ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

এই পরাজয়ও গৌরবের!

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫০ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০১৬
এই পরাজয়ও গৌরবের!

ঢাকা: গত কটা দিন বাংলাদেশ ছিলো ক্রিকেটের চাদরে মোড়া। তাতে ছিলো দুটি রঙেরই প্রাধান্য পতাকার লাল আর সবুজ।

আর ছিলো জাতীয় প্রতীক রয়েল বেঙ্গল টাইগার। চেতনার সব শক্তি নিয়ে দেশের প্রতিটি মানুষ দেশকে করে তুলেছিলেন ক্রিকেটময়। সংবাদ মাধ্যম জগত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ক্যানভাসে ভর করে গোটা বিশ্ব দেখেছে ক্রিকেটের মহাদেশীয় মহারণে সামিল এশিয়ার দুই প্রতিবেশি দেশ- বাংলাদেশ আর ভারত।
   
খেলায় শেষ পর্যন্ত জয়-পরাজয় থাকবে। কিন্তু রোববার মিরপুর স্টেডিয়ামে ক্রিকেটকে ঘিরে যে দর্শকের জয় হয়েছে, ক্রিকেট চেতনার জয় হয়েছে তার মূল্য অনেক। ক্রিকেট বাংলাদেশের প্রাণ। ক্রিকেটের টাইগারদের হাতে বাংলাদেশ গৌরবান্বিত হয়েছে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, প্রধান মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণ ফোনের বিজ্ঞাপনের ভাষাটিকেই উর্ধ্বে তুলে ধরে বলা যায়, এই পরাজয়ও ছিলো গৌরবের।

কেউ কেউ বলছেন স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। কিন্তু একে ‘স্বপ্নভঙ্গ’র মতো নেতিবাচক শব্দে বলা কতটা সঠিক তা প্রশ্নবিদ্ধ। বরং এখানে প্রাপ্তিটিকেই বড় করে দেখতে হবে। ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে বাংলাদেশ এখন একটি শক্তি হয়ে উঠেছে সেটাও কম কিসে। বলা চলে এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বপ্নপুরণই হয়েছে। একটি টুর্ণামেন্টের পুরোটা দাপুটে পারফরম্যান্স দেখিয়ে বাংলাদেশ একের পর এক ধাপ পেরিয়ে ফাইনালে চলে গেছে, এবং যেতে পারে তার জ্বাজল্য প্রমাণও তৈরি হয়েছে এই এশিয়া কাপে।

রোববার ঝড়-বৃষ্টিতে তৈরি অনিশ্চয়তার পর যখন সিদ্ধান্ত হলো খেলা হবে, তখন টাইগারদের মধ্যে অর্জনের সকল লক্ষ্যই ছিলো বর্তমান। আর ভারতের খেলোয়াড়দের মধ্যে দেখা গেলো তারা যেনো এক সমানে সমান প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতেই নামছে। ভারতের সাবেক দলনেতা সৌরভ গাঙ্গুলির কথাই ভাবুন। ফাইনাল ম্যাচে তিনি বাংলাদেশকেই টপ ফেবারিট হিসেবে দেখেছেন।

আর মাঠে যখন বল গড়ালো শেষ দুই ওভারের আগে একটি বারের জন্যও বাংলাদেশ দলের হাত থেকে সরে যায়নি ম্যাচটি। ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখছিলেন। সাকিব আল হাসানের একটি দুর্বল ওভারকে পূঁজি করেই ভারত তার জয়ের পথ স্পষ্ট করে। এরপরেও বাংলাদেশ হাল ছাড়েনি। নাসির হোসেন আর তাসকিনের চাপে ম্যাচ আবারও বাংলাদেশের হাতের কাছাকাছি চলে আসে। কিন্তু ১৪তম ওভারে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অভিজ্ঞ ও দক্ষ ভারত বিশেষ করে দলের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির দুটি ছক্কার মার ভারতের হাতেই তুলে দেয় এশিয়া কাপের ট্রফি।

অতএব এটা স্পষ্ট লড়েই হেরেছে মাশরাফি বাহিনী। কিন্তু সেতো শুধুই খেলার হার। এই মহাদেশিয় ক্রিকেটের এই মহারণে মূলত জিতেছে ক্রিকেট। আর জিতেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের চেতনা। সবচেয়ে বড় জয় হয়েছে ক্রিকেট ভক্তদের। তারা দেখিয়ে দিয়েছে ক্রিকেটে তারা কতটা একাট্টা।

দেশের মানুষের ক্রিকেটের প্রতি অপার ভালবাসাও দেখেছে বিশ্ব। একটি ম্যাচ যেখানে টান টান উত্তেজনা, বিশ্বের দেশে দেশে খেলার মাঠে এমন উত্তেজনার ম্যাচে কত কীই না ঘটে। মারামারি, হুড়োহুড়ি, হাঙ্গামা। কিন্তু দর্শক ও ক্রিকেট ভক্ত হিসেবে বাংলাদেশের মানুষগুলো কতটা যোগ্য তা দেখা গেছে তাদেরই আচরণে।

ঝড় যখন মিরপুর স্টেডিয়ামকে লণ্ডভণ্ড করলো তখন গ্যালারিকে আবার ম্যাচ দেখার উপযোগী করতে দর্শকরাই নেমে গেলো স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকায়। ঝড়ে সৃষ্ট বিদ্যুৎ বিভ্রাটে যখন ফ্লাড লাইট বন্ধ হয়ে গেলো, মাঠে নেমে এলো অন্ধকার তখন ভক্তরা শান্ত হয়ে বসে থাকলো, একটি অঘটন ঘটলো না গ্যালারিতে। এরপর ম্যাচ যখন চললো তখন দলকে উৎসাহ দিলো বিপুল উদ্দীপনায় আর শেষাবধি দল যখন হারলো তখন সামান্য বিচলিত ভাবটিও ক্রিকেটভক্তরা দেখালো না। তারা বরং নতুন আশায় বুক বাঁধলো। অনেকেই বললো নেক্সট টাইম... নেক্সট টাইম।

আমরা ভারতের কথাই ধরতে পারি... অতীতের অভিজ্ঞতা বলে এই ম্যাচে ভারত হেরে গেলে ওদের দেশে একটি দুটি হাঙ্গামা হয়েই যেতো। ক্রিকেটারদের বাড়িতে হামলা হতো। কিন্তু বাংলাদেশের দর্শক তার ক্রিকেটারদের ভালোবাসে। ক্রিকেটকে ভালোবাসে। তাই একটি পরাজয়ের মধ্য দিয়ে আরেকটি জয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে। আশায় বুক বাঁধে মাশরাফি বাহিনী, কিংবা অন্য কোনও দলনেতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একদিন জিতবে এশিয়া কাপ, আর বিশ্বকাপের স্বপ্নের হাতছানিও বাংলাদেশের মানুষ এখন দেখতে পায়। সে স্বপ্ন ক্রিকেটারদেরও।

রোববার খেলা শেষে সোমবার সকালেই বাংলাদেশ দল রওয়ানা হয়ে গেছে ভারতের উদ্দেশ্যে। সেখানে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নেবে বাংলাদেশ। কোয়ালিফাইং পার করে দ্বিতীয় রাউন্ড পর্যন্ত খেলার প্রাথমিক টার্গেট নিয়েই দেশ ছেড়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার এই লক্ষ্যের সঙ্গে একমত দেশের প্রতিটি মানুষ। এভাবেই ধাপে ধাপে এগিয়ে যাবে দল। তার মধ্য দিয়ে ক্রিকেট এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাবে বাংলাদশ।

বাংলাদেশ সময় ১০৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৬
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।