মহাকালের যাত্রায় সূচিত হলো আরেকটি মাইলফলক। নতুন বছরের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের যুগপূর্তি হচ্ছে।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আগামী ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের টানা এক যুগ পূর্ণ হবে।
বিদায় নেওয়া ২০২০ সালে ক্ষমতাসীন দল দেশকে নিয়ে গেছে উন্নয়নের মহাসড়কে। কিন্তু মাঝপথে করোনাভাইরাস মহামারীতে কাজের গতিতে ঘটে ছন্দপতন। করোনায় প্রভাব ফেলে দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, অর্থনীতি, এমনকি রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও। তবে এই পরিস্থিতির মধ্যেও বঙ্গবন্ধু কন্যার যোগ্য নেতৃত্ব সফলভাবে করোনা মোকাবেলা করতে পেরেছে। প্রণোদনা দিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা হয়েছে। সম্পন্ন হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর অবকাঠামো নির্মাণকাজ। রাজধানীতে মেট্রোরেল ও এক্সপ্রেসওয়ে এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। এছাড়া দলে শুদ্ধি অভিযান, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও প্রশংসিত হয়েছে। করোনাকালে সবার ঘরে ঘরে খাদ্য-নগদ অর্থ পৌঁছে দেওয়ার বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়ও সফল বর্তমান সরকার।
২০২১ সালে সরকারকে আরও চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। করোনার টিকা সংগ্রহ, রক্ষণাবেক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও সঠিকভাবে বিতরণের বিষয়ে জোর দিতে হবে। সবার জন্য টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিশু ও প্রবীণদের অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। একইসঙ্গে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা, দুর্নীতির শিকড় উৎপাটন, শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দলীয় সাংগঠনিক শক্তি দৃঢ় করা, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে জনমত গঠন, অর্থনীতির গতি সঞ্চার করা সহ অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়েই সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ গড়া। ২০২১ সালেই দেশে হবে শতভাগ বিদ্যুতায়ন। সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে ২টি প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এছাড়া মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহীত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের ৮ লাখ ৮২ হাজার ৩৩টি ঘরহীন পরিবারকে আধপাকা টিনশেড ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার উদ্যোগ বাস্তবায়িত হবে ১৭ মার্চের মধ্যে।
ইতোমধ্যে করোনার প্রভাব মোকাবেলায় দরিদ্র অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, অর্থনীতির চাকা সচল রাখা ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ২১টি প্যাকেজের আওতায় ১ লাখ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে সরকার।
আগামী অর্থবছরের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় যে বাজেট প্রস্তাব করেছে, তা চলতি অর্থবছর থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা বেশি। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রাও বাড়তে পারে এক হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। আগামী বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। জিডিপির আকার ধরা হচ্ছে ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে মোট বিনিয়োগ প্রাক্কলন করা হয়েছে জিডিপির ৩২ শতাংশ।
করোনার সংক্রমণের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি চলছে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। এই পরিস্থিতির মধ্যেও যথাসময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দিচ্ছে সরকার। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১১ কোটি।
২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট’ অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে সরকার।
২৬ মার্চ আমরা উদযাপন করবো স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। নতুন বছরে আমাদের প্রত্যাশা হবে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মাঝে সৌহার্দ্য গড়ে উঠবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বির্নিমাণে সবাই সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে যাবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০২১