ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

সরকার বিদায়ের সতর্ক বার্তা উচ্চারণের আহ্বান মোশাররফের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২২
সরকার বিদায়ের সতর্ক বার্তা উচ্চারণের আহ্বান মোশাররফের ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: সরকারের বিদায়ের দুই নম্বর সতর্ক বার্তা উচ্চারণ করার জন্য জোট ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে গণমিছিল পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এ আহ্বান জানান তিনি।

‘কর্তৃত্ববাদী সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা বাস্তাবায়ন এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ কারাবন্দি সব নেতাদের মুক্তির দাবিতে’ এ গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

গণমিছিলের আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামেন ট্রাকের উপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। মিছিলটি কাকরাইল মোড়, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক হয়ে মগবাজারে পৌঁছে শেষ হয়।

আগামী ১১ জানুয়ারি গণ অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, আমাদের বিশ্বাস আজকে যারা এই গণমিছিলে যে সব জোট ও দল আমাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ঢাকায় কর্মসূচি করেছেন, সেসব দল যুগপৎভাবে আগামী ১১ জানুয়ারিও গণ অবস্থানের কর্মসূচি দেবেন। আর আমরা আহবান জানাই, এই আন্দোলনের সঙ্গে যারা একাত্মতা ঘোষণা করেছেন- আগামীতে এই গণ অবস্থান কর্মসূচিকে সফল করে দ্বিতীয় কর্মসূচি দিয়ে আপনারা এই সরকারের বিদায়ের দুই নম্বর সতর্ক বার্তা উচ্চারণ করবেন।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জনগণ বুঝতে পেরেছে এরা (আওয়ামী লীগ) গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে- এরা গণতন্ত্রকে ফেরত দেবে না। অর্থনীতিকে ভেঙে দিয়ে লুটপাট করেছে, তারা অর্থনীতিকে মেরামত করতে পারবে না। বিচার বিভাগকে স্বাধীন করতে পারবে না। সমাজের ভারসাম্য আনতে পারবে না। দেশে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠন করতে পারবে না। তার জন্য তাদের বিদায় করে দেওয়া উচিত।

তিনি বলেন, আগামী দিনে জনগণ রাস্তায় নেমে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে সরকারকে বিদায় করবে। তার নমুনা আজকের এই গণমিছিল। আর এ ধরনের স্বৈরাচার নিজেরা ক্ষমতা ছাড়ে না, তাদেরকে বাধ্য করতে হবে। তার জন্য আমাদের নেতাকর্মীরা প্রাণ দিয়েছে, সারাদেশে আমাদের ২৪ হাজার নেতাকর্মী জেলে। কিন্তু আমাদের দমাতে পারেনি। সুতরাং যতই গ্রেফতার করা হোক না কেন, রাস্তায় জনগণ নেমে গেছে, আর তাদের থামানো যাবে না।

বর্তমান সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে মন্তব্য করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, এরা ফ্যাসিস্ট এবং স্বৈরাচার। আর আন্তর্জাতিকভাবে হাইব্রিড সরকার নামে পরিচিত। তাদের সঙ্গে দেশের জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই। একারণে তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করে অলিখিত বাকশাল চালাচ্ছে।  আর সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় নির্বাচন পর্যন্ত জনগণ ভোট দিতে পারে না। তারা ভোট কেড়ে নিয়েছে এবং ভোট ডাকাতি করেছে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির  এই সিনিয়র সদস্য বলেন, শত বাধা-বিপত্তি এবং রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে আজকে আপনারা এখানে সমাবেত হয়েছেন। আর এই গণমিছিলকে সফলের জন্য যারা এসেছেন, তাদের আমি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং দলের নেতাদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই।

এ সময় তিনি দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের শেষ সীমানায় চলে গেছে বলেও মন্তব্য করেন।

এদিকে গণমিছিল উপলক্ষে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকেই ব্যানার, ফেস্টুন, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা হাতে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতা কর্মীকে নয়াপল্টনে উপস্থিত হতে দেখা যায়। এ সময় খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ এবং সরকার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে তোলেন তারা।

এছাড়া নেতাকর্মীদের মাথায় সাদা, লাল ও সবুজ ক্যাপ এবং জাতীয় পতাকা পড়ে গণমিছিলে অংশ নিতে দেখা গেছে।

অপরদিকে গণমিছিলকে ঘিরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে কঠোর অবস্থানে ছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা। সেখানে সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করেন তারা। জনসমাগম ঘটিয়ে যাতে বিএনপি কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য সার্বিক প্রস্তুতি ছিল তাদের।

শুক্রবারের গণমিছিলে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আব্দুল্লাহ আল নোমান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আমান উল্লাহ আমান, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আব্দুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির গণসমাবেশে ব্যর্থ, অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ সরকারের পদত্যাগ, অনির্বাচিত সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা বাস্তবায়ন এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ গ্রেফতার নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে গত ২৪ ডিসেম্বর দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে  গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বিএনপি। তবে, দলের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে সেই কর্মসূচি পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীনদের সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীতে গণমিছিল করেছে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা,  ডিসেম্বর ৩০, ২০২২
এমএইচ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।