ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ পৌষ ১৪৩১, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

নিখিলের পঙ্গুত্ব ও পথে পথে মৃত্যুর ফাঁদ

সাইফ বরকতুল্লাহ, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১১
নিখিলের পঙ্গুত্ব ও পথে পথে মৃত্যুর ফাঁদ

ঘটনা : ১
বুধবার সকাল সাড়ে নয়টায় প্রেস ক্লাবের উল্টো দিকে বিএমএ ভবনের সামনে বিআরটিসির একটি বাস নিখিল ভদ্রকে চাপা দেয়। বাসটি তার পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়।

গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার ডান পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত কেটে ফেলে। পরে মারাত্মক আহত অবস্থায় তাকে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। বিআরটিসির বাস চাপা দিয়ে সাংবাদিক নিখিল ভদ্রকে পঙ্গু করার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সাংবাদিকরা দফায় দফায় মিছিল করছেন। [সূত্র: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.ডটকম]

ঘটনা : ২
মেহেরিস- বয়স সাত মাস। পৃথিবীর কোন কিছুই না বুঝলেও রক্তের টানে অন্যদিনের মতো খেলায় মেতে ওঠার বদলে নিরব এখন। আর স্বামী হারানোর শোকে পাথর স্ত্রী সারাফ আনিকা। আর্তনাদে গোটা বাড়ির বাতাস ভারী। এতক্ষণ বলছিলাম, কক্সবাজারের চকোরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানকের ছেলে সায়েম-উর রহমান সায়েমের কথা। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম আসার পথে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফাঁসিয়াখালী এলাকায় চালকের আসনে বসা চাকা ফেটে সায়েমের মাইক্রোবাস একটি সেতুর সাথে ধাক্কা লেগে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায় এবং তাতে আগুন ধরে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান সায়েম। নানকের শ্যালক সৈয়দ গোলাম পিউ এবং এনটিভির ভিডিও এডিটর এনামুল কবীরও এ দুর্ঘটনায় আহত হন।

ঘটনা : ৩
শনিবার (১৬.০৭.২০১১) সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় সারাদিন বাসায় ছিলাম। দুপুর ২টার সংবাদ দেখার জন্য টিভিটা অন করলাম। রিমোট ঘুরিয়ে সময় টিভিটা টিউন করলাম। সংবাদের শুরুতেই মনটা বিষাদে ভরে গেল। হেডলাইনের শুরুতেই সময় টিভির যুগ্ম বার্তা সম্পাদক বেলাল ভাইয়ের মৃত্য সংবাদ। আজ বড়ই কষ্ট হচ্ছে। প্রিয় সন্তান, স্বামী-স্ত্রী, স্বজন, প্রতিবেশী, সহকর্মী যে কেউ ঘর থেকে বেরিয়ে নিরাপদে আবার ফিরবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ঘরের বাইরে রাস্তায় বেরুতেই যেন মৃত্যুর হাতছানি। সড়ক দুর্ঘটনা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে স্বাভাবিক মৃত্যুর কোনো গ্যারান্টি নেই। এ দুঃসংবাদ এখন যেন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে।
 
এমন কোনো দিন নেই যে, রাজধানীসহ দেশের কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনায় ১০/১৫ জনের মৃত্যুর খবর নেই। অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর মিছিলে প্রতিদিনই যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। ঝরে যাচ্ছে মূল্যবান প্রাণ। প্রিয়জন হারানোর বেদনায় শোকাতুর পরিবারের বিলাপ আর আহাজারিতে ভারী হচ্ছে বাতাস।
 
নিহতদের স্বজনরা দাবি করেছেন, দিনে দিনে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়া সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে অসময়েই অনেক স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটছে, থেমে যাচ্ছে অনেক পরিবারের গল্প।
 
সারা দেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। দুর্ঘটনার জন্য চালকের অসচেতনতা ও অসতর্কতাকে দায়ী করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে নেই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনারও বাস্তবায়ন নেই।

চিত্র :
সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে স্মরণকালের মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৫ স্কুলছাত্রের অকাল মৃত্যুর ঘটনা গোটা দেশকে নাড়া দিয়েছে। কেঁদেছেন প্রতিটি বিবেকবান মানুষ, অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া। এর রেশ কাটতে না কাটতেই রাজধানীর আগারগাঁও বিসিএস কম্পিউটার সিটির সামনের সড়কে বাসের ধাক্কায় নিহত হয়েছেন সময় টেলিভিশনের যুগ্ম-বার্তা সম্পাদক বেলাল হোসেন। একই ঘটনায় আহত হয়েছেন তার স্ত্রী, শিশু কন্যা ও শ্যালক।

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ব্যবসায়ী, চলচ্চিত্র পরিচালক, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী, পুলিশ, সাংবাদিক, ডাক্তার, আইনজীবী, সচিব, এমনকি সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানও রয়েছেন। এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা থেকে বাদ যাচ্ছেন না কোনো শ্রেণী-পেশার মানুষই।

অতীত ফিরে দেখা :
গত বছর মানিকগঞ্জে মর্মান্তিক সড়ক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন সরকারের দুই যুগ্ম সচিব। এর আগে রাজধানীর কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের এক ছাত্র বাবার হাত ধরে রাস্তা পারাপারের সময় বাসের নিচে চাপা পড়ে মারা যায়। কয়েক মাস আগে নরসিংদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় ১০ পুলিশ সদস্য। কয়েক বছর আগে রাজধানীর বাংলামটর মোড়ে রাস্তা পারাপারের সময় প্রাণ হারান দৈনিক জনকণ্ঠের প্রবীণ সাংবাদিক ইউসুফ পাশা। তার মৃত্যুর পর সেখানে একটি ওভারব্রিজ নির্মাণ করে ঢাকা সিটি করপোরেশন। এর আগে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন চিত্রনায়ক ইলিয়াছ কাঞ্চনের স্ত্রী।

কিন্তু এর কী কোন প্রতিকার নেই ????
এভাবে আর কত ঝরবে প্রাণ ??

প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় কয়েক হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। কত হাজার হাজার সোনার সংসার এতে তছনছ হয়ে গেছে, কত সম্ভাবনাময় জীবনের প্রদীপ নিভে গেছে অকালে। যারা দুর্ঘটনায় মারা গেছে কিংবা স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ববরণ করেছে তাদের পরিবার-পরিজনেরা ছাড়া অন্য কারো পক্ষেই এই দুঃখের বা বেদনার ভার অনুমান করা সম্ভব নয়। নিরাপদ সড়ক চাই-এ ব্যানারে চিত্রাভিনেতা ইলিয়াছ কাঞ্চন দীর্ঘদিন ধরে এক ধরনের আন্দোলন করে যাচ্ছেন; কিন্তু কে শোনে কার কথা। অপঘাতে মানুষের মৃত্যুই বুঝিবা এ দেশের স্বাভাবিক ঘটনা। তাই দেশটি একটি মৃত্যু উপত্যকায় রূপান্তরিত হলেও এর বিরুদ্ধে কোন সামাজিক আন্দোলন গড়ে ওঠে না। সংশ্লিষ্ট মহলের টনক নড়ে না। বরং এক প্রকার বিকৃত অনুভূতি তাদেরকে এসব অব্যবস্থা সহ্য করার প্ররোচনা জোগায়।

গত বছর (২০১০ সালে) সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৪৪৮১জন। যা গড়ে প্রতিদিন ১২ জনেরও বেশি। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৫৫৬৯ জন অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৪২ জনেরও বেশি। দেশের মোট সড়ক দুর্ঘটনার তিন ভাগের মধ্যে দুই ভাগই ঘটছে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলিতে। সারাদেশে মোট ২০৯টি দুর্ঘটনার স্পট আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত পরিবহনের বিপরীতে দেশে অবৈধ চালকের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। অর্থাৎ মোট চালকের ৬১ ভাগেরই নেই কোন বৈধ লাইসেন্স। দোষীদের জন্য নেই কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। আইনের এত ফাঁক-ফোকর আছে যে, সহজেই আসামিরা পার পেয়ে যেতে পারে। ট্রাফিক আইন কেউই মানতে চায় না। পুলিশ তার দায়িত্ব পালন করে না। অভিযোগ এই যে, দুর্ঘটনা ঘটলে বাড়তি কিছু টু পাইস আয়ের ধান্ধায় থাকে তারা। রাস্তার এখানে-সেখানে পুলিশের ছড়াছড়ি অন্য কোন দেশেই চোখে পড়বে না। অথচ এত পুলিশের নাকের ডগায় বেশুমার নানান অপকর্ম ঘটে চলেছে। অন্যান্য দেশে শহরে এত পুলিশ নেই আবার সেখানে যত্রতত্র অন্যায়-অপরাধও ঘটে না। রাস্তায় ট্রাক বা বাস থামিয়ে পুলিশের উৎকোচ নেবার দৃশ্য পত্রিকার পাতায় বা টিভি’র অনুসন্ধানী রিপোর্টে প্রায়শই দেখা যায়, যে উৎকোচ দিচ্ছে আর যে নিচ্ছে তারা উভয়েই মনে করে যে, তারা বৈধ কাজটিই করছে।

মহাসড়কের উপর হাট-বাজার উচ্ছেদ করা যায় না কেন? তারা সেখান থেকে টোল ওঠায়? নসিমন, করিমন, ভটভটি ইত্যাদি কম গতির গাড়ী চলে কাদের সহযোগিতায়? আর এসবই তো হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ। আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও পরিবহনে গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্র লাগাচ্ছে না কেউ। জনবলসহ নানা সংকটে হাইওয়ে পুলিশ জর্জরিত। অভিযুক্ত ৮৩ শতাংশ গাড়ির চালকই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে কাদের কারণে? সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বা বিআরটিএ দুর্নীতি ও অব্যবস্থার আখড়া এমন অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায় সংসদে ও পত্রিকার পৃষ্ঠায়।
 
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, সড়ক দুর্ঘটনার কারণে বছরে আর্থিক ক্ষতি ৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি। হাইওয়েসহ সকল সড়কে নিরাপত্তা ঘাটতি, বেপরোয়া গাড়ি চালনা, চালনাকালে মোবাইলে কথা বলা, পর্যাপ্ত ট্রাফিক সিগন্যালের ঘাটতি, ট্রাফিক আইন ও সংকেত সম্পর্কে ড্রাইভার ও অন্যান্যকে উদ্বুদ্ধকরণের এবং সরকারিভাবে ড্রাইভার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা, রাতের আলোর স্বল্পতা ইত্যাদি সড়ক দুর্ঘটনার কারণ। অবৈধ চালক দ্বারা গাড়ি চালনাই দুর্ঘটনার প্রধানতম কারণ বলে সনাক্ত করেছেন অনেকেই। হাইওয়ে পুলিশের রয়েছে হাজারো সীমাবদ্ধতা, ফলে দোষী ব্যক্তিকে পাকড়াও করার ক্ষেত্রে তারা তেমন কোন ভূমিকাই রাখতে পারছে না। এদেরকে আধুনিক সরঞ্জাম-উপকরণ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না করলে খামোখা হাতী পোষারই শামিল হবে এরা।
 
জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, মোটর যানের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি, সড়ক নিরাপত্তা খাতে বিনিয়োগের অপ্রতুলতা, চালকদের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার অভাব, হাইওয়ে পরিকল্পনা না থাকা, সড়ক নির্মাণ ও মেরামতে ত্রুটি ও মোটরযানের ত্রুটি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সবিশেষ গুরুত্ব না দিলে অদূর ভবিষ্যতে সড়ক দুর্ঘটনা অবিশ্বাস্য হারে বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।
 
বুয়েটের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, দেশে প্রতি ১০ হাজার মোটরযানে ১ কোটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে। উন্নত দেশে তা প্রতি হাজারে ২.৫ বা ৩.৫ ভাগ। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে ১০/১২ হাজার মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত বলেও এই গবেষণায় দাবি করা হয়েছে।

ঢাকার বাইরের একটি চিত্র:
ঠাকুরগাঁওয়ে ট্রাক্টর, পাওয়ার টলি, নছিমন, ভটভটি ইত্যাদির দৌরাত্ম্যে অসহায় হয়ে পড়েছে মানুষ। শহর দিয়ে অবৈধভাবে এইসব যানবাহন এর কারণে দূর্ঘটনা ঘটছে প্রতিদিনই। জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের এক তথ্যে জানা গেছে, বাস, ট্রাক্টর, ট্রলি, নসিমন, ভটভটি ইত্যাদি যানবাহনে দূর্ঘটনায়র শিকার হয়ে ২০০৭ সালে মারা গেছেন ৩৪ জন, ২০০৮ সালে ৪১ জন, ঠিক কতজন পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন তা পুলিশের খাতায় পাওয়া না গেলেও জেলার ৫টি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০০৮ সালের হরিপুর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৭শ ৩৫ জন সড়ক দূর্ঘনায় আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। রানীশংকৈল উপজেলায় ১ হাজার ৩শ ২৭ জন, পীরগঞ্জ উপজেলায় ১ হাজার ১শ২৩ জন, বালিয়াডাংঙ্গী উপজেলায় ৫শ ৩৩ জন, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় ১হাজার ৯শ ৬৭ জন ব্যক্তি সড়ক দূর্ঘনার শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে এ তথ্য পাওয়া না গেলেও এর সংখ্যা অনেক বেশি বলে মনে করছেন সুশীল সমাজ। উল্লেখ্য যে, গত ৮ জুলাই থেকে ১১ জুলাই পযর্ন্ত জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে লাগাতার মাইকিং করে অবৈধ যাবাহন চলাচলের নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও তা মানা হচ্ছে না। প্রশাসনের সামনে দিয়ে চলাচল করছে অবৈধ যানবাহন।

সড়ক দুর্ঘটনা : রোধে কয়েকটি প্রস্তাব :
১. প্রথম কথা ড্রাইভিং লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করতে হবে। পুলিশদের ঘুষ খাওয়া বন্ধ করতে হবে
২.আর গাড়ি ত্রুটিমুক্ত রাখতে হবে ।
৩.রাস্তা প্রশস্ত বানাতে হবে ।
৪. বৈধ লাইসেন্সধারী দক্ষ চালক নিশ্চিত করতে হবে।
৫.চলন্ত গাড়ির চালকের মোবাইলে কথা বলা নিষিদ্ধ করা হোক এবং এ ব্যাপারে যাত্রীসাধারণকে সচেতনতার দায়িত্ব দেয়া হোক।
৬.দুর্ঘটনা রোধে প্রথমে ভালোভাবে ড্রাইভিং লেশন নিতে হবে, তারপরে সরকারের নিয়ন্ত্রণে এক জায়গায় তাদেরকে ড্রাইভিং টেস্ট দিতে হবে যারা পাশ করবে তারাই শুধু ড্রাইভিং করতে পারবে.. আর ট্রাফিক পুলিশকে ঘুষ থেকে ধুরে থাকতে হবে।
৭. যারা এক্সিডেন্ট করবে তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স সাময়িক ভাবে বাতিল করতে হবে।
৮.গাড়ি চালানোর নিয়ম নীতি জানানোর জন্য প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার পূর্বে একটি লিখিত পরীক্ষা থাকা জরুরি।
৯. সব লোহা লক্কর আর মুড়ির টিন জাতীয় গাড়ি রাস্তা থেকে ব্যান করতে হবে।
১০.উল্টাপাল্টা রাস্তা পার হতে দেয়া যাবে না।
১১.রাস্তার উপর পাবলিক যাতে না হাঁটতে পারে সেইটা ব্যবস্থা করতে হবে।
১২. যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানো-নামানো বন্ধ করতে হবে।
১৩. চালকদের আরো সচেতনতা বাড়াতে হবে।
১৪.রাস্তায় চালকদের সতর্কতামূলক দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বেশী পরিমাণ বিলবোর্ড, রোডমার্ক টানানো দরকার।
১৫. দূর্ঘটনা ঘটার মতো স্থানগুলোতে স্পিডব্রেকার দিতে হবে।
১৬. রাস্তা বড় করার পাশাপাশি ফোর লেনের রাস্তা বাড়াতে হবে।
 
১৭.খারাপ রাস্তাগুলোকে যতটা সম্ভব দ্রুত সংস্কার করতে হবে।
১৮. বিশ্বের অনেক দেশে দূর্ঘটনা ঘটলে প্রথমেই পুলিশ ও অ্যাম্বুলেন্সকে ফোন করতে হয়। তার জন্য একটি নির্দিষ্ট সার্ভিস ফ্রি নম্বর থাকে। পুলিশ দ্রুত স্পটের ছবি/ভিডিও নিয়ে রাস্তা যাতায়াতের জন্য পরিস্কার করে দেয়। অতঃপর অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতে দোষী-নির্দোষীর মধ্যে ফয়সালা করে। মিটমাটের সময় গাড়ির/চালকের ইন্সুরেন্স পক্ষ অবশ্যই উপস্থিত থাকে। বাংলাদেশে এই দিকে নজর দিতে পারে।
১৯. রেডিও, টিভিসহ গণমাধ্যমে প্রচারণা আরো ব্যাপক করতে হবে।
২০. সুযোগ থাকলে প্যাকেজ প্রোগ্রামের মাধ্যমে চালকদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে।
২১.যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে, চালক যাতে বেপরোয়া না চালায় বা চালানো তে কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা।

আরো কিছু করণীয় :
সরকারকে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি গাড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। কেন এক্সিডেন্ট হলো, তা গাড়ির চালককে জবাব দিতে হবে মালিকের কাছে। সেই সাথে কারণ নির্ণয় করে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলেই কেবল দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। নইলে সামনে ভয়াবহ দুর্ঘটনা প্রধান সমস্যায় রূপ নিবে।

লেখকঃ সাংবাদিক ও গবেষক
Email : barkat09@gmail.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।