ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

ভোটার উপস্থিতিহীনতা ও গান্ধী হত্যাকারীর মূর্তি

নঈম নিজাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২০
ভোটার উপস্থিতিহীনতা ও গান্ধী হত্যাকারীর মূর্তি

একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম বৃহস্পতিবার রাতে। হঠাৎ এক ভদ্রলোক আমার সামনে এলেন। বললেন, ভাই! সিটি ভোটের ফলাফল কী হবে? বললাম, আগে ভোট হোক, তারপর ফলাফল। এত আগে কী করে সব বলি! ইভিএমে ভোটাররা অংশ নেবে। ভোট দেবে। ভদ্রলোক এবার বললেন, ভোটাররা যেতে পারবে তো? আমি বললাম, কেন পারবে না! আমরা সবকিছুতে আগেভাগে হতাশ হয়ে উঠি।

আগাম কথা না বলে বাস্তবতায় থাকাটাই ভালো। আমার কথায় ভদ্রলোক খুশি হলেন না।

বললেন, আমি ভোট দিতে যাব না। ইসির প্রতি আস্থা নেই। পরিবার-পরিজন আছে। নিরাপত্তা নিয়ে ভাবনা আছে। তাই যাব না। আপনারা মিডিয়ার লোক। একটা কথা শুনুন, মানুষ আস্থা হারিয়েছে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি। ইনস্টিটিউটগুলো শেষ হয়ে গেলে রাষ্ট্র ভীষণভাবে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সময়টা চলছে। এটা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত ভোট হবে। কিন্তু ভোটাররা যাবে না কেন্দ্রে। আমি বললাম, ঠিক বলেছেন। কিন্তু সবাইকে বাস্তবতায় থাকতে হবে। আপনি কেন্দ্রে যাবেন না তাহলে কীভাবে সব স্বাভাবিক হবে? সবাইকে দায়িত্ব নিয়েই এগিয়ে আসতে হবে।

জবাবে এবার ভদ্রলোক বললেন, কেন্দ্রে যেতে নিরাপত্তা কে দেবে? সবাই ভাবেন আমার কিছু হলে সন্তানদের কী হবে। ভোটের পরিবেশ নিয়ে বড় চিন্তা। চট্টগ্রামের উপনির্বাচনের মতোই হবে ঢাকার ভোট। সাধারণ ভোটাররা যাবে না। এখানে আস্থাটা বড় কথা। সেই আস্থাটা নষ্ট হয়ে গেছে। ঠিক হতে সময় লাগবে আরও ১০ থেকে ১৫ বছর। বললাম, দেখেন, এভাবে ভাবলে তো হবে না। এক দিনে সবকিছু এমন হয়নি। অতীতেও ভোটের মাঠে হোন্ডা-গুন্ডা সব ছিল। এখন সময় বদল হয়েছে। ভোটের প্রতি আস্থাহীনতা তৈরির দায়ভার কারও একার নয়। এখানে সবার ভুলই কমবেশি দায়ী।

এবার ভদ্রলোক বললেন, ঠিক বলেছেন। কিন্তু আমরা একটা জটিল সময় পার করছি। রাষ্ট্র, সরকার, সমাজের বিভিন্ন স্তর এখন প্রশ্নবিদ্ধ। সাধারণ মানুষ হতাশ। এ কারণে তারা ভোট কেন্দ্রে যেতে চায় না। ঘাটে ঘাটে এখন সুবিধাভোগীদের উৎপাত। এবার বললাম, সবকিছু এক দিনে ঠিক হবে না। সময় লাগবে। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে অবশ্যই। ধৈর্য ধরতে হবে। এবার ভদ্রলোক বললেন, ভাই! শুনুন, চারদিকে সব সুযোগ-সন্ধানীর ভিড়। এই অতিউৎসাহীরাই সর্বনাশটা করে থাকে নীরবে। বারোটা বাজিয়ে দেয় সবকিছুতে। এই সুবিধাবাদীরা কথায় কথায় আদর্শিক নীতিমালা ঝাড়ে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বুলি আওড়ায়। মুজিববর্ষ বলে বক্তৃতা দেয়। বাস্তব জীবনে তাদের টার্গেট বাণিজ্য করে যাওয়া। এতে সর্বনাশটা হয় দল ও দেশের। এ কথাটি আমরা অনুধাবন করি না। আর করি না বলেই সমস্যা তৈরি হয়।

এবার বললাম, আমি সব সময় আশাবাদী মানুষ। বাংলাদেশ পুরোপুরি সম্ভাবনার। এ দেশ এগিয়ে চলছে। বঙ্গবন্ধুর সত্যিকার আদর্শ বাস্তবায়ন হলে অবশ্যই আমরা এগিয়ে যাব। তা ছাড়া সবখানে ভালো-মন্দ আছে। তিনি বললেন, একমত আপনার সঙ্গে। কিন্তু মনে রাখবেন, বঙ্গবন্ধু এ জাতিকে দেশ-বিদেশে আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকা শিখিয়েছেন। আমাদেরও আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে হবে। দাসত্ব নয়, মানুষ হিসেবে বাঁচতে হলে মর্যাদা নিয়ে থাকতে হবে। কথা বাড়ালাম না। বিয়ের অনুষ্ঠানে এত আলাপ ঠিক নয়। তিনিও চলে গেলেন। আমিও সরে এলাম খাওয়ার টেবিলে।

ঢাকা সিটিতে আমি ভোটার নই। আমি কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের ভোটার। শুক্রবার রাতে গুলশানে এক আড্ডায় অনেকের সঙ্গে দেখা হলো। সবার এক কথা, ভোট দিয়ে কী হবে? ফলাফল জানা কথা। এত হতাশা কেন নগরবাসীর মাঝে, বুঝতে পারি না। একজন সংবাদকর্মী হিসেবে শনিবার সকাল থেকে ভোটের খোঁজখবর রাখছি। ভোটার উপস্থিতি নজিরবিহীন কম। গত কয়েক দিন থেকে যে আভাস পাচ্ছিলাম বাস্তবেও তাই দেখলাম। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারের লাইন নেই। তবে কিছু কেন্দ্রে ভিতরে সুনসান নীরবতা। কেন্দ্রের বাইরে মহড়া। অনেকটা ওপরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট! ভাবলাম, দুপুর গড়ালে পরিবেশ স্বাভাবিক হবে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে।

দুপুরের দিকে টেলিভিশনগুলোয় লাইভ দেখছিলাম। কিন্তু ভোট কেন্দ্রের চিত্রের বদল নেই। ভোটের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সাধারণ মানুষ। কেন এমন হলো? এবার সব দলই ব্যাপকভাবে প্রচারণায় অংশ নিয়েছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপির কর্মীর ঢল দেখেছি প্রার্থীদের সঙ্গে। মনে হলো উভয় দলের কর্মীরাও ঠিকভাবে কেন্দ্রে যাননি। নতুন করে সবকিছু ভাবনার বিষয়। ভোট আমাদের দেশে চিরচেনা উৎসব। এবার ঢাকা সিটি ভোট উৎসবে ভাটার টান। এর কারণ রাজনৈতিক কর্মীদের হতাশা আর সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা উৎকণ্ঠা। আগামীতে এ উৎকণ্ঠার অবসান কীভাবে হবে জানি না।

কবিগুরু বলেছেন, ‘দাও হে আমার ভয় ভেঙে দাও। আমার দিকেও মুখ ফিরাও। ’ এই মুখ ফেরাতে হলে সতর্কতা আনতে হবে ঘাটে ঘাটে।

স্রোতে সবাইকে গা ভাসিয়ে দিলে হবে না। কোনো অন্যায়কে দীর্ঘমেয়াদে স্থায়িত্ব দিতে বঙ্গবন্ধু দেশটা স্বাধীন করেননি। সারাটা জীবন বঙ্গবন্ধু লড়েছেন অসহায় মানুষের জন্য। আবার দুই হাত ভরে ভালোবাসাও পেয়েছেন মানুষের। সাড়ে ৭ কোটি মানুষ তাঁর এক নির্দেশেই পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে খালি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নয় মাস যুদ্ধে জয়লাভও করে। দুনিয়ায় এমন উদাহরণ দ্বিতীয়টি নেই। বঙ্গবন্ধু একজনই। মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য জীবন-মৃত্যুর পরোয়া করেননি। মানুষের আস্থার শেষ ঠিকানাই ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর এক হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, আরেক হৃদয়ে ছিলেন নজরুল। দ্রোহ ও সৃষ্টিকে বঙ্গবন্ধু একসঙ্গে দুই চোখ দিয়ে দেখতেন। একদিকে করতেন অন্যায়ের প্রতিবাদ, অন্যদিকে সৃষ্টিকে জাগিয়ে ভাবতেন কীভাবে দেশ গড়বেন। সেই নেতার ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই দেশে যা খুশি তা চলতে পারে না।

ব্যাংক ও শেয়ারবাজার লুটেরাদের দাপুটে চেহারা দেখতে দেখকে মানুষ ক্লান্ত। আমলাদের লাগামহীন ঘুষ-দুর্নীতির উৎসব আর লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ জিম্মি অফিস-আদালতে। অবসর নিয়েও তারা ব্যস্ত নানাভাবে ক্ষমতায় থাকা নিয়ে। তাই মুজিববর্ষ হোক বাংলাদেশের বঞ্চিত খেটে খাওয়া মানুষের জন্য। জেগে উঠুক নতুন চেতনা। ফিরে আসুক সবখানে স্বাভাবিকতা।   শুধু মুজিববর্ষ, মুজিববর্ষ বলে চিৎকার করলে হবে না, বাস্তবতায় থাকতে হবে। মানুষের মাঝে হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নকে জাগিয়ে দিতে হবে। এ বছরটিকেই নিতে হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের জন্য। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে বঙ্গবন্ধুর সত্যিকারের আদর্শ বাস্তবায়নে।

বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করতে হলে, জানতে হলে, তার আত্মজীবনী পড়তে হবে। সারা জীবনের আত্মত্যাগ সামনে রাখতে হবে। মুজিব আদর্শের কথা মুখে নয়, বাস্তবে প্রকাশ ঘটাতে হবে। অন্তরে লালন করতে হবে। কল্পনার সমুদ্র তৈরি করে মুখে বুলি আওড়ালে চলবে না। মানুষ এখন সস্তা চিন্তাধারাকে ভালো চোখে দেখে না। একদিকে আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলব, অন্যদিকে যার যা খুশি তা করবো, দুটো একসঙ্গে চলতে পারে না। বাস্তবমুখী চিন্তাধারার বাস্তবায়ন দেখাতে হবে এই বছরে। বয়কট করতে হবে লুটেরা, খলনায়ক, দুর্নীতিবাজদের। অপরাধীকে দাঁড় করাতে হবে আদালতের কাঠগড়ায়।

ব্যাংক, বীমা, রেমিট্যান্স, বেসরকারি খাতকে উৎসাহ প্রদানসহ বিভিন্নভাবে থমকে যাওয়া অর্থনীতির গতি ফিরিয়ে আনতে হবে। নতুন নতুন পরিকল্পনায় বদলে ফেলতে হবে বাংলাদেশকে। জেলা ও বিভাগীয় শহরকে ঢেলে সাজাতে হবে নতুন অর্থনৈতিক চিন্তাধারায়। অতি উৎসহী, হঠাৎ গজিয়ে ওঠা ব্যক্তিরা মুজিববর্ষকে লোক দেখানোতে রাখার চেষ্টা করবে। কিন্তু সবারই মনে রাখা দরকার, আজব আজব কর্মসূচিতে বঙ্গবন্ধুর নতুন করে জেগে ওঠার কিছু নেই। বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ শব্দটি থাকলে বঙ্গবন্ধুও থাকবেন। আর বাংলাদেশ না থাকলে বঙ্গবন্ধু কীভাবে থাকবেন? বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির হৃদয়ের মণিকোঠায় ছিলেন, আছেন, থাকবেন। তাই মুজিববর্ষ বলে চিৎকার না করে বঙ্গবন্ধুর নামে নতুন করে শপথ নিন। অন্যায়কারীদের বয়কট করুন। অনিয়মে জড়িতদের বিচার করুন। রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ঐতিহ্য ধরে রাখুন। তাহলে আদর্শের রাজনীতির জয় হবে। বঙ্গবন্ধুর আত্মা শান্তি পাবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে গতিময়।

এখন দরকার সুনির্দিষ্ট দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা। যা করতে হবে দুর্নীতিমুক্তভাবে, রকেট গতিতে। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য চীন ৪৮ ঘণ্টায় একটি হাসপাতাল নির্মাণ করেছে! এখন করছে আরও দুটি। চাইলে মানুষ সবকিছুই করতে পারে। আন্তরিক চেষ্টার ওপর নির্ভর করে সবকিছু। শুধু নিতে হবে গোছানো, বাস্তবমুখী পরিকল্পনা। শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি খাতেও কাজ হতে পারে। দেশে রাজা-উজির মারা লোকের সংখ্যা বেশি। কাজের লোকের সংখ্যা কম। চাটুকাররাই লম্বা লম্বা কথা বলে। কিন্তু তারা বাস্তবমুখী কাজ করতে পারে না। ২০২০ হোক বাস্তবমুখী, দ্রুত পরিকল্পিত উন্নয়নের স্বাভাবিকতার একটি বছর। আমাদের সব প্রতিষ্ঠানে ফিরে আসুক স্বাভাবিকতা। শপথ হোক দেশটাকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নেওয়ার। মানুষের আস্থাহীনতায় কোনো আনন্দ থাকতে পারে না। কারণ বহতা এই জীবনে রাজনীতির নদী কখন কোথায় গিয়ে ঠেকে কেউ জানে না।

আজ যা কিছু ভালো কাল তা না-ও থাকতে পারে। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে লুকিয়ে আছে অনেক অজানা কষ্ট। সেই কষ্টে সাজানো বাগানটা তছনছ হতে কতক্ষণ। মানুষের মন বদল হয় ক্ষণে ক্ষণে। এবারকার সিটি ভোটে তারই কিছু নজির দেখেছি। সাধারণ ভোটারদের মনোভাব রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য ভালো কিছু নয়। রাজনীতি হলো জনগণের জন্য। জনগণ তাতে সাড়া না দিলে কার কী করার থাকে? এক ধরনের আস্থাহীনতা, অবিশ্বাসের প্রকাশ ঘটিয়েছে মানুষ। এ আস্থাহীনতা নির্বাচন কমিশনের প্রতি। জীবন সংসারে একবার আস্থাহীনতা তৈরি হলে তা আর সহজে শেষ হতে চায় না। দীর্ঘমেয়াদে এর খেসারত দিয়ে যেতে হয় সবাইকে। ধরেই নিলাম বিএনপি কর্মীরা কেন্দ্রে যাননি মামলা-হামলার ভয়ে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সমর্থকরা কেন যাবেন না? সাধারণ মানুষের কথা বাদই দিলাম।

জানি এ কথাগুলো কারও ভালো লাগবে না। সত্য কথা কেউই শুনতে চায় না এ যুগে। বড় অদ্ভুত এক যুগ পার করছি। দেশে দেশে অসভ্য কাজগুলো সবাই নির্বিকারচিত্তে করে। মানুষের লাজলজ্জা বলে কিছু আর বাকি নেই। ভারতে মহাত্মা গান্ধীর খুনির মূর্তি বানানো হচ্ছে। ভুলে গেছে সবাই ৩০ জানুয়ারি, ১৯৪৮ সালের কথা। দিল্লির বিড়লা হাউসে প্রার্থনায় যাচ্ছিলেন মহাত্মা গান্ধী। হঠাৎ তার সামনে এসে দাঁড়ালেন নাথুরাম গডসে। ঝুঁকে মাথা নিচু করে প্রণাম করলেন। ভক্তরা যা করে থাকেন। মহাত্মা গান্ধীও তাকে আশীর্বাদও করলেন। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে সব পরিবেশ বদলে গেল। পরপর তিন রাউন্ড গুলির শব্দ। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ভারতের জাতির জনক। খুনি নাথুরামের ফাঁসি হয়েছিল। ইতিহাসের কি নিষ্ঠুরতা! সেই ভারতেই এখন গান্ধীর খুনি নাথুরাম গডসের নামে মন্দির নির্মাণ হচ্ছে। কাজটি করছে হিন্দু মহাসভা। তাদের অফিস গোয়ালিয়রে আনন্দ নিয়ে এ ভয়ঙ্কর কাজটি হচ্ছে। সন্ধ্যায় আরতির পর প্রসাদ বিতরণ হয় অনুষ্ঠানে। সবকিছুর সীমা থাকা দরকার। কিন্তু লাগামহীন এই কাজে প্রত্যক্ষ মদদ দেয় মধ্যপ্রদেশের বিজিপি। কংগ্রেস সরাসরি এ নিয়ে অভিযোগও করে বিজিপির বিরুদ্ধে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! বরং হিন্দু মহাসভার এক নেতা তো বড় গলায় নাথুরামের পক্ষে কথাও বলেছেন।

নষ্ট সমাজের একটা বিশ্বে বাস করছি আমরা। কী ভারত, কী বাংলাদেশ, কী আমেরিকা- সবখানে এক চিত্র। এ যুগটা ভালো মানুষের জন্য না। চাটুকার, তোষামোদকারী, বিকৃত চিন্তার মানুষই সবখানে দাপুটে। হিংসা-বিদ্বেষ সব সময় ছিল। অন্যায়-অসংগতিও সর্বকালে কমবেশি ছিল। কিন্তু এখন সব রেকর্ড ভঙ্গ হচ্ছে। এ দুনিয়ায় কিছু মানুষ ধ্বংস করে, আবার কিছু মানুষ সৃষ্টি করে। মানবতার পক্ষে কেউ জীবন দেয়, আবার কেউ আনন্দ পায় মানবতাবিরোধী কান্ড ঘটিয়ে। কিছু নষ্ট মানুষের কাছে সাধারণরা জিম্মি। কবিগুরু বলেছেন, ‘মনেরে আজ কহ যে, ভালো মন্দ যাহাই আসুক, সত্যেরে লও সহজে। ’ আমরা সহজে বাস্তবকে মেনে নিচ্ছি। বারবার সব অন্যায়কে হজম করে নিচ্ছি। শত সংকটেও বুকের ভিতরের পাথরকে আড়াল করে চেষ্টা করছি আশার আলোকে জাগিয়ে রাখতে। জালালুদ্দিন মুহাম্মদ রুমি বলেছেন, ‘ভোরের মৃদু হাওয়া তোমাকে পরশ বুলিয়ে কিছু বলে যায়, শোনার চেষ্টা কর সে কী বলতে চায় তোমাকে। দেখ আবার ঘুমিয়ে পোড়ো না। ’

লেখক: সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।