ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

ন্যায্য পৃথিবীর ডাক দিয়ে যাই

রোবায়েত ফেরদৌস, ঢাবি শিক্ষক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১১
ন্যায্য পৃথিবীর ডাক দিয়ে যাই

 এক.
ডাক দিয়ে যাই; অসাম্য, অনৈতিক আর অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক দিয়ে যাই; কতোটা সম্ভব হবে সে বিবেচনা হয়তো ছিল না, কিন্তু তাদের ডাকে আন্তরিকতা ছিল একশ ভাগ; আহ্বানের ক্যানভাস ছিল যারপরনাই বৃহত্তর- সাম্য, স্বাধীনতা, ন্যায্যতা, সহযোগিতা, অংশিদারিত্ব আর নৈতিক মূল্যবোধের ভি্ত্তিতে একটি মানবিক সমাজ নির্মাণের আহ্বান।

একটি ওয়েবসাইট, নাম ‘১৫ অক্টোবর নেট’, ডাক কিন্তু এসেছিল প্রথম সেখান থেকেই, পুরো বিশ্ব যেন সেই ডাকের আহবানে সাড়া দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে প্রহর গুণছিল।

শুরুতে আগুন লেগেছিল পুঁজিবাদের মক্কা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, মাত্র শ দুয়েক মার্কিন নাগরিক ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১১-এ মার্কিন ফিন্যান্স পুঁজির প্রতীক ওয়াল স্ট্রিট দখলের ডাক দিয়েছিল। ওয়াল স্ট্রিটের কাছে জুকোটি নামের পার্ক, যা এখন অমানবিক-পুঁজিতান্ত্রিক-বিশ্বব্যবস্থা বদলানোর প্রতীকী স্থানে রূপান্তরিত হয়েছে, সেখান থেকে আন্দোলন চালানো হয়েছিল এবং প্রচণ্ড শীতে এখনও মানুষ সেখানে অবস্থান করছেন, প্রতিদিন আর প্রতিরাতে আন্দোলনের উত্তাপে নিজেদেরকে উষ্ণ করে নিচ্ছেন। ঠিক যেন রবীন্দ্রনাথের গানের মতো তাদের জ্বালানো সে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে সবখানে সবখানে!

মেলবোর্ন, লন্ডন, শিকাগো, রোম, হংকং-- পৃথিবীর সর্বত্র এ আন্দোলন বিস্তৃত হয়েছে, ঢাকাতেও কিছু মিছিল হয়েছে, তবে তা খুব বেশি উত্তাপ ছড়াতে পারেনি। ‘ওয়াল স্ট্রিট দখল করো’ আন্দোলনের জের ধরে ক্যালিফোর্নিয়ার অকল্যান্ডে ধর্মঘট পালিত হয়েছে; অকল্যান্ড সমুদ্রবন্দর এতে অচল হয়ে পড়ে। ন্যায্যতার দাবিতে হাজার হাজার লোক পদযাত্রা করছে; প্রতিবাদী জনতা বড় বড় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সামনে ক্ষোভ দেখাচ্ছে; তুষারপাতের মধ্যে আন্দোলনকারীদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে; তবু তারা দমেননি, জেঁকে বসা শীতের তীব্রতার মধ্যেও অসাম্যের বিরুদ্ধে, বৈষম্যের অবসানে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আন্দোলনকারী আর তাদের স্পিরিটকে সাবাস না দেওয়াটাই বরং অন্যায় হবে। হয়তো এক সময় এই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যাবে, কারণ পুঁজিবাদী কাঠামোর শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত, দু`এক ধাক্কায় তা হয়তো ওপড়ানো যাবে না; কিন্তু এই আন্দোলন এরই মধ্যেই ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে, রাজনৈতিক আর সামাজিক আন্দোলনের ইতিহাসে এই ‘অকুপাই’ আন্দোলন যে অবশ্য পাঠ্য হবে সে কথা বলা যায় নির্দ্বিধায়। বিশ্বব্যাপী ক্ষুব্ধ জনতা সম্পদের ওপর যাদের প্রবেশাধিকার সীমিত, আর্থ-সামাজিক সুবিধাদিতে যাদের স্বত্বাধিকার নেই বললেই চলে আন্দোলনের মাধ্যমে তারা বিদ্যমান এই অন্যায্য ব্যবস্থা ও ক্ষমতা কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করেছে। তারা চাইছে প্রকৃত গণতন্ত্র, জনগণের প্রকৃত ক্ষমতায়ন। তাদের ওপর দমন-পীড়ন হচ্ছে, হুমকি-ধামকি গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে কাউকে কাউকে, তবু তারা সাধ্যমতো পুরো পৃথিবীর কাছে তাদের দাবি তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।

দুই.
বিদ্রোহের এমন মাত্রার সঙ্গে বিশ্ব ঠিক পরিচিত নয়। ‘আমরা ৯৯%’ --একথা বলে এখানে যোগ দিয়েছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।   কারা অংশ নিচ্ছে বিশ্বজুড়ে? সাদা, কালো, বেকার, শিল্পী, শিক্ষক, লেখক, সমকামী, আদিবাসী, নারী, পুরুষ, সাবেক সৈনিক; হলিউডের তারকারাও যোগ দিয়েছে। হৃদয়ের টানে সবাই এসে জড় হয়েছে। তাবু খাঁটিয়ে  রাত্রি যাপন করছে এই কনকনে শীতেও। বিশ্ব মিডিয়া তাদের আন্দোলনের খবর ফলাও করে প্রচার করেছে। আন্দোলনকারীদের একটি দল ভ্যাটিকান সিটির দুটি গির্জায় হামলা চালায়; এতে কুমারী মেরির মূর্তি ভেঙে যায়। ধনিক শ্রেণির মতো ধর্মীয় ক্ষমতাকেন্দ্রগুলোর ওপরও যে তারা  ক্ষুব্ধ’ এটি বোঝা যায় যারা ইহলোকে অশান্তির সমাধানে ব্যর্থ, পরলোকের মিথ্যে শান্তির আশা শোনায়, ক্ষোভ রয়েছে তাদের প্রতিও।

এ আন্দোলনের জন্য দাতাসংস্থা বা কোনো এনজিও’র অর্থায়ন দরকার হয়নি। আন্দোলনকারীরা নিজেরাই নিজেদের সময় আর অর্থ খরচ করেছে এখানে। এটি একান্তই সামাজিক আন্দোলন যার প্রকৃতি আবার রাজনৈতিক; কারণ তারা বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করতে চেয়েছে যার উদ্দেশ্য মূলত অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানো।

লক্ষণীয় যে, তারা কিন্তু বৈষম্যের অবলোপন চাইছে না বরং একে একটি সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসতে চাইছে। বাম/মার্ক্সিস্ট বিপ্লবীদের সঙ্গে এইখানে তাদের তফাতটা তাই স্পষ্ট। তবে অর্থনৈতিক সমতার সমতট নির্মাণের পাশাপাশি তারা যা চাইছে তার অনুবাদ করলে এটাও দাঁড়ায় যে, এরা একই সঙ্গে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সবক্ষেত্রেই গণতন্ত্রায়ন চাইছে। অর্থাৎ কেবল নির্বাচনী বা ইলেকটোরাল ডেমোক্রেসির বিপরীতে তারা প্রতিদিনের গণতন্ত্র চর্চার কথা বলছে।

বিদ্রোহী তরুণদের কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে। তারা আন্দোলন চালাচ্ছে সেই এক ভাগের বিরুদ্ধে যারা সমস্ত সম্পদ দখলে নিয়েছে। কেউ কেউ এতে সরাসরি শেণিযুদ্ধের পদধ্বনিও শুনতে পাচ্ছে। ওয়াল স্ট্রিট, নিউইয়র্কের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক এলাকা, একচেটিয়া পুঁজির প্রতীক আন্দোলনের তোপে কিছুটা হলেও টলছে। আন্দোলকারীরা ক্ষোভ দেখাচ্ছে ব্যাংক, বীমা, বহুজাতিক কোম্পানি, অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ওয়াল স্ট্রিট যেন রূপ পেয়েছে ওয়ার স্ট্রিটে! কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের মুনাফা নিশ্চিত করার স্বার্থেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র বাকি বিশ্বে যুদ্ধ বাঁধিয়ে রাখে, দখল আর সন্ত্রাসের শক্তি ক্ষয় করে।

রাষ্ট্রের মনোযোগ যখন যুদ্ধে তখন অনাহার, অপুষ্টি আর দারিদ্র্যের কারণে শিশুমৃত্যু আর প্রসূতি মৃত্যুর হার বাড়তে থাকে। আশ্রয়হীন মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয় অথবা এসব মৌলিক বিষয়াদি থেকে রাষ্ট্র নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়। দৃশ্যমান সত্য এই হয়ে উঠেছে যে, এক দল লোক সম্পদ লুট করে সম্পদের পাহাড় গড়ছে, বেউলআউটের নামে রাষ্ট্র আবার তাদেরকেই নতুন করে টাকা দিচ্ছে; কিন্তু গরিবের চাকরি বা জীবনের নিশ্চয়তা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। আন্দোলনকারীরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাকি বিশ্বকে জেগে ওঠার ডাক দিয়েছে। এটা সাধারণ মানুষের আন্দোলন, এর একক কোনো নেতা নেই; ফরমাল কোনো সংগঠন নেই; এই আন্দোলনের বার্তা খুব স্পষ্ট, রাষ্ট্রকে সম্পদের কেন্দ্রীভবনের প্রবণতা ভেঙে সুষ্ঠু বন্টনে নজর দিতে হবো নইলে সামনে এ আন্দোলন আরো প্রকট হবে। বিভিন্ন তাত্ত্বিকরা রীতিমত সংখ্যা-উপাত্ত হাজির করে দেখিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ববিরোধী চরিত্র। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তথাকথিত যুদ্ধে নেমে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই কতোবড় সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। নিরীহ মানুষ হত্যা করে আরব বিশ্বে গণতন্ত্রের বুলি কপচাচ্ছে। নিজেরা পারমাণবিক শক্তির বিস্তার করে চলেছে কিন্তু বাকি বিশ্বে পারমাণবিক গবেষণাও বরদাস্ত করছে না; মুখে বলছে শান্তির কথা কিন্তু ফিলিস্তিনের ইউনেস্কোর সদস্য হওয়ায় তাদের অনুদান বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। আন্দোলনকারীরা নাটক, সাহিত্য, নয়া অর্থশাস্ত্র, দর্শন পড়ছে নিজেদের আন্দোলনের একটি মতাদর্শিক পাটাতন খোঁজার চেষ্টা করছে। ওয়াল স্ট্রিট দখল আন্দোলন পৃথিবীর এক হাজারেরও বেশি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে বর্তমান পুঁজিবাদী কাঠামোর অন্ত:সারশুন্যতা এক লাফে বেরিয়ে পড়েছে। দুর্নীতি কমাও, বৈষম্য কমাও, বেকারত্ব দূর করো-- এই হচ্ছে এর মূল দাবি।

দরিদ্রদের সামাজিক সুযোগ কাটছাঁট করে ধনীদের বেলআউট করার চেষ্টা মানুষের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। বলা হচ্ছে, এটি একটি সামাজিক উদ্যোগ, তবে কি রাজনৈতিক দলগুলো অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে? তবে আন্দোলন হচ্ছে কিন্তু মূলত শহরকেন্দ্রিক, গ্রামীণ মানুষদের ছুঁয়ে যেতে পারেনি। এর চরিত্র জনবিপ্লবী ধরনের। প্রান্তিক নয় উন্নত পুঁজিবাদী দেশ থেকে এর সূত্রপাত। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি যেমন ফেইসবুক, ওয়েবসাইট, ব্লগিং, টুইটার,  এসএমএস আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে এসবের ক্ষমতা প্রমাণিত হয়েছে। বলা হচ্ছে এদের আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত, এত কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পা নেই। ভবিষ্যৎ অনেকটা অনিশ্চিত। নেই কোনো নেতৃত্ব নেই। কিন্তু এটা কি কেবলই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াজাত? আন্দোলনের পেছনে প্রস্তুতি/পরিকল্পনা ছিল না তা একেবারেই ঠিক না। এদের পরিচিতি এরা ইন্টারনেট অ্যাকটিভিস্ট যারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে জনমত তৈরির চেষ্টা চালাতো। একটা কমিটিও আছে তাদের। তারা বসছে কথাবার্তা বলছে, কমিটির নাম দিয়েছে জেনারেল অ্যাসেম্বলি। এরাই অকুপাই আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

তিন.
জাতীয় আয়, জিডিপি-জিএনপি, মাথা পিছু আয়, স্টক ইনডেক্স, বাণিজ্য উপাত্ত এসব পরিমাণগত সূচক দিয়ে একটি দেশের বা দেশের মানুষের উন্নয়ন মাপার চিন্তা যে পরিত্যাজ্য তা আমরা আগে থেকেই জানতাম, তবে এই বাতিল চিন্তাটিই বিভিন্ন দেশে ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে সবচেয়ে প্রভাবশালী গজকাঠি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছিল। এই চিন্তা যে অচল খুব তীব্রভাবে এখন তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, আর বিস্ময়কর যে, এর প্রমাণ মিলছে পুরো পৃথিবী জুড়ে। মানুষ বিকল্প কোনো অর্থনৈতিক তত্ত্ব হাজির করে পরিমাণগত সূচককে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে না, তারা প্রতিবাদ আর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার আগুন জ্বেলে উন্নয়নের প্রচলিত ধারণাকে বতিল ঘোষণা করছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে উন্নয়ন পরিমাপের যে গুণগত চলক যেমন ন্যায়বিচার, সম্পদের ন্যায্য বন্টন, আইনের শাসন, ভোটাধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, মানসম্মত শিক্ষা, জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা, মানুষের অবাধ চলাচল, সমাজিক গতিশীলতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এগুলো উপেক্ষা করে উন্নয়ন মাপার যে চেষ্টা তা ব্যর্থ হতে বাধ্য। জিডিপি প্রবৃদ্ধি আর মাথা পিছু আয় বেশি হতে পারে, কাগজে-কলমে প্রত্যেকের ভাগে সম্পদের হিসেবও থাকতে পারে কিন্তু দেখতে হবে সত্যিই সেই সম্পদে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রবেশাধিকার আছে কিনা। সম্পদের হিসেব কি কেবল গড় অংকের হিসেব নাকি আর্থ-সামাজিক সুবিধাদিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের স্বত্বাধিকার প্রতিষ্ঠার ইশতেহার? যেমন বিগত বছরগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবৃদ্ধি লক্ষযোগ্য হলেও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আমেরিকানদের আয় কমেছে। তবে খেয়াল করবার বিষয় টিউবের উপরে অবস্থিত ১ শতাংশ উচ্চবিত্তের আয় যদিও বেড়েছে কিন্তু প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন আমেরিকান বাস করছে দারিদ্র্যের মধ্যে; বেকারত্বের হারও বেশ উচ্চ।

অর্থনীতির নিচের দিকে অবস্থানকারীরা দেখলো শিক্ষাব্যয়, স্বাস্থ্যব্যয়, সামাজিক বীমার সুবিধা ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় নীতির যেসব সুবিধা অপেক্ষাকৃত দরিদ্ররা পেয়ে থাকে ব্যয় সংকোচনের ফলে তাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে।

পরিসংখ্যানের মোট হিসাব দিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির সাফল্য বর্ণনা করা সম্ভব কিন্তু সামাজিক সাফল্যের ঘাটতি যে এতে স্পষ্ট ছিল অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট আন্দোলন সেটাই প্রমাণ করেছে। আমাদের দেশেও চলছে ১ শতাংশের লুটপাট, যাকে বলা চলে একরকম হরি লুট। শেয়ার বাজারের বড় খেলোয়াররা কারসাজি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বারবার। প্রতিটি ব্যক্তিমানুষ বা প্রতিটি পরিবারের ভাগে সম্পদ/সুবিধা বাড়াতে হবে, তাদের প্রতিদিনকার জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য বাড়াতে হবে তবেই কেবল একটি রাষ্ট্র তার উন্নয়ন নিয়ে আশাবাদী হতে পারে। নইলে রাষ্ট্র যদি মুষ্টিমেয় মানুষের আকাশচুম্বী সম্পদ অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয় তবে তার পরিণাম কী ভয়াবহ হয় সাম্প্রতিক আন্দোলন তারই বড় নমুনা! রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য কেবল মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে সম্পদ তুলে দেওয়ার আয়োজন করা নয়। বড় ব্যবসায়, বৃহৎ কর্পোরেশন, বিশাল মুনাফা সামগ্রিক অর্থে রাষ্ট্রের কল্যাণে আসবে না যদি না তা সাধারণ প্রান্তিক আর দরিদ্র্য মানুষের জীবন-জীবিকা পরিবর্তনে ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে।

সবার জন্য সুযোগের সমান সমতট নির্মাণ করাই একটি মানবিক রাষ্ট্রের লক্ষ্য হওয়া উচিত। দরকার সক্ষম প্রতিষ্ঠান যাদের থাকবে জবাবাদিহি, শিক্ষা ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধ উৎস এভাবেই নির্মাণ হতে পারে টেকসই ও স্থিতিশীল সমাজ; এজন্য সামাজিক নিরাপত্তা জালের আওতা বাড়ানো, মানবিক সক্ষমতা বাড়ানো এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনমান বাড়ানোর কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ সমস্ত সম্পদ কিছুর হাতে আর কিছু সম্পদ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের হাতে নৈতিকতার বিচারে কোনো বিবেকবান মানুষের কাছে তা ন্যায্য হতে পারে না; চলমান এই আন্দোলনের ডাকে সাড়া না দেওয়াটাই বরং অন্যায় হবে।

রোবায়েত ফেরদৌস: সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

robaet.ferdous@gmail.com

বাংলাদেশ সময় ২৩০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।