে বিচার প্রক্রিয়া থেকে রক্ষার লক্ষ্যে পশ্চিমা বিশ্বের বেশ কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত রাজনীতিবিদ ও সেলিব্রেটি যে বিবৃতি দিয়েছেন, সেখানে তারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার অঙ্গীকারের কথা বলেছেন। অথচ তাদের এই বিবৃতিই গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পরিপন্থী!

গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হচ্ছে আইনের শাসন।

আইনের শাসন না থাকলে গণতন্ত্র অর্থহীন। আইনের শাসনের অন্যতম মূল শর্ত হচ্ছে আইনের চোখে সকলের সমতা। আইন সকলের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং আইনের ক্ষেত্রে কেউ কোনো বিশেষ প্রাধিকার দাবি করতে পারেন না। নোবেল জয়ী হওয়ার কারণে কিংবা আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি লাভ করার কারণে কারও বিচার করা যাবে না - এটি অসাংবিধানিক ও বেআইনি। ইউনূসের পক্ষে বিবৃতিতে এই কাজটিই করা হয়েছে। গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত আইনের শাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে।  

অন্যদিকে, এই বিবৃতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ সমূহের পরিপন্থী। আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকার এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা মানবাধিকারের অংশ। বাংলাদেশের আদালতে চলমান ড. ইউনূসের মামলাগুলো স্থগিত করে আলাদা বিচারক নিয়োগ করে মামলাগুলো রিভিউ করার দাবি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার নীতি পরিপন্থী। পাশাপাশি এটি নাগরিকদের আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকার সম্পর্কিত মানবাধিকারের পরিপন্থী।  

আমাদের প্রশ্ন, যে সেলিব্রেটি ব্যক্তিত্বরা একটি স্বাধীন দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপের মতো এই কাজটি করলেন, তারা কি তাদের নিজেদের দেশে এই কাজটি করতে পারতেন? বিবৃতি দাতাদের অন্যতম হিলারি ক্লিনটন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী নেতা হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেছিলেন। বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিলেনও। আদালতে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে তার অযাচিত হস্তক্ষেপ কি তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান কিংবা বিচার ব্যবস্থা সমর্থন করে?

হিলারি ক্লিনটন ড. ইউনূসকে বিচারের বাইরে রাখতে চান। তিনি কি তার স্বামী রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটনের ক্ষেত্রে এটি করতে পেরেছিলেন? তার স্বামী বিল ক্লিনটনকে রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় কেনেথ স্টারের ইনভেস্টিগেশনের মুখোমুখি, এমনকি অভিসংশন বা ইমপিচমেন্টের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তার পদমর্যাদা কিংবা পৃথিবীজুড়ে তার সুখ্যাতি তাকে রক্ষা করতে পারেনি। ক্লিনটনকে আইনি সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ডেমোক্রেটদের বিশেষ লিগ্যাল এইড ফান্ড গঠন করা হয়েছিল। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে বিবৃতি দাতাদের পক্ষ থেকে ড. ইউনূসকে প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।  

আইনের শাসন ও মানবাধিকারের প্রতি হিলারি ক্লিনটনের এই অবজ্ঞাপূর্ণ ও অযাচিত কর্মতৎপরতা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির পরিপন্থী।
হিলারির এই আচরণ দেখলে তার পূর্বসূরী বিংশ শতাব্দীর পশ্চিমা বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী নারী নেতা এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রথম চেয়ারপারসন এলিনর রুজেভেল্ট অনেক ব্যথিত হতেন। এলিনর সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার খসড়া প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।  

বিচার বিভাগের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনজ্ঞ হিলারির এই হস্তক্ষেপের কথা জানলে হিলারির পূর্বসূরী জাস্টিস মার্শালও ব্যথিত হতেন। বৈশ্বিক আইনি ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতি, বিশেষভাবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও পৃথকীকরণে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ অবদান রয়েছে। বিচার বিভাগ যে সংবিধানের অভিভাবক -এই নীতি উদ্ভাবন করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের আইনজ্ঞ জাস্টিস মার্শাল।  

আজ একটি স্বাধীন দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আইনজ্ঞ হিলারি ক্লিনটনের এই বেআইনি হস্তক্ষেপ নিশ্চয়ই যুক্তরাষ্ট্রের আইনের শাসনে বিশ্বাসী ও গণতন্ত্রকামী মানুষ পছন্দ করছে না।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৩
এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।