ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিচার নয় কেন?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৭
আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিচার নয় কেন? ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ

মিয়ানমারে মুসলমানদের উপর নির্লজ্জভাবে গণহত্যা চালানো হচ্ছে। যা রাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমার এর দায়ভার এড়াতে পারে না। নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা দেওয়া প্রত্যেক রাষ্ট্রের কর্তব্য। এছাড়াও নাগরিকদের উপর গণহত্যা চালানো হলে কোনো নির্দিষ্ট রাষ্ট্র আন্তর্জাতিকভাবেও দায়বদ্ধ থাকে। শুধু মিয়ানমার রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা নিয়ে আমি কথা বলবো না। আমি আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টিও আকর্ষণ করবো। 

মানবিক কারণে বাংলাদেশ রাষ্ট্র তার প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারের শরণার্থীদের আশ্রয় দিচ্ছে বটে। কিছু রাষ্ট্র সহমর্মিতাও প্রকাশ করছে এ ব্যাপারে।

তারা উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং ক্ষেত্র বিশেষে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ত্রাণও পাঠাচ্ছে। কিন্তু তাদের কি আর কোনো দায়িত্ব নেই? আজ বিশ্বে গণহত্যার বিচারের জন্য একটি স্থায়ী আন্তর্জাতিক আদালত রয়েছে। যার নাম ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি)। কেন মিয়ানমারকে আইসিসি আইন অর্থাৎ, Rome Statute 1998 এর অধীনে বিচারের মুখোমুখি করবার জন্য আন্তর্জাতিক বিশ্ব সচেষ্ট হচ্ছে না? Rome Statute -এর  আর্টিকেল ১৩ অনুযায়ী ৩ উপায়ে আইসিসিতে কোনো রাষ্ট্রের বিরদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে বিচার করা সম্ভব।

প্রথম উপায়টি হলো- Rome Statute এর পক্ষভুক্ত কোনো রাষ্ট্র যখন নিজেই তার রাষ্ট্রীয় সীমানার অধীনে সংগঠিত গণহত্যার বিচারের ব্যাপারে অপারগতা বা অনিচ্ছা প্রকাশ করে বিচারের দাবিতে আইসিসিতে আবেদন জানায়, এমনকি কোনো রাষ্ট্র যদি পক্ষভুক্ত নাও হয়ে থাকে তবে বিশেষ ঘোষণা দিয়ে সে আইসিসিতে বিচারের আবেদন জানাতে পারে। যেহেতু  মিয়ানমার রাষ্ট্র নিজেই মুসলমানদের উপর সচেতনভাবেই এ গণহত্যা সংগঠিত করছে, সেহেতু আমরা আশা করতে পারি না যে মিয়ানমার রাষ্ট্র এ কাজটি করবে।

মিয়ানমার রাষ্ট্র Rome Statute-  এর পক্ষভুক্ত রাষ্ট্র নয় এবং সঙ্গত কারণেই ঘোষণা দিয়ে এ গণহত্যার বিচার তারা আইসিসিতে চাইবে না। তাহলে Rome Statute আর্টিকেল ১৩ অনুযায়ী  উপায় থাকে আর মাত্র দু’টি। একটি হলো যদি UN Security Council তার রেজ্যুলেশন পাস করে মিয়ানমারে মুসলমানদের উপর সংগঠিত গণহত্যার বিচারের বিষয়টি আইসিসিতে রেফার করে পাঠায়। ইতোমধ্যে UN Security Council মিয়ানমারে মুসলমানদের উপর সংগঠিত গণহত্যার বিচারের উপর একটি অনুসন্ধান রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তবে এখন ও  UN Security Council  এ ব্যাপারে আইসিসিতে বিচারের জন্য কোনো রেজ্যুলেশন পাস করেনি। Rome Statute -এর  আর্টিকেল ১৩ অনুযায়ী শেষ যে উপায়টি রয়েছে তা হলো আইসিসির প্রসিকিউশন টিম স্ব-প্রণোদিত হয়ে মিয়ানমারে মুসলমানদের উপর সংগঠিত গণহত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করে মিয়ানমার রাষ্ট্রকে আইসিসিতে বিচারের মুখোমুখি করা।  

কিন্তু এক্ষেত্রেও আমরা দেখছি আইসিসির  প্রসিকউশন টিম কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

আমি আন্তর্জাতিক বিশ্বের এহেন নির্লিপ্ততা দেখে হতাশ। বাংলাদেশ রাষ্ট্র আজ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিকূলতা মোকাবেলা করছে। আমাদের সঙ্গে কিছু বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রও রয়েছে, যারা সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু বিষয়টি শুধু শরণার্থী সহায়তার নয়, বিষয়টি আরও অনেক ব্যাপক। এখানে একটি আইনি লড়াইয়ের ইস্যু রয়েছে। গণহত্যাকারী রাষ্ট্রকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। শুধু “উঁহু” “আহা” না করে, শুধু ত্রাণ সহায়তার আশ্বাস না দিয়ে, শুধু সমালোচনার ঝড় না তুলে আন্তর্জাতিক মহলের উচিত গণহত্যাকারী মিয়ানমার রাষ্ট্রকে আইসিসিতে বিচারের মুখোমুখি করা।

ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ
প্রসিকিউটর, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং অধ্যাপক , আইন বিভাগ , ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।