ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

‘কিসেরও লাগিয়া’-এক

আবিদ রহমান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১১
‘কিসেরও লাগিয়া’-এক

বাজারে তীব্র গুঞ্জন ছিলো জনপ্রিয়তার ধস নামায় বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভায় রদরদল করে ইমেজ পুনরুদ্ধারে নামছে। গুজব-গুঞ্জন মিথ্যে বলে প্রমাণিত হয়েছে; মন্ত্রিসভায় কোনও রদবদল হয়নি।

কেবল মন্ত্রিসভার আকার বেড়েছে। জাতি দুজন নতুন মন্ত্রী পেল। আগে মন্ত্রিত্ব না থাকলেও উনারা মন্ত্রীদের চেয়ে কম ক্ষমতাধর ও দাপুটে ছিলেন না। ক্ষমতা ও প্রভাবে আনুষ্ঠানিক লেবেল আঁটা হলো মাত্র। একজনের পদোন্নতি ঘটেছে। বির্তকিত ও ব্যর্থরা দিব্যি গাড়িতে পতাকা লাগিয়ে দাপটের সাথে বহাল তবিয়তে। এই সংযোজন ও পরিবর্ধন কিসের জন্যে? কী অর্জনের স্বার্থে? জাতির কতটুকু উপকারে আসবে এই সংযোজন? দলের সাংগঠনিক কাঠমোকে শক্তিশালী কিংবা অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চায় কিংবা দলকে গণমুখি করতে কী উপকারে আসবেন এই বাড়তি মন্ত্রীরা

বাংলাদেশের গণতন্ত্র আয়ুর্বেদী সালসার মতো বিভিন্ন ‘বিরল প্রজাতির’ লতাপাতা ও গাছগাছালিতে তৈরি ককটেল। ’হেকিম’ ভিন্ন অন্য কেউ রসায়নের ফর্মূলা অবগত নহেন। ` জাতীয়তাবাদী শিবিরে গণতান্ত্রিক সালসার মূল উপকরণ এক পরিবারের তিনটি ছবি, যেন একটি পরিবারকে পৃষ্ঠপোষকতাই গণতন্ত্র! জাতির মুক্তি। গণতন্ত্রের লেবাসধারী ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ‘নির্ভীক ও নিবেদিত’ নেতা-কর্মীরা পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠাতেই খোঁজেন প্রশান্তি ও অর্জন।

সেদিন ‘বাংলাদেশের দুর্নীতিগ্রস্থ গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ’ তারেক রহমানের জন্মদিনের কেককাটা অনুষ্ঠানে ’গণতন্ত্রের আপোসহীন জননী’ বেগম জিয়াকে হাতের কনুইতে পাশে সরিয়ে রাজনীতির দল বদলের সব্যসাচী মওদুদকে দেখলাম ছবিতে কেক কাটতে। বাংলানিউজের আরেক ছবিতে দেখলাম ‘বিনয়ে’ প্রায় হাঁটু গেড়ে তারেক রহমানের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়েও মওদুদ ব্যস্ত। পীর-আওলিয়ার সামনেও এতোটা নতশির থাকেন না কোনো নিবেদিত অন্ধ মুরীদ।

আওয়ামী গণতন্ত্রেও আত্মীয়তার ক্রিশ্চিয়ান ডিওরের মৌ মৌ। দল ও সরকারের সব গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবার, আত্মীয় ও তস্য আত্মীয়দের ভীড়। বাদবাকীদের কিছু কদমবুচির । কিছু `গিভ অ্যান্ড টেক`-এর। `ব্যর্থতা` কিংবা `দুর্নীতিগ্রস্ত` বলে আওয়ামী অভিধানে কিছু নেই। আগামী নির্বাচন অবধি জনমত ও জনরায়কে গ্রাহ্য করার মতো বেকুব নয় আওয়ামী নেতৃত্ব! পাঁচ বছরের ম্যান্ডেটের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও ব্যালান্সশিট লাল অংকের ঘরে। চূড়ান্ত ব্যালেন্সশিটের আগে ক্যালেন্ডারের পাতায় মাত্র চব্বিশ মাস, এর মধ্যে নির্বাচনী ওয়াদা পূরণসহ ভোটারদের আস্হা তৈরির কাজটি করতে হবে। শুরুটা  করতে হবে তৃণমূল থেকে। কিন্তু তৃণমূলে আওয়ামী অস্তিত্ব নাই বললেই চলে। তৃণমূল পর্যায়ে যারা আওয়ামী ঝাণ্ডা হাতে দাঁড়িয়ে, তাদের ইমেজ ছাত্র-যুবলীগের মতোই চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসে উজ্জ্বল।

ঢাকার বাতাসে গুজব ‘মুখ-বোমা’ বন্ধের জন্যেই দুই নতুন মন্ত্রীকে ঠাঁই দেয়া হয়েছে ক্যাবিনেটে। মুখ-বোমা জনগণের কী উপকারে লেগেছে? শেয়ার বাজার কেলেংকারীর হোতাদের কি হটিয়ে দেয়া হয়েছে? নাকি শায়েস্তা হয়েছেন ‘দরবেশেরা’, শুটকির হাটের বিড়াল  চৌকিদারের? অর্থমন্ত্রীর মুখে কি কোনো কুলুপ এঁটে দেয়া হয়েছে? কিছুই হয়নি। হবেও না। পুরোটাই ভাগ-যোগের খেলা। নিখাদ আইওয়াশ ।   মন্ত্রিসভা রদবদলের সাবেকি গুজব-গুঞ্জনে মানুষ কিছুদিন ঝিম মেরেছিলেন প্রত্যাশায়।  

আগামীতে আরেক দফা মন্ত্রিসভা রদরদলের আশা জাগিয়ে জনগণকে সন্তুষ্ট রাখার তীব্র চেষ্টা হচ্ছে। মন্ত্রিত্ব না-পাওয়ার বেদনায় কাতরদের রক্তাক্ত হৃদয়ে মালিশ দেওয়া হচ্ছে ক্ষমতার  ‘টাইগার বাম’ দিয়ে। কিন্তু জনগনের  স্বার্থ ও আকাঙ্ক্ষার সাথে এগুলোতো সম্পর্কহীন।

নারায়ণগঞ্জবাসীর দেওয়া গণরায়ের কথা ভুলে যাওয়াটা হবে বোকামি। চুনকার মেয়ে কিংবা সাবেক সফল মেয়র হিসেবে আইভী জেতেননি। আইভী জিতেছেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দেয়া গণ রায়ে। নারায়ণগঞ্জবাসীর ভোট জানিয়ে দিয়েছে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষদের মতামতকে গ্রাহ্য করতে হয়।

দলীয় সরকারের অধীনে সাজানো প্রশাসন দিয়ে নির্বাচনে জেতার দিবাস্বপ্ন বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগকে জনগণের আস্হার্জনে নিবেদিত হতে হবে। কারণ এরা রাক্ষসের হাত থেকে বাঁচার জন্যে খোক্কসের ফাঁদে একবার পা দেয়। অন্যবার আবারো একই ভুল করে চোখের জলে বালিশ ভেজায়। দুই দলীয় ও পারিবারিক প্রভুর গোলামিতেই বাঙালি আটকে থাকে।

ইমেলঃ abid.rahman@ymail.com
 
বাংলাদেশ সময় ১১২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।