ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

পথের দিশা

গোপাল মাইতি, কোলকাতা থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০১৬
পথের দিশা ছবি: প্রতীকী

নীল আকাশে আজ রামধনুর সাতটা রঙ দেখা যায় না। দেখা যায়, লাল রক্ত মাখা রঙের প্রকটতা।

বাতাসে আজ মালতী, কেতকী, ফুলের সুবাস ভাসে না, ভাসে বিষন্নতার সুর। মানুষের মনে আজ বড় অভাব শান্তির।

বাংলার মাটি যাকে মা বলে ডাকা হতো সেই মা আজ যেন ধর্ষিতা, বিবর্ণা। সেই মাটি আজ রক্তাক্ত। তবুও ‘তাদের’ মুখে উঠে আসে শান্তির ললিত বাণী। যারা মানুষকে শান্তির আস্বাদনটুকু দান করতে পারে না, তারা আর যাই হোক, সেবক তো নয়ই।

জনগণ ভেবেছিল যে ‘মা’ দিয়েই দেশের হাল ফেরানো যাবে। পুরাণে আছে যখন অসুরের উপদ্রব প্রকট আকার ধারণ করেছিল, তখন মা দুর্গা অসুর নিধন করেছিল। সেই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে পরিবর্তন এনেছিল বটে। কিন্তু পরিবর্তন আসেনি। সে যাই হোক, বাংলার মানুষ বড় ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। তাদের মন থেকে হারিয়ে গিয়েছে প্রতিবাদের ভাষা।

যখন পার্কস্ট্রিট থেকে ত্রিফলা কান্ত কখনওবা আরাবুলের মতো দুষ্ট কণ্টক বাংলাকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। যখন সবাই প্রতিবাদে সরব তখনই শাসক গোষ্ঠী বলেছে এটা সাজানো ঘটনা কখনো বলা হয়েছে। কখনো বলা হয়েছে দেহ কেনা বেচার জন্য ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে ঝামেলা। কি কদর্যপূর্ণ বাক্য প্রয়োগ!

তাই ভবিষ্যতের বাংলার কথা ভাবলে মনের মধ্যে ভেসে আসে দুর্ভেদ্য অন্ধকার, এর শেষ কোথায়? তা দেখার জন্য উদগ্রীব গ্রাম থেকে গ্রামান্তর, শহর থেকে শহরতলির মানুষজন। জানি না কবে আসবে সেইদিন? যে দিন আবার রামধনুর সাতটা রংয়ের রূপবাহার নিয়ে আপামর জনসাধারণের সামনে প্রকট হবে। তার উত্তর যে আজও অধরা।

সমগ্র বাংলার মানুষ বুঝে গেছে যারা পরিবর্তন করার জন্য এসেছিল তাদের কাছে পরিবর্তন কথাটা শুধুমাত্র ধৃষ্টতা। তারা মনে করে ‘বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস’। কিন্তু মানুষ আজ আর শিল্পতালুক বানাতে চায় না, তারা চায় না বিজলীর রেশনাই, তারা চায় না বেকার সমস্যা সমাধান করতে। তারা ভুলে গেছে, কল্লোলিনী কলকাতাকে লন্ডন বানানোর স্বপ্ন, কারণ ভুলতে বাধ্য করেছে ১৪ মার্চের মতো কালো দিনগুলো, ভুলিয়ে দিয়েছে পূর্তি অনুষ্ঠানের মদ্যপ অবস্থায় টাকা ছড়ানোর বেওয়ারিশ নৃত্য।

কিন্তু ভুললে হবে না, প্রতিবাদ করতে হবে, খুঁজতে হবে পথের দিশা, আর গড়তে হবে নতুন বাংলা তাই হবে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি উৎসর্গিত শ্রদ্ধা।

অভাগা সমাজ
‘স্বা-ধীনতা’ আজ আমরা অর্থাৎ নারীরা ভুলে গেছি, কি এটা? খায় না, মাথায় দেয়? জানিনা কি এর মাহাত্ম্য, জানি না কি এর তাৎপর্য, ভাবলে মন হয় পুরুষশাসিত সমাজ করেছে পরাধীনতা, না হলে, আমরা আজ কোথায় নিরাপদ? বাসে, না ট্রামে, না স্কুলে না কলেজে, এমন কি নিজের বাসগৃহেও না, যদিও এ আজকের দিনে নয়, বহুকাল থেকে চলে আসছে। তাই আপনাদের প্রণতি জানাবার স্থিরতা আজ আর নেই।

কখনো গঙ্গা যাত্রা আশি বছর বৃদ্ধের গলায় দিতে হয়েছে অপ্রত্যাশিত বরমাল্য। কখনো তাদের অন্তিম যাত্রায় সাথী হয়ে শুয়ে থাকতে হয়েছে জ্বলন্ত চিতায়, কখনো মুখ থুবড়ে পড়েছি আঁতুড় ঘরে। কখনো-বা একাদশীর দিনে জল না পান করে তৃষ্ণায় বুক ফেটে গেছে কিন্তু মুখ ফোটেনি।

আমাদের কোন সাধ নেই, আমাদের কোন বাসনা নেই, তোমরা বলো, আমরা অর্থাৎ ভারতীয় নারী সমাজে আলোকিত ইতিহাস। অন্য দিগন্তে পুঞ্জীভূত হয়ে আছে যুগ-যুগান্তের অন্ধকার, অনেক অশ্রু ও বেদনার মর্মন্তুদ কাহিনী। সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত হলেও বিংশ শতাব্দীর অপরাহ্ন বেলায়ও ভারতের কোথাও কোথাও বধূকে তার স্বামীর চিতায় পুড়িয়ে মেরে তার নামে সগৌরবে নির্মিত হয় সতী মন্দির। এতোও তোমরা থেমে থাকোনি, যখন তোমাদের সঙ্গে মিলিত হতে গিয়ে যদি জন্ম দিয়েছি, আর এক অভাগা কন্যা সন্তান, তখন তোমরা আমাকে দেখেছো ঘৃণা আর অবহেলার চোখে। কখনো প্রস্রাব করার আগে নির্ধারণ করে নাও কন্যা নাকি পুত্র, যদি দেখো কন্যা তখন তাকে সরিয়ে দাও নির্দ্বিধায় কোন এক নির্জন পাপশালায়।

এই অভাগা সমাজের মুক্তি কবে? তা জানার জন্য উদগ্রীব, সমগ্র নারী জাতি, যত কথা, যত বঞ্চনা, আর সইবো না, রুখে দাঁড়াবো সমগ্র অভাগা সমাজের নামাঙ্কিত পুরুষ জাতির বিরুদ্ধে।

সারদা
মানব মন আজ জলহীন স্রোত, আর বায়ুহীন আবেগ নিয়ে ক্রমাগত এক প্রান্তর থেকে, অন্য প্রান্তরে ছুটে বেড়িয়েছে। যখন বাংলাদেশের শাহবাগ চত্বর প্রতিবাদী মানুষের পদভারে প্রকম্পিত, তখন এদেশে সবাই শির নিচু করে বিনম্র নম্রতায় ক্রমাগত সত্যের অকাল প্রয়াণ ঘটাচ্ছে।

যখন এক দেশে ক্রমাগত মৃত্যু দেখতে দেখতে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। তখন আমার দেশ ভারতবর্ষের ছোট্ট রাজ্য পশ্চিম বাংলা দেখছে অসহায় নিরন্ন মানুষের সর্বস্বান্ত হওয়ার দৃশ্য। ‘সারদা গোষ্ঠী’ নামে কি কোম্পানি, যার দৌলতে চলে গেছে অনেক অসহায় মানুষের তিলে তিলে জমানো সঞ্চয়।

কেউ দিন মজুর খেটে, কেউ বা রিকশা চালিয়ে এক পেট খালি রেখে আগামীর পথকে মসৃণ করার লক্ষ্যে জমিয়েছিলেন। কিন্তু মসৃণ হবে কী? হলো অন্ধকার, সেখানে হাতড়ে হাতড়ে খুঁজে পাবে না জীবন পথের ঠিকানা, এই দৃশ্য দেখে কেউ কেউ বলছে লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু, আবার কেউ বলছে, ‘পরের পুকুরে মৎস্য চাষ’। প্রতিটি কর্মকাণ্ডকে মনে হয় অর্বাচীনতার পরিচয়।

কিন্তু একটু ভাবুন দেখি যাদেরকে বলা হয়েছে মেয়াদ অন্তে টাকার পরিমাণের কথা, তাদের কাছে খবর নিয়ে দেখুন, একশ’র মধ্যে আশিজন রিজার্ভ ব্যাংক বুঝে না, নতুন কোম্পানির অ্যাক্ট জানে না, পিরামিড স্কিমটা আসলে কি সেটাই বোধগম্য নয়, এমন কী, তা মগজে আমৃত্য কোনো দিনই শতকরা হারের হিসেবটা বের করতে পারবে না। তাহলে, তাদের দোষ দেওয়া মানে তো, মানিজন, গুণীজন, বিদ্যারণ আপনাদের নিজের পায়ে কুঠার বসানো অথবা নিজেরাই অর্বাচীনের মতো প্রলাপ বকছেন।

যার মঞ্চে দাঁড়িয়ে সারদার কর্ণধারের সঙ্গে হাতে হাত রেখে গলায় গলা মিলিয়ে শতকরা হারের বেমানান হিসেবে সায় দিয়ে গেলেন, সরকার নামক বস্তুটি যাঁর অর্থানুকূল্যে অ্যাম্বুলেন্স দান করলেন, তাদের বিজ্ঞাপন কী আপনাদের চোখে পড়েনি, কানে কী শুনেননি সারদার মঞ্চে মান্যগণ্য নেতাদের জ্বালাময়ী ভাষণ, শুধু শুনেছেন নিরন্ন সর্বস্বান্ত মানুষের হাহাকার, যদি কাউকে ব্যথাদান হৃদয়ে বলিয়ে দিতে না পারেন সমবেদনার করস্পর্শি, নিপীড়িত বঞ্চিত হতভাগ্যদের ন্যায় বিচারের আর্জি যদি পেশ না করতে পারেন মানবিকতার বিচারশালায়। তবে কেন? এই রূপ বাক্য প্রয়োগ করেন-‘পরের পুকুরে মৎস্য চাষ’ ইত্যাদি।

এত কথা না বলে কেন প্রতিবাদে নামেননি, যাঁরা আরও এ ধরনের কার্যকলাপে যুক্ত তাঁদের কেন ধরা হল না। ১৯৯২ সাল থেকে গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য চিটফান্ড, ভুঁইফোঁড়া সংগঠন, পৃথিবীর যেখানে রথচক্রতলে মানুষ নিষ্পেষিত হয়েছে, সেখানেই ধ্বনিত হয়ে উঠেছে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ, কিন্তু আজ কেন প্রতিবাদ করা হল না কেন?

যদি প্রতিবাদ করার সাহস থাকত, যদি শির উন্নত করার মতো ক্ষমতা থাকতো। তাহলে একবার দেখাতে; কিন্তু দিদিরা, দাদারা, মান্যজন, গুণীজন মানেন, যদি কেঁচো খুঁড়তে যাই, তাহলে অগণিত কীট বের হবে। যাঁর বিষাক্ত দংশনে দংশিত হবার ভয় থেকেই যায়। জানি না কবে নিরন্ন মানুষের পায়ের তলার মাটিটাও কেড়ে নেবে ওই রাঘব বোয়ালরা। তবুও কেউ কিছু দেখবে না, কেউ কিছু বলবে না।

‘উলঙ্গ’ রাজার মতো অপাপবিদ্ধ, অকুতোভয় শিশুর আবির্ভাব ঘটবে না। সত্য কাম সেই শিশুটি অকপট সত্যভাষণের দ্বারা পৃথিবীর বর্তমান কালের ভণ্ডামির স্বার্থপরতার, নিলর্জ্জ স্তাবকতার মুখোশ দেবে ছিঁড়ে। এ সকল নির্বোধ-প্রশংসা, মূঢ়তা, নির্লজ্জতা ও সোচ্চার স্তাবকতার ঊর্ধ্বে নির্ভিকভাবে বলবে - রাজা তোর কাপড় কোথায়, তুই উলঙ্গ কেন, তুই ল্যাংটা কেন, অর্থাৎ তোর নীতি কোথায়, ন্যায় কোথায়, যা দেখার জন্য উদগ্রীব গ্রাম থেকে গ্রামান্তর, শহর থেকে শহরতলির মানুষজন।

অপেক্ষা
শীত, কিংবা গ্রীষ্মের কোন এক রাত্রিতে শয়ন কক্ষে শুতে যাই। তখন আমরা ঘুড়ে নেই, কম্বল কিংবা চালিয়ে দি ঘূর্ণায়মান পাখা, মনের আনন্দে উপভোগ করি রাত্রিযাপন। কিন্তু মাথার পাশে ছোট্ট ঘুল, ঘুলি দিয়ে যদি মানব মনের চাউনি পড়ে, দেখতে পাবে, কোন এক ছেলে কাতরাচ্ছে পথের প্রান্তরে। তখন তাকে দেখে মনে কী প্রশ্ন জাগে না? ও কে?

ভিটে নেই, বাড়ি নেই, ঘর নেই, ও কার ছেলে? ধূলো ধূসরিত পা, এমন করে কেউ কি ঘুমোয়? এমনি হীনদশায়, ও কে? ও কি কোন পলাতক ঘাতক? না কি কোন যুদ্ধের সৈনিক? নাকি কোন জেলভাঙা কয়েদী? জানি না, তবে এটা জানি যে, ও আমাদের মতো এক রক্ত, মাংস দিয়ে গড়া মানুষ। ঘুমন্ত দেখলে মনে হয় সমস্ত উদ্ধৃত রেখা ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে গেছে, নিঃসঙ্গ নম্রতায়।

ও কে প্রশ্ন করা হল, তুমি কে? উত্তরে ও বললো, কেন? চিনতে পারছো না? আমি তো সেই, যাকে ক্রমাগত ছুটিয়ে নিয়ে গেছে এক আশা থেকে অন্য নৈরাশ্যে, নিকদক মরুভূমির মধ্য দিয়ে, ছুটিয়ে এনেছো এক রিক্ততা থেকে অন্য বঞ্চনাতে, পদে না রেখে পদবির রোশনাইতে করেছো আলোকিত, যাকে দিয়েছো খোলা আকাশ আর শীরবিহীন শিক্ষা। কেন? এক পৃথিবী, এক সূর্য, একই তো সব কেন? তবে আমাকে কাটাতে হয় বিনিদ্র অবস্থায় ফুটপাতের ধারে।

জানি না জীবনের যাত্রা পথে পুরাতন পুঞ্জীভূত অন্ধকীর সরিয়ে কবে? উদ্ভাসিত হবে নবদিত সূর্যালোক, যেখানে দ্বন্দ্বের নিকতনের বদলে গড়ে উঠবে ছন্দের নিকেতন। আবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করবে, পথ চেয়ে আমি ও আমার সঙ্গে রাত্রিযাপনকারী শুভানুধ্যায়ী, শুভাকাক্ষী সঙ্গীবর্গ।

আমাকে বাঁচতে দাও
নীল দিগন্ত যখন মুক্ত বাতাস হারিয়ে, দূষিত বায়ুতে পরিপূর্ণ। যখন নীলচে সমুদ্র তার মাধুর্য্য হারিয়ে, মদমত্ত অবস্থায় কখনো, সুনামি বা কখনো বানভাসী বন্যার রূপ নিয়ে হাজির হয় মানবজীবন দরবারে এবং ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেয় দোদুল্যমান জীবন বীণার তার। বেজে উঠে ধ্বংসের মূর্চ্ছনা। অসহায় হয় উন্নত সুসজ্জিত মানব সমাজ।

যদি মানবমন প্রকৃতিকে প্রশ্ন করা হয়, কেন এই রকম খেলা খেল আমাদের সঙ্গে? তখন তার প্রত্যুত্তরে বলবে, তোমরা ও কমকোথায়, তোমাদের কি মনে নেই, মানব সভ্যতার জন্য ইমারত গড়তে, আমার বুকে করেছো অসংখ্য গর্ত, যখন বলেছি জ্বালায়-জ্বলছি তখন তোমরা আমার বুকে ঢেলে দিয়েছো সিমেন্ট মাখানো কংক্রিট। তখন তো একবারও বলোনি, তোমার কি লাগে না? যখন সমুদ্রের নীল জলে ঢেলে দিয়েছো কত বিষাক্ত তৈল পদার্থ তখন তো একবারও আমি বলিনি যে তোমাদের দেওয়া উপহারে আজ আমার সর্বাঙ্গ জ্বলছে, আমার দেওয়া তরুছায়া তোমরা আজ চায় না, এখন চাও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে। তাতে আমার কোন আপত্তি নেই কিন্তু যারা তোমাদের তরুছায়া দিল, তাকেই ছেদন করলে, একবারও ভাবলে না, যে এর তলে বসে স্বস্তির শ্বাস নিয়েছিল।

কখনোও তো বলিনি, যখন তোমরা দুই দেশের মধ্যে সংযোগ গড়তে গিয়ে ছোট নদীর এ বুক থেকে ও বুকে গড়ে তুলেছো সেতুবন্ধন তখন বার বার মনে হয়েছে পারছি না, এত ভারী ওজন আমি আর পারছি না, আমার বুকে চাপিও না তখন কী শুনেছো? তখন আমায় বলেছো দাঁড়াও, একটু সবুর কর, এই তো আর ক’টা দিন, কিসের ক’টাদিন, বিশ্রামের? আরে না অন্য পাশে আবার তৈরি, নবনির্মাণ হচ্ছে অন্য সেতু সেই কারণে এত সমাদর ভাষা প্রয়োগ।

যখন তোমরা আমার বক্ষে টেনে দিয়েছো কাঁটা তারের মানচিত্র, আমারই সবটা তবুও তোমরা ভাগ করেছো কৃত্রিম ভাগাভাগি, একা তার এক ছটাক যদি ভাগে কম পড়ে, তাহলে তোমরা হানো আমার বুকের মধ্যে বোমা নিক্ষেপ।

কখনো একবারও ভাবনি, যখন আমার শীতল বক্ষে ছিদ্র করে তুলে আনছো শীতল রক্ত রস, তখন একবারও মানা করিনি, কখনো বলিনি আর পারছি না, আমাকে বাঁচাও।

আমার বুকের কলিজাকে ফালা ফালা করে, উৎপন্ন করেছো উচ্চফসলশীল চাষ, যখন আমি বার বার বলেছি আমি সন্তান ধারণ করতে পারবো না, তখন তোমরা কোন কথা বগনে না দিয়ে করেই চলেছো, আমি নিজও জানি না আমি কবে বন্ধ্যা নারীতে পরিণত হয়েছি, তখন তো আমায় কিছু না বলে পালিয়েছো, আমি তো আর যেতে পারিনি, পড়ে আছি সন্তান না জন্ম দেওয়ার বেদনা নিয়ে তখন তো কেউ এসে বলোনি, তুমি কেমন আছো?

মানুষের মনে আজ পাওয়ার আশা সীমাহীনভাবে বেড়ে চলেছে কিন্তু একবারও বোঝেনি, দিতে দিতে আমি আজ বড় ক্লান্ত, আমার সব ফুরিয়ে আসছে। যদি বাঁচতে চাও তাহলে আমাকে বাঁচাও, না হলে পাওয়ার ঘরে জমা হবে শূন্য।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০১৫
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।