ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

সরকার কারা ডোবায় কীভাবে ডোবায়

নঈম নিজাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০২১
সরকার কারা ডোবায় কীভাবে ডোবায়

দেখতে দেখতে জীবন থেকে চলে গেল আরও একটি বছর। ইংরেজি সালের আরেকটি বছর শুরু হয়েছে।

করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলাম গেল বছর। আল্লাহর রহমতে সেরে উঠেছি। শরীরের দুর্বলতা ছিল অনেক দিন। এখন ভালো আছি। জীবন থেমে থাকে না। চলতে থাকে। এগিয়ে যায় সবকিছু। কিন্তু করোনাকালে ঝরা পাতার মতো অনেক প্রিয় মানুষকে কেড়ে নিচ্ছে। কিন্তু তাতেও থামছে না জীবনের স্বাভাবিকতা।  কবরে একজন মানুষকে শোয়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সব শেষ হয়ে যায়। মৃত্যু ঘোষণার পর ডেথ সার্টিফিকেটের জন্যও অপেক্ষা করে না প্রিয়জনরা। আলোচনা শুরু হয় কবর দেবেন কীভাবে। সবাই জানে এ মানুষটি আর ঘরে ফিরবেন না। তাঁর নতুন ঠিকানা অন্ধকার কবর। সাময়িক কান্নাকাটি হয়। তারপর বসে হিসাব-নিকাশে। পরিবারে চাওয়া-পাওয়ার নতুন হিসাব শুরু হয়। করোনাকাল অনেক কিছু বদলে দিয়েছে। মানুষ জানতে পারছে, কঠিন অসুখে পড়ার পর কেউ থাকে না পাশে। আসলে বিপদে পড়লে টের পাওয়া যায় আপন-পর। সেই দিন এক বন্ধু বললেন, অসুস্থ হলে, কারাগারে গেলেও টের পাওয়া যায়। আরেকজন বললেন, ভোটে দাঁড়ালে খবর হয়ে যায়। আপন-পর চেনা বড় কঠিন। যে মানুষটিকে আপন ভাবছেন তিনিই আপনার সর্বনাশ করে ছাড়ছেন। চাওয়া-পাওয়ার হিসাব বড় বিচিত্র। যিনি যত বেশি সুবিধাভোগী তিনি তত বেশি সর্বনাশা খেলায় মত্ত। একবার উপকার পেলে মনে করেন এটা তার বাপ-দাদার আমলের চাওয়া-পাওয়া। কোনো কারণে একবার পাশে না থাকলে দেখিয়ে দেবে তিনি কতটা বিশাল।

২০০৫ সালের ৯ জুন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাঁর অফিসে ডেকে নেন মেজর জেনারেল মইন উ আহমেদকে। মাত্র মিশন থেকে ফিরেছেন মইন। তিনি প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাই সাঈদ এস্কান্দারের বন্ধু। সাঈদ এস্কান্দার প্রিয় বন্ধুকে সেনাপ্রধান করার উদ্যোগ নেন সাতজনকে ডিঙিয়ে। খালেদা জিয়ারও আপত্তি নেই। তাই জেনারেল মইনকে ডেকে নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কক্ষে প্রবেশ করেই স্যালুট করেন। বেগম জিয়া তাকে বসতে বললেন। তারপর বললেন, একটু আগে তোমার ফাইলে স্বাক্ষর করেছি। মইন তার বইতে লিখেছেন, বেগম জিয়া তাকে আপনি বলে সম্বোধন করেছেন। এই গল্পের আরেকটু অংশ আছে। এই ফাইল স্বাক্ষরের পর বেগম জিয়া চলে যান দেশের বাইরে। ১৫ জুন জেনারেল মইন সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেন। ১৭ জুন দেশে ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী। কথা ছিল ১৮ জুন সেনাপ্রধান লে. জেনারেল চিহ্ন পরিধান করবেন প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে। কিন্তু বেগম জিয়া দেশে ফিরে ১৭ তারিখে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি চলে আসেন সশস্ত্র বাহিনী দফতরে। এমন ঘটনা নজিরবিহীন। এই নিয়ে মইন তার বইতে লিখেন, ‘দীর্ঘ ভ্রমণজনিত ক্লান্তিকে উপেক্ষা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী দফতরে এসে আমার মেজর জেনারেল থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেলের পদবিতে উন্নীত করার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কর্ণধারের এরকম নিষ্ঠা ও একান্ত অনুভূতি সেদিন আমাকে অভিভূত করেছিল। ’ এ নিয়ে কিছু বলার নেই। তবে আওয়ামী লীগ আমলে একজন সুবিধাভোগী কর্মকর্তার নাম লে. জেনারেল হাসান সোহরাওয়ার্দী। তিনি কম পাননি আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে। নবম পদাতিক ডিভিশনের দায়িত্ব পালন করেছেন বিশ্বস্ত হিসেবে। লে. জেনারেল পদে পদোন্নতি পেয়েছেন সরকারের আন্তরিক আনুকূল্য নিয়ে। তারপরও চাওয়া-পাওয়ার শেষ নেই। তার সাম্প্রতিক তৎপরতা, কর্মকান্ড হতাশ ও বিস্মিত করেছে। মানুষ এতটা নামতে পারে কী করে?

আজকাল অনেক কিছু দেখে বিস্মিত হই না। এই সরকারের মন্ত্রী, এমপিদের মাঝে সবাই কি সাচ্চা? জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা সবাই বলেন। সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হলে অথবা মনের মতো না হলে কোনো কিছু মনে থাকে না। তখন সরকারকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে তারাই নামেন যারা বেশি পেয়েছেন। বঞ্চিতদের চক্রান্তে দেখি না। খন্দকার মোশতাক ছিলেন শেখ কামালের উকিল বাপ। বঙ্গবন্ধুর মায়ের মৃত্যুর পর মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কেঁদেছিলেন মোশতাক। ১৫ আগস্ট দুপুরেও টিফিন ক্যারিয়ারে করে বঙ্গবন্ধুর জন্য খাবার নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই মোশতাক বঙ্গবন্ধু পরিবারকে খুন করে ইতিহাসের কালো অধ্যায় রচনা করেন। শুরুতে মীরজাফরও ছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিশ্বস্ত। চারদিকে অনেক কিছু দেখে মাঝে মাঝে ভয় লাগে। একটি সঠিক সুস্থধারার নির্বাচন এলে আওয়ামী লীগ টের পাবে এক কঠিন বাস্তবতা। এই বিশাল সমর্থক গোষ্ঠীর নতুন চেহারা বেরিয়ে আসবে। সুবিধাভোগীদের নষ্টামি দুনিয়াদারি আন্ধার করে দেবে। অনেক এমপি সাহেবের নির্বাচনী এলাকার সঙ্গে সম্পর্ক নেই। তারা মনে করছেন, আগামী দিনের ভোটও প্রধানমন্ত্রী করে দেবেন। বাস্তবতা সব সময় একরকম থাকে না। কবি নজরুলের ভাষ্য অনুযায়ী চিরদিন কাহারো সমান যায় না। এই কথাটি কেউ বুঝতে চায় না।
অবশ্যই আওয়ামী লীগ একটা ভালো অবস্থানে আছে। সেই দিন এক আড্ডায় জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকির সঙ্গে কথা হচ্ছিল। কথায় কথায় তিনি বললেন, বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। ঢাকা বদলে যাবে মেট্রোরেলে। মাতারবাড়ী হবে আরেক সিঙ্গাপুর। বড় বড় অনেক বিনিয়োগ নিয়ে আসছে জাপানিরা। আরও বললেন, উন্নয়ন কাজে এক বিস্ময়কর নাম শেখ হাসিনা। তিনি বিশ্বের দরবারে নতুন মর্যাদা দিয়েছেন বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে তাঁর কারণে। আমি সব সময় বলি শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শেষ ঠিকানা। তিনি না থাকলে টের পাবেন চেতনাবাজরা। বুঝতে পারবেন কত ধানে কত চাল। আওয়ামী লীগের ছায়ার তলায় থেকে বামরা চলেন। আবার স্বার্থ ক্ষুণœ হলে কেটে পড়েন। বঞ্চনা দেখলে সরকারবিরোধী হয়ে যান। স্বার্থের প্রশ্নে হয়ে যান কেউ বাম, কেউ জাসদ। আওয়ামী লীগ থাকেন না। জাসদের সর্বনাশা কান্ডের খেসারত আওয়ামী লীগকে দিতে হয়েছিল ১৫ আগস্টে। এখন একদল অতি উৎসাহী আমলার কর্মকান্ড উৎকণ্ঠিত করছে। আওয়ামী লীগ ওই দলের নেতা-কর্মীরা করুক না। আপনাদের জড়ানোর এত কী দরকার? কোনো পরামর্শ থাকলে গোপন প্রতিবেদনের মাধ্যমে দিন। আমলাদের রাজনীতিতে জড়াতে হবে কেন?

রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে পদবি নিয়ে যে কেউ শক্তিশালী হতে পারে। বিরোধী দলের রাজনীতি করলে টের পাওয়া যায় দুনিয়াদারি কত কঠিন। আমলারা সব সময় সরকারি দলের সঙ্গেই থাকে। এই সরকারি দল বিরোধী দল হলে জীবন হারাম করে দেয়। এখন চারদিকে একটা অস্বস্তি কাজ করছে। এই অস্বস্তি আর কেউ নন আমলারা তৈরি করেছেন। তারা সবকিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্ষমতার বিশাল বলয় তৈরি করেছেন। গণতান্ত্রিক কাঠামোতে শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের বিকল্প নেই। ভোটের সংস্কৃতি থেকে দূরে গিয়ে রাজনৈতিক কাঠামোকে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত করার পরিণতি ভালো হয় না। আর সরকার বদল হলে কোনো খারাপ কাজের দায় আমলারা নেন না। সব দায় রাজনৈতিক দলকে নিতে হয়। ক্ষমতার কালো গ্লাসে সবকিছু রঙিন মনে হয়। আমলারা সর্বকালের সুবিধাভোগী। অবসরের পরও বড় আমলারা নতুন কোনো নিয়োগ চান। না পেলে চুপসে যান। অথবা বিদেশে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে আরাম-আয়েশে বাকি জীবনটা কাটান। রাজনীতিবিদদের অবসর নেই। এরশাদ আমলে আমলাদের জি সেভেন গ্রুপের কথা শুনতাম। শেষ বিদায়ের দিন কেউই দায় নেননি। সবাই বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে নালিশ করলেন এরশাদের বিরুদ্ধেই। বললেন, তাঁর চেয়ে বড় স্বৈরাচার দুনিয়াতে আর নেই। দুর্নীতির মামলা করা কোনো বিষয় নয়। অনেকে পথ বাতলে দিলেন তাঁকে সেনাকুঞ্জ থেকে কীভাবে গুলশানের সাব-জেলে নেওয়া যায়। আবার অনেকে বলে দিলেন, গুলশানের সাব-জেলে কেন থাকবেন? তাঁকে নিন কেন্দ্রীয় কারাগারে। পাঁচ আসনে নির্বাচিত হয়েছেন রংপুরের মানুষগুলো অবুঝ বলেই। মানুষের ভালোবাসার মূল্য তারা বোঝার চেষ্টা করলেন না।

আমলাদের সবচেয়ে বড় চেষ্টা থাকে ডিভাইড অ্যান্ড রুল। তারা এ কাজটি সব আমলেই করেন। পেয়েছেন ব্রিটিশদের কাছ থেকে। ’৯১ সালে খালেদা জিয়ার সময়ে এরশাদ ও তাঁর মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে মামলা সাজিয়ে দিয়ে বাহাবা নিয়েছিলেন আমলারাই। একই ধারাবাহিকতা ২০০১ সালের পর দেখেছি। এমনকি নির্বাচনের আগেই সদ্য বিদায়ী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তারা চলে গেলেন। অঘোষিত যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর অতি উৎসাহী আমলার কর্মকান্ড ছিল দেখার মতো। ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর আটক হওয়ার পর তাঁকে কারাগারে ডিভিশন দেওয়ার বিরোধিতাও আমলারাই করেছিলেন। ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। আর শিক্ষা নেয় না বলেই খেসারত রাজনীতিবিদদের দিতে হয়। সেই দিন দেখলাম, এক সিনেমা পরিচালককে আটক করে পাঠিয়ে দেওয়া হলো কারাগারে। অভিযোগ তিনি সিনেমাতে দেখিয়েছেন পুলিশ মাদক দিয়ে হয়রানি করছে মানুষকে। এতে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। হতাশ হলাম। হিন্দি বা ইংরেজি ছবিগুলো কি কেউ দেখেন না? চোখের আঙুল সরান। আপনাদের রক্ষণশীলতায় এখন গ্রামবাংলার যাত্রাপালা, পুতুল নাচ, সার্কাস সব বন্ধ। সংস্কৃতি শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমরা কোথায় যাচ্ছি কেউ জানি না।

আমলাতন্ত্র শুধু সিভিল ব্যুরোক্রেসিতে আছে, তা নয়। সব ক্যাডারই সুযোগ পেলে নিরীহ জনগণকে সাপের পাঁচ পা দেখিয়ে দেন। ২০০৪ সালের দিকে বেইজিং গিয়েছিলাম এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে। ফ্লাইট ছিল থাইল্যান্ড হয়ে। যাওয়ার পথে ২৪ ঘণ্টা থাকতে হয়েছিল ব্যাংকক বিমানবন্দরে। আসার পথেও তাই। এ কারণে এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান বললেন, থাই ভিসা নিয়ে নিন বেইজিং থেকে। আমাদের সঙ্গে থাইল্যান্ডের একজন প্রকৌশলী ছিলেন। তাকে নিয়ে মাহফুজ ভাইসহ গেলাম থাই দূতাবাসে। তারা বললেন, ভিসা দেব সমস্যা নেই। থার্ড কান্ট্রি থেকে ভিসা পেতে তোমার দূতাবাস থেকে পাসপোর্ট দেখিয়ে লিখে আনো, তুমি বাংলাদেশের নাগরিক। রাষ্ট্রদূত মহোদয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। তিনি সাপের পাঁচ নয় সাত পা দেখাতে পাঠালেন মাসুদ মান্নান নামের এক বিশাল কর্মকর্তার কাছে। এই ভদ্রলোক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থাকাকালে পরিচয় হয়েছিল। তাকে দেখে খুশি হলাম। তিনি মুখ গম্ভীর করে কথা শুরু করলেন। ভাবখানা এমন রাজার সামনে দুজন প্রজা বসে আছে। তিনি সিংহাসনের মালিক। বললেন, দুঃখিত আমরা আপনাদের কোনো সহায়তা করতে পারব না। মাহফুজুর রহমান বললেন, আমার থাই ভিসা আছে। আমি বাংলাদেশে রপ্তানি খাতে আটবার শ্রেষ্ঠ রপ্তানিকারকের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পেয়েছি। উনি এটিএন বাংলা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক। আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আপনারা কী করেন? আমরা চেয়েছি, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে শনাক্তকরণপত্র। আমাদের পাসপোর্ট ঠিক আছে, ফেরত যাওয়ার টিকিট ঠিক আছে। বিমানবন্দরে ২৪ ঘণ্টা কষ্ট না করে ভিতরে হোটেলে থাকতে উনি থাই ভিসার আবেদন করছেন। তাই বাংলাদেশের নাগরিক এই কথাগুলো লিখে দেবেন। এতে সমস্যা কী? মাসুদ মান্নান সাহেব এবার ভাবগাম্ভীর্য আরেক ধাপ বাড়িয়ে আসমানের দেবদূত চেহারা বানালেন। এমন ভাব আরেকবার দেখেছিলাম ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য অস্ত্রের লাইসেন্স নিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিবের দফতরে গিয়ে। পরে তিনি সেই মন্ত্রণালয়ের সচিবও হয়েছিলেন। মাসুদ মান্নানের সঙ্গে কথা বাড়ালাম না। মন খারাপ করে বেরিয়ে এলাম। থাই ভদ্রলোক আমাদের চেহারার অসহায়ত্ব দেখে বললেন, চল আমাদের দূতাবাসে। আরেকবার চেষ্টা করে দেখি কী করা যায়। থাই দূতাবাসের কর্মকর্তারা হাসলেন। বললেন, দেখ তোমাদের দূতাবাস তোমাকে এই চিঠি কেন দিল না বুঝতে পারছি না? সাধারণ একটি কাজ। অথচ তারা কেন করল না? শনাক্তকরণপত্র ছাড়া তৃতীয় দেশ থেকে তুমি ভিসা পাবে না। এরপর থেকে বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস দেখলে আমার শরীরে জ¦র আসে। বাংলাদেশ দূতাবাস সড়ক দিয়ে আমি হাঁটাচলাও করি না। নিজের পাসপোর্ট আগলে রাখি কোনো কারণে যাতে ওদের কাছে যেতে না হয়।

কিছু দিন আগে আফ্রিকা থেকে কিছু প্রবাসী বাংলাদেশির ফোন পেলাম। তারা কিছু ভিডিও ক্লিপ পাঠালেন দূতাবাসের সামনে প্রতিবাদের। অনুরোধ করলেন সংবাদ প্রকাশ করার জন্য। আমাদের রিপোর্টারদের বললাম খোঁজ নাও। তারা খোঁজ নিলেন। বললেন, কর্মক্ষেত্রের জন্য জরুরি কিছু কাগজপত্র অ্যাটাস্টেট করতে গিয়ে ওরা ৬-৭ ঘণ্টা অপেক্ষা করেন দূতাবাসের সামনে। কিন্তু দূতাবাসের সাহেবদের সাক্ষাৎ পায়নি কেউ। তাই বিক্ষোভ করেছে। হতাশ হলাম। এভাবে হয়রানির শিকার হয় বাংলাদেশি প্রবাসীরা। কুয়েতে এক বাংলাদেশি নাগরিক দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে দূতাবাসের ভিতরে পানি খেতে গিয়েছিলেন। তাকে নিষ্ঠুরভাবে পেটানোর ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। এসব ঘটনা কষ্ট দেয়। হতাশ করে। এখনকার সরকারি কর্মকর্তারা জনসেবার পরিবর্তে আওয়ামী লীগ করতে বেশি পছন্দ করেন। তারা ভুলে যান জনগণের করের টাকায় তাদের বেতন হয়। কেউই এখানে ব্লু ব্লাডের অধিকারী সাদা নন। একই চেহারার মানুষ। তাই হয়রানির এই প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক দলকে শক্তিশালী রাখতে হবে। টিএনও, ওসি, ডিসি, এসপি সাহেবরা উপজেলা বা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের মতো কাজ করতে চাইবেন কেন? অশুভ এই নষ্ট কান্ড থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ক্ষমতার চেয়ার ও কারাগার পাশাপাশি। শতভাগ সত্য কথা। ক্ষমতার চেয়ার বদল হলে আমলারা জেলে যান না। জেলে যান রাজনীতিবিদরা। দুর্ভোগ পোহান রাজনৈতিক কর্মীরা। রাজনীতির নেতৃত্ব রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের দিতে দিন। বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। আপনারা সেই এগিয়ে চলার পথকে গতিশীল করুন।  কোনো বাড়াবাড়িই ভালো কিছু বয়ে আনে না।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।