ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

মেধার কণ্ঠে আরও তেজিয়ান দেবব্রতর সাজলি, মৃণাল (ভিডিও)

এরশাদুল আলম প্রিন্স, ল’ এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১২ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৬
মেধার কণ্ঠে আরও তেজিয়ান দেবব্রতর সাজলি, মৃণাল (ভিডিও)

এক. শক্তির আধার নারী

জীবন কী ও কেমন? একি শুধু কর্কশ আর দুঃখভারাক্রান্ত সময়ের কোনো অণুকাব্য? নাকি গ্লানি আর অশ্রু দিয়ে গড়া এক নদী। কবি বলেন, জীবনে ভাঙা-গড়া আছে, আছে জয়-পরাজয়--ফলে যুদ্ধই জীবন।

জীবনের জন্য জীবনের সাথে এ এক অন্তহীন লড়াই। জীবনের রয়েছে আরো কত রূপ, বৈচিত্র। এখানে হাসি আছে, আছে অশ্রু, স্বপ্ন, শোক, কাম-ক্লেশ আরো কত কি? এযেনো সীমাহীন এক অন্তর্জাল।

সাজলী। জামবুনের কুইড়ি পাড়ার শিবু কুইড়ির বেটি। বাবা নেই। মা আর বেটি-এ দুয়ে মিলেই ওদের জীবন। ক্ষয়ে যাওয়া জীবনের মতোই রাত নামে ওদের ভাঙা ঘরে। কুপি নিভিয়ে মায়ের বুকের গহীন অন্ধকারে খোঁজে জীবনের আলো। কামিন খেটে- মানে গতর খেটে মানুষের বাড়িতে কাজ করে কাটে তার দুরন্ত কৈশোর। বেনি দুলিয়ে রঙিন ঘাস ফড়িং অথবা প্রজাপতির পেছনে ছোটার সময় যে ওর নেই। সীমাহীন দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে জয়ী হওয়াই ওর কাছে জীবন। সে জীবনে যদি কোনো আশার আলো দেখা দেয় তবে তো তা অবিশ্বাস্যই বটে।

কামিন খেটে মাধ্যমিকে প্রথম হয়েছে এই সাজলী। তাই আনন্দাশ্রুতে ভাসলো দুই মা-মেয়ে। ক্ষেত মজুরের মেয়ে সাজলী পুরণ করেছে বাবার স্বপ্ন। করবেই তো। বাবাই যে ওর বুকের মাঝে তেজালো সন্ধ্যা বাতিটি জালিয়েছিলো। সেই আলোতেই তো ওর পথ চলা। সে আলোতেই আজ দূর হলো ওদের কুড়ে ঘরের সমস্ত অন্ধকার। দুঃখ ওর একটাই-আলো জ্বালিয়ে দেয়া বাপটি আজ আর নেই।

নারী যে শক্তির আধার। নারীই শক্তি। জগতের সকল অশুভ শক্তির বিনাসে যে মহাশক্তির আবির্ভাব- সে নারী। সৃষ্টিকর্তা নারীকে পাঠিয়েছেন দূর্বল অবয়বে। কিন্তু তার অন্তরে ঢেলে দিয়েছেন এক মহাআলোকরশ্মি।

দেবতার তেজরশ্মি থেকেইতো দেবী দুর্গার সৃষ্টি। ক্ষেতমজুর পিতা তার আশীর্বাদের তেজরশ্মি ঢেলে দিয়েছিলেন সাজলীকে। সাজলীর কাছে বাবাই যে ওর দেবতা। মর্তের কোনো শারদোৎসবই পূর্ণ হয়না শিকরের সন্ধান ছাড়া। তাই এমন আনন্দাশ্রু স্রোতে ভেসে উঠলো পিতার মুখ। ক্ষেতমজুর বাবা আর কামিন খেটে মায়ের বেটি সাজলী মাধ্যমিকে প্রথম হয়েছ। তাই মা-বেটির এ আনন্দাশ্রু। কিন্তু দুর্গারূপি সাজলী শুধু ঘরে আলো ছড়িয়েই ক্ষান্ত হবে কেন, ওযে জগতের অসুরবিনাসীনী। সাজলীরা আত্মশক্তির দীপজ্বেলেই তো জগতের সব অন্ধকার দূর করে। সে আলোতেই পথ চলে সুর-অসুর।

কবি বলেন, মানুষেরই মাঝে স্বর্গ-নরক, মানুষেতে সুরাসুর। দেবতারা আজ সব স্বর্গে। দেবতাদের তেজরশ্মিবতি দুর্গা সেওতো স্বর্গে। রয়ে গেছে দুর্গাদেহী নারী আর আমরা মর্তের মানুষ-কেউ সুর কেউবা অসুর। নারীর পথ চলা বুঝি তাই এতো কঠিন। কঠিন হবে নাই বা কেন? এ যে ভারতবর্ষ। এ যে রামায়ণ-মহাভারতের দেশ। এ যে সীতা, দ্রৌপদী, হৈমন্তি, বিলাসী, কাদম্বিনী আর জ্যোতি সিংদের দেশ।

নারীর পথ চলাটা তাই এখানে খুব সহজ নয়। বহুত দম আর তেজ লাগে। খাড়া পাহাড় বেয়ে শীর্ষে ওঠা নারী সীতা, দ্রৌপদী--তারা জানে এ পথ কত লম্বা আর কঠিন। হৈমন্তি, বিলাসী, জ্যোতি সিং আর কাদম্বিনীরা এখানে ‘মরিয়া প্রমাণ করে যে মরে নাই’। কিন্তু মরে গেছে বাল্মিকি, কৃষ্ণদৈপায়ন, রবীন্দ্রনাথ আর শরৎবাবুরা। দেবতাদের সাথে তারা স্বর্গেই আছেন। বেঁচে থাকলে একালেও ও রকম আরো অনেক সীতা, দ্রৌপদী, হৈমন্তি, বিলাসী, কাদম্বিনী আমরা পেতাম বটে। তা আর হলো না!

আমরা পেয়েছি দেবব্রত সিংহের ‘কুইড়ি পাড়ার শিবু কুইড়ির তেজি বেটি সাজলী’কে। সীতার মতো তেজ আর দ্রৌপদীর মতো দম নিয়ে লড়াকু এক ক্ষেত মজুরের বেটি সাজলী। আমাদের চোখে ও ‘বেটি না মাটি’?

হ্যা, সমাজের চোখে সাজলীরা কখনো বেটি, কখনো বউ, কখনো মা-আদতে সবর্দাই সে এক ‘নারী’। কেবলই মাটির দেহধারী এক নশ্বর পুতুল। তাই মানুষ হয়ে ওঠার সংগ্রাম তার আজীবনের। সে সংগ্রামে আজো সে পরাজিত। তাই নিয়তি তার একটাই-পরের ঘরের হেশেল ঠেলা। নিজের ঘর বলতে কিছু নেই যে ভারতবর্ষের সাজলীদের। শুধু ভারতবর্ষ কেন বলছি, এ বঙ্গভূমিতেও সাজলীদের যে একই দশা!

পরের বাড়ি গতর খেটে কাজ করে মাধ্যমিকে প্রথম হয়েছে সাজলী। এরকম চিত্র আমাদের বঙ্গভূমিতেও আছে কম নয়। বাবা ক্ষেতমজুর, রিকসা অথবা ঠেলা চালক, মা গতর খেটে পেট চালায়। এমন কঠিন যুদ্ধজীবনেও শুনি সন্তানদের সাফল্যের কাহিনী। চোখে অশ্রু জমে, বুকে তেজ অনুভব করি এমন অগ্নিসন্তানদের জন্য। অদম্য মেধাবীদের জন্য। সাজলীদের জন্য। স্বপ্ন দেখি আলোকিত বাংলাদেশের।

সাজলীর মাও যে কামিন খাটে মানুষের বাড়িতে। শুধু সাজলীর মা নয়, তার মা, তার মায়ের মা, তার মায়ের মাও যে এ কামিন খেটেই চলতো। এ যেন বহু জনমের এক দাসত্ব শৃঙ্খল। এ শুধু সাজলীর কোনো একক চিত্র নয়। এ যেন নারীর শত বছরের বন্দী জীবনেরই চিত্রকল্প।

দারিদ্র্য আর নারীত্ব দুটোই সাজলীর দেবতা প্রদত্ব। দুটোর বিরুদ্ধেই তার সংগ্রাম করতে হয়। দারিদ্যের বিরুদ্ধে এ সংগ্রামে তার সাথে থাকে তার পরিবার, সমাজ কখনোবা রাষ্ট্রও। যুদ্ধটা তাই একটু সহজ হয়তোবা। কিন্তু নারীত্বের বিরুদ্ধে নারী সাজলীর এ সংগ্রামে সে শুধুই একা। তাই কুরুক্ষেত্রটা তার জন্য বড্ড কঠিন বৈকি! কবি দেবব্রত তবুও স্বপ্ন দেখেন সাজলীকে নিয়ে।

তবু স্বপ্ন দেখে সাজলীরা। স্বপ্ন দেখায় বাবা-মা, পরিবার। সাজলীকেও আকাশ ছোয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে ওর বাবা। নারীর জন্মতো কেবল কামিন খাটার জন্য নয়। নারী-হোক সে কিশোর অথবা যৌবনপ্রাপ্ত-সে যে শক্তির আধার। কারো কাছেই মাথা নোয়াবার না। যদিও অসুরের চোখে সে কেবলই ‘কামিন’ বা ’কামিনী’-কাম বাসনা পূর্ণ করার এক মাটির দেহ বৈ কিছু নয়। সাজলীর মাতৃকুলের কামিন খাটার (গতর খেটে খাওয়ার) মধ্যদিয়ে কবি যেন নারীর শত জনমের ’কামিনী’ (কাম বাসনা পূর্ণ এক নারী) কেই তুলে ধরেছেন।

ভিডিও-১


অসুরেরা নারীকে দেখে মাটি হিসেবে। মাটির তৈরি নরম শরীরের ভাজে ভাজে সে সন্ধান করে কাম, কামিন বা কামিনীকে। কিন্তু ওই দেহে যে খেলা করে দেবতার তেজরশ্মি। জগতের যতো দু:খ, বেদনা, অশ্রু, বিশাদ এমনকি আগুনও যে লুকায়িত থাকে ওই শরীরের ভাঁজে ভাঁজেই। যে সুর সে দেখে। সে অবাক হয় দেবতার এ মহাসৃষ্টি দর্শনে। কীভাবে জগতের সকল দু:খ এক মুহুর্তে বরণ করে নেয় শুধু একটি হাসির আড়ালে। এযে দু:খের সাগর, আগুনের পাহাড় জয়ী এক দেবী-সীতা, অগ্নিপরীক্ষায়ও সে ভষ্ম হয়না। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে তেজোদীপ্ত এক নারী ‘সাজলী’ হয়ে।

সাজলীর জন্য তাই রাষ্ট্র, সমাজ, সংসার-কারো দয়া নয়, প্রয়োজন খাড়া পাহাড়ে ওঠার পথটা তৈরি করে দেয়ার। সাজলীর ভাষায়, .. ‘আমার পাড়ার শ’য়ে শ’য়ে আরো অনেক সাজলী আছে, আরো শিবু কুইড়ির বেটি আছে গাঁ-গ্রামে। তারা যদ্দিন অন্ধকারে পড়ে থাকবেক, তারা যদ্দিন লেখা পড়ার লাগেক কাদে বলবেক, তদ্দিন কোনো বাবুর দয়া আমার না-ই লাগবেক’।

দুই. দেবতা বিসর্জন

কাঠকুড়ানি মৃণাল।   দেবব্রত’র ভাষায়, ‘গায়ের রঙ একেবারে কালো।   আকড় ফলের পাড়া মিশমিশে কালো। তবে কালো হলে হবে কি, পাড়ার লোকে সবাই বলে ওর গড়ন খুবই ভালো। টানা টানা চোখ,  বাশির মতো নাক, ছিপছিপে চেহাড়া। হলুদ শাড়ি পড়ে মাথায় লাল পলাশের ফুল গুজলে দেখায় দারুণ, একেবারে মনভুলানী, একেবারে মন কাড়ানী’।
তা গড়ন যতোই ভালো হোক, একেতো দরিদ্র, তার ওপরে নারী, তাও আবার কালো।   যুদ্ধটা তাই এখানে আরো কঠিন। দেবতার তেজরশ্মি এখানে ‘দুর্গা’ নয় ‘কালী’ রূপে আবির্ভূত। মহাদেবী কালীর অন্য নাম ‘শ্যামা’। আরেক নাম ‘আদ্যাশক্তি। শাস্ত্র বলে, কালী বিশ্বব্রক্ষান্ড সৃষ্টির আদি কারণ। ভারতবর্ষ কালীকে মাতৃরূপে পূজা করে। তবে কেন ভারতবর্ষের কালোবরণ নারীকূল এতো অচ্ছুত। দেবীর গায়ের রঙ কালো বলে কি সে পূজনীয় নয়? আদ্যাশক্তি যদি হয় কালো দেবী, তবে শক্তির আধার নারী কালো বরণ হলে কেন তাকে সইতে হবে এতো লাঞ্ছনা?

এ জগতে পুরুষের বেড়ে ওঠা, পথ চলা সবইতো কোনো না কোনো নারীকে ঘিরে। কখনো বা সে মা, কখনো স্ত্রী, কখনো কণ্যা।   এযেনো একই দেবীর বহু রূপ। কিন্তু নিয়তির কি নির্মম পরিহাস সে পুরুষকেই তার দেবতা জ্ঞান করে চলতে হয় জীবনের প্রতিটি বাকে বাকে। কখনো সে দেবতারূপী পুরুষটি হয় পিতা, স্বামী, ভ্রাত্রা, এমনকি সন্তানও।

মৃণালের কাছে স্বামীই তার দেবতা।

মৃণালের বাবা সাজলীর বাবার মতো নয়। নারী মৃণালী এখানে শুধুই একা। বরং সাজলীর বাবার চরিত্রটি এখানে ধারণ করেছে মৃণালীর মা। মায়ের আগ্রহেই মৃণালের স্কুলে যাওয়া। টেনেটুনো কোনো মতে গ্রামের স্কুলে নাইন পর্যন্ত পড়েছে সে। ওদিকে ক্ষেতমজুর বাবা যে নেশা-ভাঙ করা মানুষ। পুরুলিয়া জানকি জাদবের কাছ থেকে আগাম টাকাও নিয়েছে বাবা। মেয়ের তাই আগাম বিয়ের আয়োজন।

কিন্তু মৃণাল যে স্বামীদেবতা বরণ করার জন্য তখনও তৈরি হয়নি। পুরুষ-শাসিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে মৃণাল এক প্রতিবাদী নারী। অসুর বিনাসী কালী।

দেবী অসুর বধ করে স্বর্গে যেতে পারেন সেখানে তার জন্য রয়েছে শিব ঠাকুর। কিন্তু মর্তের নারী  মৃণাল। একবার বিয়ে ভেঙ্গে গেলে নারীর মর্তেওযে ঠাই নাই। স্বর্গ থেকে তো নারী আগেই বিচ্যুত। স্বর্গবিচ্যুত নারীর কাছে তাই স্বামীই স্বর্গ, স্বামীই দেবতা।

বিয়ে ভেঙে যাওয়া এমনই এক মুহুর্তে আবির্ভূত হলেন এক পুরুষ-দেবতা। সুদর্শন, শিক্ষিত এক সমাজ সেবক। সবকিছু জেনে বুঝেই বিয়ে করলেন কালো বরণ মৃণালকে। সবকিছু জেনে বুঝে কালো বরণকে জীবনে ধারণ করার জন্য গাঁয়ের লোকও তাকে দেবতা জ্ঞান করে।   অতঃপর সুখে শান্তিতে দিন, মাস, কাল..।

কিন্তু মৃণালের যে স্বামীদেবতা-আদতে সে তো এক পুরুষ। তাই মৃণালের কালো বরণ তার কাছে আর চমক লাগায় না, তার দৃষ্টিতে আর প্রেম জাগায়না। পুরুষের কাছে নারী-সেতো বাহারী রঙের, বাহারী ঢঙের, বাহারী গড়নের রক্তমাংসের পুতুল। বাহারী মন তার কাছে অপ্রাসঙ্গিক। পুরুষের কাছে নারী যেনো এক মোহ। কালো বরণ মৃণালে স্বামীদেবতার মন মজবে কেন? তাই স্বামীপুরুষের মোহমুক্তি ঘটতে সময় লাগেনি মোটে।   

কিন্তু মৃণাল? সে তো নারী। তার নারীত্ব যে বিশ্বাস আর ভালোবাসা দিয়ে গড়া এক মন্দির, এক শিবালয়। সেখানে একবার ফাটল ধরলে তাতে যে চূর্ণ হয় দেবতার আসন। কেপে ওঠে বিশ্বাসের ভীত। মৃণাল যখন বুঝতে পারলো তার কালোর মাঝে স্বামী আর আলোর দেখা পায়না, তখন দেবতার আসনে চীড় ধরলো। মোহমুক্ত স্বামীর নব রূপ দর্শনে মৃণাল হৃদয়ে নতুন করে বাসা বাধলো পুরনো সেই বিশ্বাস ‘নারী শুধুই নারী’।

কিন্তু হারবেনা মৃণাল। হারেনি সাজলীও।   গঙ্গায় অসুররূপী স্বামী যে দেবীকে বিসর্জন দিয়েছে, উথাল পাথাল ঢেউয়ের তালে সে দেবীই যে আবার ভেসে উঠেছে সুরের হাত ধরে। সংসার যে মানুষেতে সুরাসুর। কেউ ডোবায়, কেউ ভাসায়।  

অসুররূপী স্বামীদেবতার গঙ্গায় মৃণালদেবীকে বিসর্জনের মাধ্যমে রচিত হলো মৃণালের দেবতা বিসর্জনের এক নতুন কাহিনী। এ কাহিনীর আপাতত: এখানেই সমাপ্তি।  

ভিডিও-২


কিন্তু এক মৃণালের না হয় অপদেবতার বিসর্জন ঘটলো, তাতে সমাজের শত-শত, হাজার-হাজার মৃণাল আর সাজলীর জীবনে কি কোনো আশার প্রদীপ জ্বলে উঠবে? কীভাবে? সমাজটা যে ওই স্বামী-দেবতাদেরই দখলে। তবু আশা, স্বামী নয়, দেবতাও নয়, মানুষ হয়ে যদি দেবী নয়, নারী নয়, মানুষকে ভালোবাসা যায় কোনো দিন। সেদিন জাগবে এ ভারতবর্ষ। এ বঙ্গভূমি।

সেদিন খুব বেশি দূরে নয়। মৃণালের মুখেই শুনি সে কথা, “সংসারের মাঝখানে মিয়া মানুষের পরিচয়টা যে কী, সে আমি পেয়েছি। আর আমার দরকার নাই। তোমরা যে আপন ইচ্ছা মতো আপন দস্তুর দিয়ে আমাদের জীবনটাকে চিরকাল পায়ের তলায় চিপে রাইখে দিবে---তোমাদের পা এতো লম্বা লয়...ইতি মৃনাল। তোমাদের চরণতলাশ্রয় ছিন্ন এ যুগের মৃণাল”।

কবি দেবব্রত সিংহের  রচিত ‘ত্যাজ’ ও মৃণালের পত্র’ কবিতা দুটির কথা বললেই দেবব্রতর লেখার শক্তির কথা বলা হয়ে যায়। কিন্তু এখানে বলতেই হবে আরেক তেজস্বীনী মেধাবী মেধা বন্দোপাধ্যয়ের কথা। সাজলি কিংবা মৃণাল যেমন তাদের গায়ের জোরে, চেতনা আর ত্যাজের জোরে অসুরের বিরুদ্ধে তাদের শক্তির যে ঘোষণা দিয়েছেন, মেধাই তা তুলে এনেছেন তার কণ্ঠে। কি অসাধারণ তার সেই বাগ-ভঙিমা, কী দারুণ নিখুঁত সেই অভিব্যক্তি, কী শিহরণ তোলা, অনুধাবনে কাদিয়ে ফেলা কবিতা পাঠ। এখানে দেবব্রত সিংহ, তার সৃষ্ট দুই চরিত্র সাজলি আর মৃণাল এবং মেধা বন্দোপাধ্যয় সবাই মহানভাবে মহীয়ান।

ধন্যবাদ ভারতের তারা টেলিভিশনকে তারা মেধাকে ডেকে পড়িয়েছেন কবিতা দুটি। ধন্যবাদ ইউটিউবকে। যোগাযোগের আধুনিক ধারায় সেখানে সহজেই আপলোড করা গেছে এমন তেজী দুটি কবিতাকে। আর ধন্যবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুককে। কত সহজেই কত দূরের কনটেন্ট কত কাছে এনে দিচ্ছে। বিশ্ব মানবতা এতে সম্মৃদ্ধই হবে।

বাংলাদেশ সময় ০৯১৩ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৬
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।