ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

ফরমালিনমুক্ত ঢাকা কতদূর?

সাব্বির আহমদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০০ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৪
ফরমালিনমুক্ত ঢাকা কতদূর? ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: মধুর হাঁড়ি জৈষ্ঠ্য মাসের ফল। হাট বাজার থেকে এই ফল কিনে আনছে মানুষ! না, ঘরে ফল নয়, যাচ্ছে বিষাক্ত বিষ।

খাচ্ছে মানুষ। এতদিনের এই
অবস্থার পরিবর্তন সূচিত হতে চলেছে। রাজধানীতে কোন ফরামিলনযুক্ত ফল ঢুকতে দিচ্ছে না পুলিশ। আর বিশেষজ্ঞরা ফরমালিনে ‘কটু’ গন্ধ মেশানোর প্রস্তাব দিয়েছেন-যাতে খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিনযক্ত হলে সহজে বোঝা যায়।

তবে কি ফরামিলনমুক্ত হচ্ছে ঢাকা?

আর্মস ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী হৃদিতা বলছেন, সাধারণ মানুষ ফরমালিন নিয়ে সচেতন নয়। আর ফরমালিন যারা মেশায় তারাও জানে না এটা কতটা ভয়াবহ।

মেডিকেলের এই শিক্ষার্থী জোর দিচ্ছেন সচেতনতা বৃদ্ধি এবং খাদ্রদ্রব্যে যারা ফরমালিন মেশায় তাদের কাছে গিয়ে এর ভয়াবহতা তুলে ধরার ব্যাপারে।

রাজধানীর একটি স্কুলের শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বলেন, বিদেশে স্বাস্থ্যসম্মত বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাণিজ্য করছে। বাংলাদেশে সেই পদ্ধতি প্রবর্তন করতে হবে। সড়কে গাড়ি থামিয়ে ফরমালিন কতদিন রুখবে পুলিশ। অসাধু ব্যবসায়ীরা নানা উপায়ে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ফরমালিনযুক্ত ফল নিয়ে আসবে ঢাকয়।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আনিস আলমগীর সরকারের সঠিক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ফরমালিন নিয়ে এতো হৈ চৈ হওয়ার পরও বন্ধ হচ্ছে না। বিষ তো খাওয়াচ্ছেই ব্যাবসায়ীরা। আবার লাখ লাখ টাকার আম, জাম, লিচু- কত কী নষ্ট করা হচ্ছে। কিন্ত ব্যাবসায়ীরা যে বলছে ক্ষতিকর না, পচনরোধক এমন বিকল্প কিছু চাই-- সে ব্যাপারে কি সরকারের কোনো ভূমিকা নেই? কোটি কোটি টাকায় নিয়োজিত সরকারি বিজ্ঞানীরা কি করছেন!

এদিকে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গত কয়েকদিনের অভিযানে দেখা গেছে আম, জাম, লিচুসহ সব ধরনের মৌসুমি ফলেই মেশানো হচ্ছে প্রাণঘাতী ফরমালিনসহ অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ। তল্লাশি চালিয়ে দেখা গেছে, আমে ফরমালিন রয়েছে ২.৪৮ থেকে ১২৫ পিপিএম। লিচুতে ফরমালিন রয়েছে ১.৪৯ পিপিএম থেকে ৩১ পিপিএম। অন্যদিকে জামে রয়েছে ৩৩ থেকে ৩৫ পিপিএম যা মানবদেহের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ৷

এই পরিস্থতি ভাবিয়ে তুলেছে বিশেষজ্ঞদের। বাংলাদেশ ফরমালিন তৈরির কোনো কারখানা নেই এবং ভারতেও নেই। সব ফরমালিনই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। সুতরাং এর আমদানি বিক্রি, মজুদ ও বিতরণে নজরদারি বাড়াতে পারলে এটি নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে-এমন মত এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সেমিনারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মেসি বিভাগ সরকারের প্রতি বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরে বলেছে, কেবলমাত্র রাসায়নিক আমদানির লাইসেন্স থাকলেই ফরমালিন আমদানির অনুমতি দেওয়ার বিধান বাতিল করতে হবে। শিক্ষা, গবেষণা ও প্রয়োজনীয় শিল্প কারখানা ছাড়া অন্য কাউকে ফরমালিন আমদানির অনুমতি দেওয়া যাবে না।

মিডফোর্ড মার্কেটসহ সব রাসায়নিক দ্রব্যাদি বিক্রির দোকানে ফরমালিনের মজুদ ও বিক্রি পুরোপুরি বন্ধের সুপারিশ করেন বিশেষজ্ঞরা।
খাদ্য দ্রব্যে ফরমালিন মেশানো ঠেকাতে তাদের আরও পরামর্শ- আমদানির পর বাজারে ছাড়ার আগে এই রাসায়নিকে বিশেষ এক ধরনের ‘কটূ’ গন্ধ যুক্ত করা হোক। যাতে খাদ্য দ্রব্যে ফরমালিন মেশানো হলে সহজেই তা মানুষের নজরে আসে এবং খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন মেশানো থেকে বিরত থাকে ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৪ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।