ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

এম‌পিওভু‌ক্তি সহজীকরণ বিষ‌য়ে আলোচনা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২
এম‌পিওভু‌ক্তি সহজীকরণ বিষ‌য়ে আলোচনা

মাধ‌্যমিক ও উচ্চমাধ‌্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠা‌নে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করার প‌রে অনলাইনে এম‌পিওভু‌ক্তির আবেদন ও আবেদন নিষ্পত্তির যে প্রক্রিয়াটা বর্তমা‌নে চালু আছে, সেটা আমার কা‌ছে অত‌্যাধু‌নিক ব‌লে ম‌নে হয় না। আমি ব‌্যক্তিগতভা‌বে ম‌নে ক‌রি, শিক্ষাকতা পেশায় যোগদান ক‌রে প্রথম মা‌সের দা‌য়িত্ব পালন শে‌ষেই বেতনের সরকা‌রি অংশ হা‌তে পাওয়া একান্ত দরকার এবং তা শিক্ষকসহ প্রতিটি চাক‌রিজী‌বীর অধিকা‌রের পর্যা‌য়ে প‌ড়ে।

 

সি‌স্টে‌মের যাঁতাক‌লে প‌ড়ে একজন শিক্ষক মা‌সের পর মাস এবং অনেক ক্ষে‌ত্রে বছ‌রের পর বছর এম‌পিওভুক্ত বেত‌নের জন‌্য অপেক্ষা কর‌বে- ডি‌জিটাল বাংলা‌দে‌শে এটা কো‌নোভা‌বেই মে‌নে নেওয়া যায় না। চাক‌রি‌তে যোগদা‌নের প‌রে বেতন না পে‌লে একজন শিক্ষককে যে কত বে‌শি কষ্ট ক‌রে চ‌লতে হয়, ধার‌দেনায় পড়তে হয়, সামা‌জিকভাবে মনটা কত ছোট থা‌কে এবং কত‌বে‌শি মান‌সিক দু‌শ্চিন্তায় দিন পার কর‌তে হয়, তা ভুক্ত‌ভোগী ও ভুক্ত‌ভোগীর প‌রিবার ব‌্যতীত অন‌্য কেউ উপল‌ব্ধি ক‌রেন ব‌লে আমার ম‌নে হয় না। চাক‌রি‌তে যোগদা‌নের প্রথম মাস থে‌কে হা‌তে বেতন না পাওয়ার কষ্ট সং‌শ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারক এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা‌দের উপল‌ব্ধি করা বি‌শেষভা‌বে উচিত।  

বর্তমা‌নে অনলাইনে এম‌পিওভু‌ক্তির আবেদন প্রক্রিয়ায় আমার কা‌ছে কিছু অসঙ্গতি ধরা প‌ড়ে, সেগু‌লো নি‌য়ে সং‌ক্ষে‌পে আলোচনা কর‌ছি।

১. বর্তমান অনলাইনে এম‌পিও আবেদন প্রক্রিয়ায় ৩৩টা বা তারও বে‌শি সংখ‌্যক কাগজ-পত্র স্ক্যান ক‌রে এটাচ‌মেন্ট আকা‌রে আপ‌লোড ক‌রে দি‌তে হয়। কো‌নো একটা কাগ‌জে য‌দি সামান‌্য ত্রু‌টিও ধরা পড়ে, তাহলে পুরো ফাইল রি‌জেক্ট হয়। মানে এম‌পিওভু‌ক্তির আবেদনের ফাইলটাই বা‌তিল হ‌য়ে যায়। আবার দুই মাস প‌রে নতুন ক‌রে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়।

আমার প্রশ্ন হ‌লো, ডি‌জিটাল প্রক্রিয়ায় কি কো‌নো এক বা একা‌ধিক কাগ‌জে সমস‌্যা থাক‌লে শুধুমাত্র সেই কাগজগু‌লোর ত্রু‌টি দূর ক‌রে রি‌প্লেসমেন্ট করার ব‌্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব নয়? ৩৩টার মধ্যে যে কয়টা এটাচ‌মেন্ট ফাইল স‌ঠিক আছে তা আবারও কে‌ন নতুনভা‌বে আপ‌লোড কর‌তে হ‌বে? অনলাইন সি‌স্টেম তো ডি‌জিটাল ভার্চ্যুয়াল সি‌স্টেম, এখা‌নে তো এমন নয় যে একজন এম‌পিওভু‌ক্তির আবেদনকা‌রী পু‌রো ৩৩টা কাগজ নি‌য়ে সশরী‌রে কো‌নো অফি‌সে কোর্ট ফাইলের ভেত‌রে ৩৩টা কাগজ নি‌য়ে গি‌য়ে দি‌য়ে আস‌ছে। দা‌য়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার কাগজ-পত্র দে‌খে একটা দুইটা কাগ‌জের সমস‌্যা নিরূপণ কর‌লো, এরপর আবেদনকারী পু‌রো কোর্টফাইল সা‌থে ক‌রে নি‌য়ে গে‌লো তারপর সমস‌্যাযুক্ত কাগজ যথাযথ প্রক্রিয়ায় ঠিক ক‌রে আবার ৩৩ কাগজ সেই কোর্টফাইলে ক‌রে আবার সেই অফিসা‌রের কা‌ছে নি‌য়ে আস‌লো।  

ডি‌জিটাল সি‌স্টেম আবিষ্কারই হ‌য়ে‌ছে মানু‌ষের ক‌ঠিন কাজ‌কে সহজ করার জন‌্য। সহজ কাজ‌কে ক‌ঠিন করার জন‌্য নয়। আমার কথা হ‌লো, ধরুন একজ‌ন এম‌পিওভু‌ক্তির আবেদনকা‌রীর ৩৩টা কাগ‌জের ভিত‌রে ২টা কাগ‌জে সমস‌্যা আছে, অথবা ২টা কাগজ যথাযথ জায়গায় আপলোড করা হয়নি, অথবা ২টা কাগজ ভু‌লে বাদ প‌ড়ে‌ছে। সে‌ক্ষে‌ত্রে শুধুমাত্র ঐ দু‌টো কাগজ স‌ঠিকভা‌বে দ্রুত সম‌য়ে আপলোড ক‌রে দেওয়ার সু‌যোগ থাকা উচিৎ। আর বা‌কিগু‌লো পুনঃরায় আপ‌লোড করে ডাবল প‌রিশ্রমের জায়গা রাখার প্রয়োজনীয়তা আছে ব‌লে আমার ম‌নে হয় না। কারণ ডি‌জিটাল সি‌স্টে‌মের পু‌রো সু‌বিধাগু‌লো বাংলা‌দেশ সরকার‌কে কা‌জে লাগা‌তে হ‌বে। এমনভা‌বে ডি‌জিটাল সি‌স্টে‌মে কাজ কর‌তে হ‌বে যা‌তে কর্মঘণ্টার সাশ্রয় হয়, আর সাশ্রয় হওয়া কর্মঘণ্টা অন্য নতুন নতুন মূল‌্যবান ‌সেবার ক্ষে‌ত্রে কা‌জে লাগা‌নো যায়।

২. অনলাইনে এম‌পিওভু‌ক্তির আবেদন প্রক্রিয়ায় ক‌য়েক‌টি স্ত‌রে ফাইল অনু‌মোদন হ‌য়ে তারপ‌রে ইন‌ডেক্স নম্বর প্রাপ্ত হয় এবং ইন‌ডেক্স নম্বর প্রাপ্ত হওয়ার প‌রে আবেদনকারী শিক্ষক সরকা‌রি বেতন ভাতা পে‌য়ে থা‌কেন। প্রথম পর্যা‌য়ে অনলাইন আবেদন ফাইল‌টি উপ‌জেলা মাধ‌্যমিক শিক্ষা অফিসার অনু‌মোদন ক‌রেন তারপ‌রে জেলা মাধ‌্যমিক শিক্ষা অফিসার অনু‌মোদন ক‌রেন এবং তারপ‌রে বিভাগীয় পর্যা‌য়ে উপ-প‌রিচালক ফাইল‌টি এপ্রুভ ক‌রে প্রোগ্রামা‌রের কা‌ছে হস্তান্তর ক‌রেন। কিন্তু এর কো‌নো স্ত‌রে অনলাইন এম‌পিওভু‌ক্তির আবেদন‌টি রি‌জেক্ট হ‌লে আবারও প্রথম পর্যায় থে‌কে নতুন ক‌রে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে হয় এবং আগের আবেদ‌নের দুমাস প‌রে নতুন আবেদ‌নের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

আমার প্রশ্ন হ‌লো, উদাহরণস্বরূপ এক‌টি অনলাইন আবেদন উপ‌জেলা মাধ‌্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং জেলা মাধ‌্যমিক শিক্ষা অফিসার কর্তৃক অনু‌মোদন পে‌য়ে বিভাগীয় উপ-প‌রিচাল‌কের কাছ থে‌কে কো‌নো ভুল চি‌হ্নিত হ‌য়ে রি‌জেক্ট হ‌লো, সে আবেদন‌টির ভুল ত্রু‌টি যথাযথ প্রক্রিয়ায় শুদ্ধ ক‌রে নতুন ক‌রে সাব‌মিট করার প‌রে আবার কে‌নো উপ‌জেলা মাধ‌্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং জেলা মাধ‌্যমিক শিক্ষা অফিসা‌রের অনু‌মোদন দরকার হ‌বে? এতে ক‌রে কি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অ‌ধীনে দা‌য়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা‌দের সম‌য়ের অপচয় হ‌চ্ছে না?

এটার সমাধান এমন হতে পার‌তো, ধরুন এক‌টি অনলাইন এম‌পিওর ফাইল উপ‌জেলা মাধ‌্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং জেলা মাধ‌্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছ থে‌কে অনু‌মোদন পাওয়ার প‌রে দেখা গে‌লো বিভাগীয় উপ-প‌রিচাল‌কের কা‌ছে কো‌নো সমস‌্যা ধরা পড়ে‌ছে। তখন শুধুমাত্র যে জায়গায় সমস‌্যা ধরা প‌রে‌ছে, সেই ত্রু‌টিটুকু ঠিক ক‌রি‌য়ে সেখান থে‌কেই পরবর্তী পদ‌ক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ। যেখান থে‌কে একবার অনু‌মোদন হ‌য়ে‌ছে সেখা‌নে আবার অনু‌মোদন করা‌নো কতটা যু‌ক্তিযুক্ত তা আমার কা‌ছে পু‌রোপু‌রি বোধগম‌্য নয়।

ডি‌জিটাল প্রক্রিয়ায় অনলাইনে যে‌হেতু বর্তমান এম‌পিওভু‌ক্তির আবেদন প‌ক্রিয়া চালু আছে, তাই বর্তমা‌নে এই ডি‌জিটাল সি‌স্টেম‌কে কিভা‌বে আপ‌গ্রেড ক‌রার মাধ‌্যমে একজন শিক্ষক‌কে যোগদান করার প্রথম মা‌স থে‌কেই বেত‌নের টাকা হা‌তে তু‌লে দেওয়া যায়, এ ব‌্যাপা‌রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর সং‌শ্লিষ্ট সবাইকে অত‌্যন্ত আন্ত‌রিক হওয়া উচিৎ।

একটা কথা আমা‌দের ম‌নে রাখ‌তে হ‌বে, কো‌নো ডি‌জিটাল সি‌স্টে‌মেই চিরকাল একরকমভাবে কাজ ক‌রে না। ডি‌জিটাল সি‌স্টেম সবসময় আপ‌গ্রেডেশন প্রক্রিয়ায় এগোয়। প্রতিটা সফটওয়‌্যার, প্রতিটা ও‌য়েবসাইট, প্রতিটা মোবাইল অ্যাপ নিয়‌মিত আপ‌ডেট করা হয়, কারণ পূ‌র্বের থে‌কে আরো সহজ প্রক্রিয়ায় কাজ করার জন‌্য ডি‌জিটাল সি‌স্টে‌মে আপ‌ডেটের কে‌নো বিকল্প নেই। তাই, শিক্ষক‌দের বেতন প্রা‌প্তির ম‌তো একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি বিষয়‌কে দ্রুততার সা‌থে নির্ভুলভাবে করার জন‌্য উক্ত ডি‌জিটাল সি‌স্টে‌মের নিয়‌মিত আপ‌ডেট করা উচিৎ ব‌লে আমি ব‌্যক্তিগতভা‌বে ম‌নে ক‌রি।

৩. এম‌পিওভু‌ক্তির আবেদ‌নে যে ৩৩টা কাগজ এটাচ‌মেন্ট আকা‌রে স্ক্যান ক‌রে আপ‌লোড ক‌রে দি‌তে হয়, তার‌ মধ্যে কয়টা কাগজ অতিগুরুত্বপূর্ণ তা বি‌বেচনা করা উচিৎ। আর কোন্ কোন্ কাগজ-পত্র বি‌য়োজন করা সম্ভব, তাও ভে‌বে দেখা উচিৎ।  

৩৩টা কাগ‌জের মধ্যে একটা কাগজ হ‌লো কাগ‌জে ছাপা‌নো সংবাদপ‌ত্রে প্রকা‌শিত নি‌য়োগ বিজ্ঞ‌প্তির স্ক্যান ক‌পি। এখন প্রশ্ন হ‌লো, বর্তমা‌নে এন‌টিআর‌সিএ এর মাধ‌্যমে শিক্ষক নি‌য়ো‌গের গণ‌বিজ্ঞ‌প্তি কতজন আবেদনকারী কাগ‌জের সংবাদপ‌ত্রের মাধ‌্যমে জে‌নে থা‌কে? খুব নগণ্য সংখ‌্যক হ‌তে পা‌রে অথবা কেউই না এমনও হ‌তে পা‌রে। কারণ বর্তমান ডি‌জিটাল বিপ্ল‌বের যু‌গে আবেদনকারীর প্রায় সবাই স্মার্ট ডি‌জিটাল ডিভাইসের মাধ‌্যমে অনলাইনে নি‌য়োগ‌ বিজ্ঞ‌প্তি পে‌য়ে থা‌কে এবং শুধুমাত্র অনলাইনেই আবেদন ক‌রে থা‌কে। যে ও‌য়েবসাইট থে‌কে শিক্ষকতা চাকরির আবেদন ক‌রে, সে ও‌য়েবসাইটেই গণ‌বিজ্ঞ‌প্তি পাওয়া যায়। তাহ‌লে ছাপা‌নো প‌ত্রিকার নি‌য়োগ‌ বিজ্ঞ‌প্তির স্ক্যান ক‌পি দেওয়া প্রয়োজন হয় কে‌নো সেটা আমার মাথায় আসে না, অন্তত এই যু‌গে।

বর্তমান সরকা‌রের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসি‌টি বিষয়ক মাননীয় উপ‌দেষ্টা স‌জীব ওয়া‌জেদ জয় বার বার ব‌লেন পেপার‌লেস এবং ক‌্যাশ‌লেস সোসাইটির বাস্তবায়ন করার কথা, কিন্তু এই ডি‌জিটাল যু‌গের চরম জয়জয়কা‌রের সময়ও য‌দি একজন এম‌পিওভু‌ক্তির আবেদনকা‌রী প্রিন্টেড নিউজ‌পেপার খুঁজে বের ক‌রে সেটা এটাচমেন্ট আকা‌রে যুক্ত ক‌রে দেওয়া লা‌গে, তাহ‌লে সেটা ডি‌জিটাল যু‌গের সা‌থে তাল মিলা‌তে সরকার যে পেপার‌লেস ও ক‌্যাশ‌লেস সোসাইটি গড়ার দি‌কে জোড় দি‌চ্ছে, তার বিরুদ্ধচারণ ব‌লেই আমার কা‌ছে ম‌নে হয়।

এক্ষে‌ত্রে প্রিন্টেড নিউজ‌পেপা‌রে প্রকা‌শিত নি‌য়োগ‌ বিজ্ঞ‌প্তির স্ক্যান ক‌পির প‌রিবর্তে অনলাইন নিউজ‌পেপা‌র অথবা ইপেপা‌রের স্ক্রিনশর্ট অথবা সরকা‌রি ও‌য়েসাইটে প্রকা‌শিত নি‌য়োগ‌বিজ্ঞ‌প্তির লিংক অথবা ডাউন‌লোডকপি যুক্ত ক‌রে দেওয়া যে‌তে পা‌রে ব‌লে আমি ম‌নে ক‌রি।

সরকার নি‌য়োগ‌ বিজ্ঞ‌প্তি দি‌য়ে‌ছে তারপর যথাযথ প্রক্রিয়ায় অনলাইনে আবেদন ক‌রে একজন শিক্ষকতা চাকরিপ্রা‌র্থীর সমস্ত নিয়ম নী‌তি অনুসর‌ণের মাধ‌্যমে চাক‌রি হ‌য়ে‌ছে, এখা‌নে আবার এম‌পিও আবেদ‌নে প্রতিজ‌নের নি‌য়োগ‌ বিজ্ঞ‌প্তিটা সংযুক্ত করা কতটা যৌ‌ক্তিক তা আবারও ভে‌বে দেখা উচিৎ। এ সংক্রান্ত য‌দি আইন থা‌কে, সে আইন সং‌শোধন করা যায় কিনা সে ব‌্যাপা‌রে সং‌শ্লিষ্ট নী‌তি‌নির্ধারক ও কর্তাব‌্যক্তি‌দের দৃ‌ষ্টি আকর্ষণ কর‌ছি।

৪. অনলাইনে এম‌পিও আবেদন ফরম পূরণ করার সময় য‌দি টাইপিং মিস‌টেক বা অন‌্য কো‌নো যু‌ক্তিসংগত কার‌ণে আবেদনকা‌রীর নাম, পিতা-মাতার নাম, নি‌য়োগ-‌যোগদা‌নের তা‌রিখে সামান‌্যতম ভুলও হয় তাহ‌লেও পু‌রো আবেদন রি‌জেক্ট হ‌তে দেখা গে‌ছে। একবার অনলাইন এম‌পিও আবেদন কো‌নো স্তর থে‌কে রি‌জেক্ট বা অনু‌মো‌দিত না হ‌লে, আবার দুই মাস প‌রে ৩৩টা এটাচ‌মেন্ট সহ পুনরায় আবেদন প্রক্রিয়ায় যায়।

এক্ষে‌ত্রে আমার প্রশ্ন হ‌লো, উদাহরণ স্বরূপ একজন আবেদনকা‌রীর আবেদন ফর‌মে নি‌য়ো‌গের তা‌রিখ টাইপিং মিস‌টে‌কের কার‌ণে ২৩-০৪-২০২২ এর স্থ‌লে ২৪-০৫-২০২২ হ‌য়ে‌ গে‌ছে কিন্তু এটাচমেন্ট আকা‌রে সংযুক্ত অরিজিনাল নি‌য়োগপ‌ত্রের স্ক্যান ক‌পি‌তে ২৩-০৫-২০২২ তা‌রিখ ঠিকই আছে, সে‌ক্ষে‌ত্রে কি টাইপিং মিস‌টে‌কের কার‌ণে আবেদন ফর‌মে ভুল হওয়া তা‌রিখ‌টি আলাদাভা‌বে সং‌শোধ‌নের বা এডিট করার সু‌যোগ‌ কি আবেদনকা‌রীকে দেওয়া সম্ভব নয়, অন্তত ডি‌জিটাল সি‌স্টে‌মে? নতুবা অনু‌মোদ‌নের ক্ষমতার কো‌নো স্তর থে‌কে এতটুকু ভুল সং‌শোধ‌নের সু‌যোগ র‌াখা কি অসম্ভব ব‌্যাপার? অনলাইন এম‌পিওভু‌ক্তির আবেদ‌নের ও‌য়েবসাইটে সার্ভারের সমস‌্যার কার‌ণে অনেক সময় প্রবেশ করা যায় না। এ কার‌ণেও অনেক সময় তাড়াহুড়ো কর‌তে গি‌য়ে টাইপিং মিস‌টেকসহ এটাচমেন্ট আপ‌লো‌ডেও সামান‌্য ত্রু‌টি বিচ‌্যু‌তি হ‌ওয়াটা অস্বাভা‌বিক ব‌্যাপার নয়।

এতক্ষণ এসব বিষ‌য়ে আলোচনার প্রধান কারণ যে কো‌নো মূ‌ল্যে একজন শিক্ষক যোগদান করার প্রথম মাসের ডিউটি শে‌ষেই বেতন যা‌তে উত্তোলন কর‌তে পা‌রে, এমন প্রকৃয়া যে কো‌নো ভা‌বে চালু করা উচিৎ। কর্ম‌ক্ষে‌ত্রে নিয়‌মিত কাজ করার প‌রে য‌দি ঠিকমত সম‌য়ে বেতন না পাওয়া যায় তার দু‌র্ভো‌গ অ‌নেক বেশি। এবং এর একটা সামা‌জিক ইফেক্টও আছে। একজন শিক্ষ‌কের সা‌থে শত শত শিক্ষার্থী‌দের সম্পর্ক। কো‌নো শিক্ষা প্রতিষ্ঠা‌নে যোগদান করার পর যখন শিক্ষার্থীরা দেখে যে, মা‌সের পর মাস নিয়‌মিত পাঠদান করা‌নোর প‌রেও তাঁ‌দের শিক্ষক বেতন পা‌চ্ছেন না, তাও আবার সরকার কর্তৃক নি‌য়োগকৃত চাক‌রি‌তে। তখন শিক্ষার্থী‌দের ক‌চি ক‌চি ম‌নে শিক্ষাকতা পেশা ও সরকা‌রের বেতন দা‌নের প্রক্রিয়ার প্রতি এক ধর‌নের নে‌তিবাচক ধারণা তৈ‌রি হ‌তে পা‌রে। যোগদা‌নের পর পর বেতন না হওয়ার ফ‌লে একজন শিক্ষক‌কের আত্মিয় স্বজন, পাড়া-প্রতি‌বে‌শী এমনটাও অনুমান করে ব‌সে যে, "ওনার ম‌নে হয় চাক‌রি নি‌য়ে কো‌নো সমস‌্যা আছে। তা না হ‌লে সরকার বেতন দি‌চ্ছে না কো‌নো?" কারণ মাধ‌্যমিক ও উচ্চমাধ‌্যমি‌কের এম‌পিওভুক্ত শিক্ষক‌দের বেতন দানের প্রক্রিয়ায় যে এত বে‌শি সময় লা‌গে, সে সম্প‌র্কে অনেক সাধারণ মানু‌ষের ধারনা নাই। আর যোগদা‌নের প্রথম মাস থে‌কেই বেতন না পাওয়ার ফ‌লে চরম আর্থিক কষ্ট ও মান‌সিক চরম দু‌শ্চিন্তা তো আছেই। একজন নতুন যোগদানকৃত শিক্ষ‌কের সা‌থে প‌রিবা‌রের সদস‌্যরাও এম‌পিও জ‌টিলতা ‌নি‌য়ে মারাত্মক মান‌সিক দু‌শ্চিন্তায় দিন পার ক‌রে। তাই মান‌বিক ভা‌বে দেখ‌লেও অনলাইনে এম‌পিওভু‌ক্তির প্রক্রিয়া খুব দ্রুত সম‌য়ে সম্পন্ন করা উচিৎ।

অনলাইন এম‌পিও আবেদ‌ন সহ‌জীকরণ করার ব‌্যাপা‌রে আমি যে সব আলোচনা করলাম এর থে‌কেও সহজ কো‌নো প্রক্রিয়া থাকাটা অস্বাভা‌বিক নয়। তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর নী‌তিনির্ধারক ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তা‌দের এম‌পিওভু‌ক্তি প্রক্রিয়া সহজীকর‌ণের ল‌ক্ষ্যে গ‌বেষণা মূলক চিন্তা কর‌তে হ‌বে, দ্রুত সম‌য়ে অর্থাৎ শিক্ষাকতা পেশায় যোগদা‌নের প্রথম মাস শে‌ষেই শিক্ষকদের হা‌তে বেত‌নের টাকা তু‌লে দেয়া যায়, এমন ব‌্যবস্থা অ‌তিদ্রুত বাস্তবায়ন করার জন‌্য ডি‌জিটাল সি‌স্টে‌মে নতুন নতুন আইডিয়া কা‌জে লাগা‌তে হ‌বে।

সমস‌্যা না থাক‌লে সমাধান আসে না। শুধু ডি‌জিটাল সি‌স্টেমই নয় যে কো‌নো কা‌জের সি‌স্টেমই যু‌গের সা‌থে আপ‌ডেট হয়, এমন‌কি শিক্ষা ব‌্যবস্থাও যু‌গের সা‌থে আপ‌ডেট হয়, এটাই স্বাভা‌বিক। নতুন প্রযু‌ক্তি‌কে মানু‌ষের মে‌নে নি‌তে হয়, নতুন প্রযু‌ক্তি ব‌্যবহা‌রের প্রথম দি‌তে নানা ধর‌ণের প্রতিবন্ধকতা থা‌কে, আর নিয়‌মিত কা‌জের সি‌স্টেম আপ‌গ্রেশ‌নের মাধ‌্যমে তা সহজ হয়ে যায়।

সরকা‌র কর্তৃক নি‌য়োগকৃত অন‌্যান‌্য পেশায় য‌দি যোগদা‌নের প্রথম মা‌সের ডিউটি শে‌ষেই বেতনের টাকা হা‌তে পাওয়া সম্ভব হয়, এম‌পিওভুক্ত শিক্ষকতা পেশায়ও তা সম্ভব হ‌বে ব‌লে আমি ম‌নে প্রা‌ণে বিশ্বাস ক‌রি। একজন শিক্ষক যোগদা‌নের মা‌সেই এম‌পিওভুক্ত হ‌য়ে, ঐ মা‌সের বেতন পরবর্তী মা‌সের প‌হেলা তা‌রি‌খের ভেত‌রে পা‌বে এমন ব‌্যবস্থা গ্রহণ ক‌রে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলা‌দেশ সরকা‌রের শিক্ষা মন্ত্রণালয় যুগান্তকা‌রী প‌রিবর্তন আন‌বে, এমন আশাবাদ ব‌্যক্ত ক‌রছি।  

লেখক: মো. আসিফ উদ দৌলাহ্, ট্রেড ইন্সট্রাক্টর (ক‌ম্পিউটার অ্যান্ড ইনফর‌মেশন টেক‌নোল‌জি)
ভঅঙ্গা কা‌দিরাবাদ মাধ‌্যমিক বিদ‌্যালয়, থানা: ক‌া‌জিরহাট, উপ‌জেলা: মে‌হে‌ন্দিগঞ্জ, ব‌রিশাল।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।