ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ পৌষ ১৪৩১, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

নাসিক প্যানেল মেয়র নির্বাচনে বিবেক বিসর্জন

মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১১
নাসিক প্যানেল মেয়র নির্বাচনে বিবেক বিসর্জন

প্রসঙ্গ একঃ আমি কেন প্রার্থী হলাম?  
মঙ্গলবার (২৭-১২-২০১২) নবগঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এর ৩৬ জন কাউন্সিলরের ভোটে প্যানেল মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমিও সেখানে প্যানেল মেয়র- ১ পদের জন্য প্রার্থী হয়েছিলাম।

আমার চিন্তা ছিল আরো যে ২জন প্রার্থী আছে তাদের চেয়ে সাবেক নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার উন্নয়নে আমার বেশী ভূমিকা ছিল, আমি মেয়রের নির্দেশে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলাম, আমি নাসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর হিসাবে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছি এবং সর্বোচ্চ ভোটের ব্যবধানে জিতেছি। প্রশাসনিক কর্মকান্ডে আমার দক্ষতা অন্যদের চেয়ে ভালো, অন্যদের চেয়ে আমার অতীত ভালো। আমি একজন বন্ধু বৎসল, আমার সাথে সকল কাউন্সিলরের ভালো সম্পর্ক, আমি অন্য ২ জনের চেয়ে বয়সে তরুণ। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দ্বায়িত্ব পালনে স্বচেষ্ট ছিলাম। এসব বিষয় মাথায় রেখে আমি নাসিকের প্যানেল মেয়র- ১ এর জন্য গত দেড় মাস প্রত্যেকের ঘরে ঘরে গিয়েছি। কাউন্সিলরদের কাছে আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি। দুই দফা কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে কাউন্সিলররা আমাকে গ্রহণ করেছে। যতদিন অতিবাহিত হয়েছে, আমি তত বেশী আশাবাদী হয়ে উঠেছি।

প্রসঙ্গ দুইঃ আমি হারিনি, ছিনতাই হয়েছে বিবেক
নাসিক নির্বাচনের পরে যারা গত দেড় মাস যাবৎ বিবেকের জয়ের জপমালা করেছে তারও প্যানেল মেয়র নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের বিবেককে তালাবন্দী করে কাউন্সিলরদের বিবেক কিনতে টাকা হাতে বাড়ি বাড়ি ঘুরেছে। আর বিবেকবানদের দৃষ্টিতে পরাজিত শক্তি তো ঘুরেছেই। ৩৬ জন ভোটারের মধ্যে আমি ভোট পেয়েছি ৩টি। একটি আমার বাকী ২টা বিবেকবান (?) ২ জনের। আমি মনে করি এতে আমার পরাজয় হয়নি, কারণ আমি কাউকে বাধ্য করি নাই বিবেক বিক্রিতে। অতএব, অবিক্রিত ২ জনের ভোট তো আমি পেয়েছি। আমি তাতেই খুশি। আমার এখন একটাই সান্তনা যে, আমার সহকর্মীদের মাঝে ২ জন শক্ত মনের মানুষ আছেন, যারা বিবেক বিসর্জন করে নাই।

প্রসঙ্গ তিনঃ বিবেক বিসর্জনে বাধ্য করা

আমার সম্মানিত সহকর্মী কাউন্সিলরদের প্রতি আমাকে ভোট না করায় কোন ক্ষোভ নেই। কারণ তাদের আমার প্রতি আন্তরিকতার কোন কমতি ছিল না। তারা প্রত্যেকেই ভাল ও বিবেকবান এবং উন্নত হৃদয়ের মানুষ। তাদের আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। কিন্তু তাদেরকে বাধ্য করা

হয়েছে বিবেক বিসর্জন দিতে। অনেকে বলেছেন আমার সহকর্মীরা বিবেক বিক্রি করেছে। আমি এ কথার সাথে একমত নই। কারণ বিবেক কিনতে টাকা হাতে ঘুরেছে নারায়ণগঞ্জের দুই মেরুর তথাকথিত বিবেকবান নেতারা। কাউন্সিলররা কেউ বিবেক বিক্রি করে নাই। কারণ তারা প্রত্যেকেই যথেষ্ট বিবেকবান মানুষ। আমি বলবো তাদের বাধ্য করা হয়েছে বিবেক বিসর্জন দিতে। উভয়পক্ষের তথাকথিত নেতা, পাতি নেতা, সমাজপতি ও পন্ডিত ব্যক্তিরা তাদের ভয় দেখিয়েছে এই বলে যে, তাদের কথা না শুনলে এলাকায় উন্নয়ন হবে না। স্বভাবতই আমার সহকর্মীরা নিজের এলাকা ও এলাকার জনগণকে ভালবাসেন তাই তারা তাদের জনগণের উন্নয়নের স্বার্থে বিবেক বিসর্জনে বাধ্য হয়েছেন। তাতে আমি দোষের কিছু দেখি না। জনগণের ও এলাকার উন্নয়নে তাদের এই ত্যাগকে আমি স্যালুট করি।

প্রসঙ্গ চারঃ  পয়সা দিয়ে সম্মান কেনা
সকল পরিষদের প্যানেল মেয়র অবশ্যই সম্মানের বিষয়। সম্মান আল্লাহ্ প্রদত্ত। জনগণের ভালবাসার প্রতীক। চোরা পথে অর্থ ও পেশির জোরে সম্মান কিনে লাভ কি? যারা কিনেছেন তাদের কাছেই উত্তরের আশায় রইলাম।

আমার এই লেখা পড়ে আমার সহকর্মীরা কেউ কষ্ট পেলে আমি তাদের কাছে করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থী। কারণ, আমি তাদের কষ্ট দিতে চাই নাই। আমি এ লেখা লেখছি তাদের যেন সাধারণ জনগণ ভুল না বুঝে এজন্য। কারণ প্যানেল মেয়র নির্বাচনের আগের ২ দিন তারা আমার চেয়ে অসহায় অবস্থায় ছিল দুই মেরুর চাপের কারণে। আমি তাদের অসহায়ত্ব তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি মাত্র। আমি চেষ্টা করছি এটা বুঝাতে যে আমার সহকর্মীরা বিবেক বিক্রি করে নাই বিসর্জন দিতে বাধ্য হয়েছে।

পরিশেষে আমার আহ্বান যা হবার তা হয়ে গেছে। এখন আমরা সবাই মিলে মেয়র মহোদয়ের নেতৃত্বে দলমত নির্বিশেষে কাজ করে যেন একটি বাসযোগ্য নারায়ণগঞ্জ গড়ে তুলি, তবেই আমাদের নির্বাচিত হওয়া স্বার্থক হবে। জনগণের সাথে দেয়া ওয়াদা রক্ষা হবে। ভবিষ্যত বংশধর আমাদের মনে রাখবে। আসুন নগর উন্নয়নে সকলে হ্যাঁ বলি।

লেখক-
মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন

বাংলাদেশ সময় ১৫০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।