ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ পৌষ ১৪৩১, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

একটি উল্লাস দেখে যেতে পারলেন না অধ্যাপক কবীর চৌধুরী ও দীনেশ দাশ

সৈয়দ সাইফুল ইসলাম, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১২
একটি উল্লাস দেখে যেতে পারলেন না অধ্যাপক কবীর চৌধুরী ও দীনেশ দাশ

ঢাকা: বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আরো একটি ওয়ান-ইলেভেন যুক্ত হলো। নতুন ওয়ান-ইলেভেনটি হলো জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা।

এই দিনটি বাঙালি জাতির কাছে অনেক গুরুত্বের। যারা ৪০ বছর ধরে গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে মাঠে তৎপর ছিলো বিশেষ করে এটি ছিলো তাদের জন্য বিশেষ পাওয়া।

অনেকে গোলাম আযমের গ্রেপ্তারকে তাদের আন্দোলনের শতকরা ৯০ ভাগ সফলতাও বলছেন। বিচার কাজ শেষ হলে সফলতার শতভাগ পূর্ণ হবে। আবার যারা গোলাম আযমকে মনে-প্রাণে ভালোবাসেন ও চেতনায় লালন করেন তাদের জন্যও ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসের এগারো তারিখটি স্মরণীয়। বিশেষ করে যারা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন, তারা চলতি বছরের ওয়ান-ইলেভেনকে অনেক দিন মনে রাখবেন। কারণ, জামায়াতের রাজনীতির জন্য এই দিনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। জামায়াত ভবিষ্যতে তাদের রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনার ক্ষেত্রে গোলাম আযমের গ্রেপ্তার ও বিচারের বিষয়টি বিবেচনায় রাখবে।

আগামীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পরিচালনার দায়িত্বে যেসব তরুণরা নেতৃত্ব দেবেন তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ অথবা যুদ্ধাপরাধের কোনো অভিযোগ নেই। কারণ, যুদ্ধকালীন সময়ে এদের জন্ম হয়নি।

জামায়াতের আমিরের পদ থেকে ২০০০ সালে গোলাম আযম স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়িয়েছেন। আমিরের পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার বিষয়ে যতগুলো যৌক্তিক কারণ তিনি দেখিয়েছেন তার মধ্যে সবচেয়ে প্রধান কারণ হিসেবে তিনি তার বার্ধক্যকেই বড় করে তুলে ধরেছেন। এই বয়সে এসে এতো বড় দল পরিচালনা করা তার পক্ষে সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

দলের সর্বোচ্চ পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পেছনে বুদ্ধিজীবীরা অন্য কারণ খুঁজে বেড়িয়েছেন। শেষ পর্যন্ত যে বিষয়টি দেশের প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবীদের কাছে মনে হয়েছে সেটি হচ্ছে, গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের পরিমাণ বেশি থাকা। তখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও ছিলো একটু ভিন্ন। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচন সামনে ছিলো। এই নির্বাচনে ভালো ফল লাভের জন্য নিজেকে আমিরের পদ থেকে গুটিয়ে নেওয়া যুক্তিযুক্ত মনে করেছেন গোলাম আযম।

আমিরের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য অবশ্য কেউ গোলাম আযমকে পরামর্শ দেননি। তবে এ পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য তার করা আবেদন সহজেই গ্রহণ করে নিয়েছে দলটির নির্বাহী পরিষদ। ওই বছর দলের নতুন আমির নির্বাচনের জন্য ৩ সদস্যের একটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়। এ তিন সদস্যের মধ্যে ছিলেন, আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ, মতিউর রহমান নিজামী ও  দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। সারা দেশের রুকনদের (সদস্য) ভোটে আমির নির্বাচিত হন মতিউর রহমান নিজামী। পরবর্তী সব নির্বাচনেই আমির নির্বাচিত হন নিজামী।

দলের আমিরের পদে না থাকলেও গোলাম আযাম জামায়াতের সার্বিক খোঁজখবর রাখতেন। দলের পক্ষ থেকেও বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে গোলাম আযমের পরার্মশ নেওয়া হতো। সব মিলিয়ে জামায়াতের কাছে গোলাম আযম ছিলেন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এ কারণে তার গ্রেপ্তারের পর বিষয়টিকে জামায়াত তাই বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে।  

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবিতে রাজপথে সভা-সমাবেশ ও সেমিনারে যেসব বিশেষ ব্যক্তি সব সময় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী। কিন্তু তিনি গোলাম আযমের গ্রেপ্তার ও বিচার দেখে যেতে পারলেন না। ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ভোর ৬টায় নয়াপল্টনে তার বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ফেলেন।

অধ্যাপক কবীর চৌধুরী ১৯২৩ সালে ৯ ফেব্রুয়ারি জন্ম নিয়ে ৮৯ বছর বেঁচে থাকলেও প্রত্যাশিত যুদ্ধাপরাধের বিচার দেখা হলো না তার। এর এক মাস না পার হতেই সাংবাদিক দীনেশ দাশ আমাদের ছেড়ে গেলেন চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি। সাংবাদিক মহল ও রাজনৈতিক খবরের পাঠকরা ভালোভাবেই জানতেন, দীনেশ দাশ জামায়াত ও ইসলামী দলগুলোর বিটের রিপোর্ট করতেন। তিনি যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের স্বপক্ষের শক্তি ছিলেন জামায়াতের নেতারাও তা ভালোভাবে জানতেন।

১১ জানুয়ারি গোলাম আযমকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ খবরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের স্বপক্ষের শক্তিগুলো যে আনন্দ-উল্লাস করেছে, বেঁচে থাকলে তাতে অংশ নিতেন দীনেশ দাশও।

অত্যন্ত কাছাকাছি সময়ের মধ্যে হাজারো ভক্তকে কাঁদিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী ও সাংবাদিক দীনেশ দাশ। এখন তারা জীবিত থাকলে তাদের পরিবারের সদস্যরাও হাসি-আনন্দে মেতে উঠতেন তাদেরই সঙ্গে।

সব শেষে যে কথা বলা দরকার বলে মনে করছি তা হচ্ছে, চলমান বিচার প্রক্রিয়া, বিচারের রায় ঘোষণা ও তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে যেন নতুন করে কোনো বির্তকের সৃষ্টি না হয়। সেদিকে সজাগ থাকতে হবে বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘন্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।