ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

ধরন পাল্টাবে সাংবাদিকতা পাল্টাবে না

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৬
ধরন পাল্টাবে সাংবাদিকতা পাল্টাবে না

সবকিছুতেই দক্ষ হয়ে ওঠা অবশ্যই অসম্ভব। কিন্তু অনেক কিছু শিখে নেওয়া খুবই সম্ভব। এই ধরুন কিভাবে রেকর্ড করবেন। কিভাবে ভিডিও ধারন করবেন, কিভাবে ভিডিও এবং সাউন্ড এডিট করবেন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন ব্যবহার করে কিভাবে লিখবেন,...

<<আগের অংশ
সবকিছুতেই দক্ষ হয়ে ওঠা অবশ্যই অসম্ভব। কিন্তু অনেক কিছু শিখে নেওয়া খুবই সম্ভব।

এই ধরুন কিভাবে রেকর্ড করবেন। কিভাবে ভিডিও ধারন করবেন, কিভাবে ভিডিও এবং সাউন্ড এডিট করবেন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন ব্যবহার করে কিভাবে লিখবেন, কিভাবে স্লাইডশো বানাবেন, কিভাবে ফ্ল্যাশ ব্যবহার করবেন, আর কিভাবে একটি ওয়েব সাইট বানাবেন এগুলো কিন্তু খুবই সহজ কিছু কাজ। শিখে নিলেই করা সম্ভব, যার জন্য অনেক দক্ষতার দরকার নেই।

রিপোর্টিংয়ের পাশাপাশি এই কাজগুলো যদি একটু শিখে নিতে পারেন, তার ফল আপনি পাবেনই। আর একটা কথা এর সবগুলোতেই আপনাকে দক্ষ কিংবা পারঙ্গম হতে হবে তা নয়, বাস্তবতা বর্জিত না হয়ে বরং এর মধ্যে একটি কিংবা দুটি কাজ একটু বেশি মনযোগ দিয়ে শেখার চেষ্টা করুন। আর সবগুলো সম্পর্কেই কিছু না কিছু জ্ঞান রাখুন। তাতেই চলবে।

ধরুন আপনি ফ্ল্যাশের কাজটা সবচেয়ে ভালো পারেন, এখন আপনাকে ভিডিও ধারনে সর্বোচ্চ দক্ষ না হলেও চলবে। তবে আপনার আবার ফুটেজ সম্পর্কে এতটুকু ধারনা থাকতেই হবে যে, কোনও ফুটেজটি ব্যবহারযো্গ্য, কোনটি নয়।

এটা অনেকটা লিবারেল আর্টস শিক্ষারই মতো। আপনি ইতিহাস, কলা এমন আরও অনেক বিষয় পড়লেন। আর এরপর যখন জাদুঘরে যাবেন আপনি হয়তো চিত্রকলার সব খুঁটিনাটি ধরে ফেলতে পারবেন না, কিন্তু একটি ধারনা অবশ্যই থাকবে যা অন্যদের থেকে আপনাকে আলাদা করে রাখবে।

তেমনি আপনি মাল্টিমিডিয়ার বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারনা রাখেন তখন সাংবাদিকতার চর্চায় আপনাকে আলাদা করে চেনা যাবে।

এর পাশাপাশি সমানভাবে দরকার অভিজ্ঞতা অর্জন। যদি আপনি সাংবাদিকতাকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে চান তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই যেকোনও মিডিয়া হাউজে ইনটার্নশিপ করে ফেলুন। এটা অত্যন্ত আবশ্যিক। এতে অ্যাকডেমিক ক্রেডিট যেমন যোগ হবে, কিছু অর্থও পাওয়া যেতে পারে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এতে আপনার ঝোলায় ঢুকবে কিছু অভিজ্ঞতা যা পরে আপনার পেশাদার সাংবাদিকের চাকরি পেতে কাজে দেবে। নিয়োগকর্তার আস্থা আপনার ওপর অবশ্যই বেশি থাকবে, অন্তত তাদের চেয়ে যাদের এই অভিজ্ঞতা নেই।

এটা প্রতিযোগিতার বাজার। এখানে যার যত অভিজ্ঞতা তার সম্ভাবনা তত বেশি।

নিয়োগকর্তা সম্পাদক সবসময়ই এটা দেখবেন তার নতুন কর্মীটি ঠিক কতটুকু কাজে লাগবে। বিভিন্ন সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, রেডিও, টেলিভিশন ও ওয়েবসাইটে ইনটার্নের সুযোগ থাকে। এতে কেউ রিপোর্টার, কেউ ফটোগ্রাফার, কেউ প্রোডাকশন সহকারী, কেউ কপি এডিটর, কেউ মাল্টিমিডিয়ার প্রযোজক আবার কেউ ডিজাইনার হয়ে কাজ করতে পারেন।

কোনও কোনও ইনটার্ন খণ্ডকালীন কাজও পেয়ে যান, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে এমনটাও হয় যে, ইনটার্ন থাকাকালীনই পেয়ে যান পূর্ণকালীন কাজের অফার। এতে আর তাদের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে হয় না। কিন্তু যাদের কাজ হয়ে গেলো না, তাদের ভবিষ্যত নিয়েও শঙ্কার কিছু নেই।

আপনি যদি সাংবাদিকতাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়ার কথা ভেবেই থাকেন, তাহলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তনের জন্য সদা প্রস্তুত থাকুন। তবে ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত মোটেই হবেন না।

এখন যে সময় এসেছে তাতে প্রযুক্তির ইতিহাসের সাথে সাথে সাংবাদিকতার ইতিহাসও পাল্টাবে। কিন্তু তাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ এতে কেবল মাধ্যমটা পাল্টাবে। সাংবাদিকতা সাংবাদিকতাই থেকে যাবে, যার জন্য সাংবাদিকেরই প্রয়োজন হবে।

আপনি যদি নিজেকে সময়ের সাংবাদিক করে গড়ে তুলতে পারেন তাহলে আপনিও পাল্টাতে থাকবেন সাংবাদিকতার ইতিহাসের সাথে সাথে। সাংবাদিক হিসেবে আপনি যে দক্ষতাগুলো অর্জন করেছেন, যেমন- গবেষণা, লিখন, শ্রবন আর পর্যবেক্ষণ পাশাপাশি আন্তঃব্যাক্তিক যোগাযোগ আর চিন্তার শক্তি এগুলো থেকেই যাবে।

শুধু থেকে যাবে না, আপনার মধ্য থেকে তা ছড়িয়ে পড়বে আরও অনেক সহকর্মীর মাঝে। তাদের মাধ্যমে আরও অনেকের, আর তাদের মাধ্যমে আরও অনেকের মাঝে। এভাবেই সাংবাদিকতা টিকে থাকবে। ধরন পাল্টালেও সাংবাদিকতা পাল্টাবে না।    

বাংলাদেশ সময় ০৯১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৬
এমএমকে  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।