ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

দুঃখিত সৈয়দ আবুল মকসুদ

ফজলুল বারী, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১১
দুঃখিত সৈয়দ আবুল মকসুদ

দুঃখিত জনাব সৈয়দ আবুল মকসুদ ভাই, হরতাল সমর্থন করে আপনি ও আপনাদের কতিপয়ের লেখাটির জন্য। উদ্দেশ্য যত মহান হোক হরতালের নামে দেশের কাজ বন্ধ রাখার পক্ষে আপনারা যে অবস্থান নিলেন, তা আত্মঘাতী।



আপনাদের এ পদক্ষেপ মানতে পারলাম না বলে দুঃখিত। হরতাল বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ভূমিকা রেখেছে, গণতন্ত্র অর্জনেও বলে যে চলতি হরতালওয়ালাদের পক্ষ নিলেন, তাদেরকে মূল দিশা-নিশানা যে কোন মূল্যে ছলেবলে কৌশলে মানবতাবিরোধীদের বিচার ঠেকানো, এ বিষয়টি সবাই বুঝলেও আপনারা বোঝেন না! এটি অবিশ্বাস্য। ভাবতে কষ্ট হয়। এরপর যদি আরেক পক্ষ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকারীদের পক্ষালম্বনকারীদের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকে, জনস্বার্থের মনে করে তাদের হরতালেও কী সমর্থন জানিয়ে লিখবেন?বা আজকের সরকারিদল আগামীতে বিরোধীদলে যাবার পর তাদের কোন মহান(!) হরতাল সমর্থন করে লেখা উচিত হবে?

তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরের মর্মান্তিক মত্যুর পর যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদের নেতৃত্বে নাগরিকদের শহীদ মিনারে প্রতিবাদী ঈদ উদযাপন কর্মসূচিকে সমর্থন করেছি। সিডনি থেকে ফোন করে সমর্থন জানিয়ে বলেছি, জনস্বার্থের এমন কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যান। আমরা আছি। এরপর প্রধানমন্ত্রী যখন এই নিরীহ ভদ্রলোক নাগরিকদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা লাগানোর অকল্পনীয় বিধবংসী একটি কাজ করেন, তখন এর নিন্দা-বিরোধিতা করে লিখেছি। এরপরও সরকার নাগরিক এসব কন্ঠের আওয়াজ না শুনলেও সৈয়দ মকসুদের সাদা পোশাকটির মতোই অবস্থান ধর্মঘট-মানব বন্ধনের মত প্রশংসনীয় অহিংস কর্মসূচি বহাল রাখা হয়। কিন্ত কখনো হরতাল ডাকা হয়নি।
 
এরপর হঠাৎ করে আরেকটি নাগরিক সংগঠনের জন্ম দেওয়া হয়। কর্মসূচির প্রয়োজনে সংগঠনের প্রয়োজন আছে। বিপদও আছে এর। আওয়ামী লীগ, বিএনপি অথবা অ্যান্টি আওয়ামী লীগার যাদের নিয়ে সংগঠনটি হয়েছে তাদের কারও কারও অতীত ফুলের মতো পবিত্র নয়। যাদের উদ্দেশে কথাটি বলা তারা নিঃসন্দেহে তা বুঝেছেন। সংগঠন ছাড়াও নানা ইস্যুতে জাতির বিবেকের মতো কথা বলা বা দায়িত্ব পালন করা যায়। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ড আকবর আলী খান, ড জাফর ইকবাল সহ আরও অনেকে সে ভূমিকাটি রেখে চলেছেন।
 
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে  গণতন্ত্র অর্জনেও ভূমিকা রাখা হরতালের এখন আর যে গণমুখি চরিত্র নেই, সরকারি-বিরোধীদল সুবিধামতো যারে যেখানে পায়, হিংস্র মারামারি, পাবলিকের কষ্ট, সম্পদ নষ্ট, সরকারকে সাইজ করতে গিয়ে উল্টো দেশ সাইজ! এমন নানা কারণে হরতাল নামের রাজনৈতিক কর্মসূচিটি ক্রমশ শুধুই যে সর্বনাশের পথে ধাবমান, বাংলাদেশের ঘাড়ে চলমান বিষফোঁড়ায় এটি যে শুধু ইনফেকশনই বাড়ায়, সৈয়দ মকসুদদের মতো বিদগ্ধজনদের এসব বিষয়ে জ্ঞান দেওয়া কী মানায়?
 
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে ভাগ করা নিয়ে সরকারি উদ্যোগে অনেক সমস্যা-অন্যায় আছে। নারায়ণগঞ্জের ভোট বিপ্লবের নেত্রী ডা সেলিনা হায়াত আইভী সংক্ষেপে এর একটা দিক চমৎকার সামনে নিয়ে এসেছেন। তাহলো সরকার যেখানে অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়কের বদলে আগামী নির্বাচন নির্বাচিতদের নেতৃ্ত্বে করার কথা বলছে সেখানে সিটি নির্বাচন কেন অনির্বাচিত প্রশাসক গদিনশীন করে হবে? ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে এভাবে বিদায় করাকে সমর্থন করেননি নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী।
 
এই বিভক্তি নিয়ে সরকারি দায়িত্বশীলদের ভাষাগত অসতর্কতার কারণে সৃষ্টি হয়েছে আরেক সমস্যার। তাহলো ঢাকায় দুটি সিটি কর্পোরেশনের সৃষ্টি অথবা বিভক্তির নাম ঢাকাকে ভাগ করা বলা হবে কেন। সিডনির জনসংখ্যা ঢাকার চেয়ে অর্ধেকের কম। কিন্তু এখানে ১৪ টি সিটি কর্পোরেশন। কই কেউত এর জন্যে বলে না সিডনি চৌদ্দভাগ! দেশের সাবেক ১৯ জেলা এখন ৬৪ জেলা। সাবেক চার বিভাগের জায়গায় ৭টি। অনর্থক বিভাগের পক্ষে দেশে আবার জনপ্রিয় আন্দোলন হয়! প্রতি বছরই দেশে ইউপি-পৌরসভার সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকায় দুটি সিটি কর্পোরেশন হচ্ছে। বাস্তব কারণে আগামীতে আর কতটা সিটি কর্পোরেশন করা লাগবে? বর্তমান জায়গা থেকে সচিবালয় সহ অনেক স্থাপনা সরানো না গেলে আগামীতে কী আর ঢাকা শহরে হাঁটার মতো অবস্থা থাকবে?

আবুল মকসুদরা ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বিভক্তি নিয়ে সরকারের এই ভাষাগত ত্রুটির জায়গাটি ঠিক করে দিতে পারতেন। উল্টো দিলেন হরতালে উৎসাহ!

যেদেশে রুটিন কাজ হয়না তারপরও কিছু ভাগ্যবান লোকজনের কাজকর্ম করা লাগেনা, মানুষের কাজ নেই বলেইতো বক্তৃতা শোনার জন্য এত লোকজন পাওয়া যায় যত্রতত্র! সেদেশে আবার অফিসিয়েলি আহবান জানিয়ে কাজ না করতে বলা, এটিও যে কতবড় অন্যায়-দুর্নীতি, এর বিরুদ্ধে যাদের সোচ্চার প্রতিবাদ গড়ার কথা, সেখানে তারা বলছেন, আজকেরটারে সমর্থন দিলাম। এরমানে কিছু হরতাল উপকারী-স্বাস্থ্যসম্মত। কিছু নয়!

বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগ যেসব হরতাল করত, আওয়ামী সেগুলোকে যৌক্তিক-উপকারী বলত। আজ যেমন বলছে বিএনপি। আগামীতে আওয়ামী লীগ যখন হরতালের বিধবংসী রাজনীতির জায়গায় ফিরে যাবে, এর নিন্দা-বিরোধিতা করার জায়গাটি কেন এভাবে ভোঁতা-নষ্ট করা হচ্ছে?

কথাগুলোর লেখার কারণ আমাদের একজন সৈয়দ আবুল মকসুদ তৈরি হতে সময় লাগে। তা লেখার শরীক কারও কারও সুবিধামতো রং বদলাতে সময় লাগবে না। অতীতেও লাগেনি। এই বর্ণচোরাদের নিয়ে তৈরি সমস্যার ভুক্তভোগী যা হবার তা আবুল মকসুদ ভাইর’ই হতে পারে।
 
ফজলুল বারীঃ সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক।  

বাংলাদেশ সময় ১৩১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।