ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

ডুববে না বাংলাদেশ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৬
ডুববে না বাংলাদেশ

১ জুলাইয়ের পর থেকে আমাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু জঙ্গিবাদ। এটাই স্বাভাবিক।

কারণ, ১ জুলাইয়ের সন্ত্রাসী কাণ্ডটি আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বুকে এক চরম আঘাত।

তবে, নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ যে নৈতিক-রাজনৈতিক-সাংবিধানিক-ঐতিহাসিক-আইনগত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত তার ওপর ভর করেই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ তারুণ্য জঙ্গিবাদের ভীত কাঁপিয়ে দিয়েছে। গুলশান হামলার মাধ্যমে আমরা জঙ্গিবাদের আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে যুক্ত হলাম মাত্র। এটি আমাদের জন্য একটি বাড়তি ভাবনা। অবশ্যই একমাত্র ভাবনা নয়।


আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ জঙ্গিবাদ নয়। ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য ‘জলবায়ু’ই প্রধান চ্যালেঞ্জ।

গত মাসাধিককাল বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকা বন্যাকবলিত ছিল। ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, যমুনা, তিস্তা, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যা, বালু, সুরমা, কুশিয়ারাসহ বেশ কয়েকটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে নদীর তীরবর্তী রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রামসহ আরো কিছু অঞ্চল প্লাবিত হয়। সেই সঙ্গে টানা বৃষ্টি বন্যার প্রকোপ বাড়িয়ে দেয়।

সর্বশেষ বড় বন্যা হয় ২০০৪ ও ২০০৭ সালে। ২০০৭ সালের বন্যায় এ অঞ্চলের সাতটি দেশ আক্রান্ত হওয়ায় এটিকে দক্ষিণ এশীয় বন্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০০৭ সালের বন্যাটি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত। এখানে নিয়মিত বিরতির পর (৮-১০ বছর) বন্যার আবির্ভাব প্রকৃতির একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। যদি তাই হয়, তবে প্রশ্ন হচ্ছে, দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণে সেরকম প্রস্তুতি আমাদের ছিল কি? বাংলানিউজের চোখে যারা বন্যার সচিত্র প্রতিবেদন দেখেছেন তারা হয়তো এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে ফিরবেন।

কিন্তু অল্পতেই আমরা আত্মতুষ্ট। দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা সক্ষমতা (resilience) অর্জন করেছি-এরকম একটি জাতীয় ধারণার (National Perception) আবির্ভাব হয়েছে। এরকম ধারণা দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য সবসময় ইতিবাচক নয়।

সিডরে আমরা ভয়াবহ ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছি। ‘আইলা’য় সে ক্ষতি কম হয়েছে। সর্বশেষ ‘কোমেন’ ও ‘রোয়ানু’তে ক্ষতির মাত্রা আরো কমেছে। মূলত জনসচেতনতাই এক্ষেত্রে মূল শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু তাই বলে, সবসময় দুর্যোগকবলিতদের ওপর ভরসা করে তাদের পাশে না দাঁড়ানো বিপজ্জনক।

মাসাধিককালের বন্যা গণমাধ্যমগুলোর শিরোনাম হতে পারেনি। গণমাধ্যমের উল্লেখযোগ্য ও দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা আমাদের চোখে পড়েনি। পানি যখন কমতে শুরু করেছে তখন কয়েকটি টিভি চ্যানেল টকশোতে আলাপচারিতা করেছে। সেখানে বক্তারা অবশ্য স্বীকার করেছেন, গণমাধ্যম বন্যাকে আমরা সেভাবে পাইনি। জঙ্গিবাদে চাপা পড়েছে এবারের বন্যা!

গণমাধ্যমে বন্যা সেরকম কভারেজ না পাওয়ায় জনগণের মধ্যেও এনিয়ে তেমন রা ছিল না। এটাই স্বাভাবিক। গণমাধ্যম রাষ্ট্রের তৃতীয় চোখ। জনগণ গণমাধ্যমেই খুঁজে পায় তাদের দুঃখ-দুদর্শা-আশা-নিরাশা-সম্ভাবনার কথা। হয়তো সেজন্যই এবার সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিলেও জনগণ প্রতিবারের মতো এগিয়ে আসেনি। তবে, শেষের দিকে হলেও গণমাধ্যমের এ উপলব্ধিটি আমাদের জন্য আশা জাগানিয়া। মনে রাখা দরকার, কাটতিই শেষ কথা নয়।

ব্যতিক্রম হিসেবে পেয়েছি বাংলানিউজকে। যেমনটি পেয়েছিলাম আগেও। গুলশান হত্যাকাণ্ডের পর আমরা যখন নিরাপত্তাহীনতায়, অনিশ্চয়তায় দিনযাপন করছি, ভাবছি সব ‘গেল গেল’ আর মাঝরাতে টকশোতে শুনেছি সারাদিনে বাংলানিউজে প্রকাশিত সংবাদের গুরুগম্ভীর বিশ্লেষণ, তখনও সেই বাংলানিউজই দেখিয়েছি সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। দেশের মানুষের কাছে, বিশ্বের কাছে নতুনভাবে তুলে এনেছে বৃহত্তর-সিলেটের পর্যটন সম্ভাবনাকে। বাংলানিউজ অন্ধকারেও আলোর সন্ধানে খুঁজে ফেরে মানচিত্রের প্রতিটি কোণে, ভূমির প্রতি ইঞ্চিতে।

সেই তাগিদ থেকেই অনুসন্ধানী চোখ আর মানবিক অনুভূতি নিয়ে ছুটে গিয়েছে জামালপুর-রংপুর-কুড়িগ্রাম-মানিকগঞ্জের বন্যার্তদের পাশে। জঙ্গি তামিম-নিব্রাস-মোবাশ্বিরই বাংলাদেশ নয়। তুলে এনেছে কুড়িগ্রামের কাসুয়ানি, চারুবালা, কুসুমবালা বা জামালপুরের টাট্টু মিয়াদের জীবন-সংগ্রামের কথা। শুনিয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ডুবে থাকা মানুষদের ভেসে থাকা স্বপ্নের কথা। বাংলানিউজ আমাদের নতুন করে মনে করিয়ে দিল পুরনো সেই কথা --- ডুববে না বাংলাদেশ। জয়তু বাংলানিউজ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৬
জেএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।