ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

মুখোমুখি আ.লীগ-বিএনপি

সিলেটে ‘শান্তি’ সমাবেশ ঘিরে ‘অশান্তির’ শঙ্কা!

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩
সিলেটে ‘শান্তি’ সমাবেশ ঘিরে ‘অশান্তির’ শঙ্কা!

সিলেট: ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সিলেটে মুখোমুখি হয় দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ওই দিন খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে নগরের কোর্ট পয়েন্টে দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়, আহত হন অনেকে।

এরপর উভয় দল নানা ইস্যুতে রাজপথে সরব থাকলেও কখনো মুখোমুখি হয়নি।

প্রায় পাঁচ বছর পর আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দলীয় কর্মসূচি ঘিরে উভয় দল নামছে সিলেটের রাজপথে। আওয়ামী লীগ শান্তি কর্মসূচি নিয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এবং বিএনপি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ ১০ দফা দাবিতে নগরের রেজিস্ট্রারি মাঠে সমাবেশ করবে। উভয় কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকছেন কেন্দ্রীয় নেতারাও।  

‘আওয়ামী সন্ত্রাস, সরকারের দমন-নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে, বিরোধী দলের গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা’ দাবিতে জানুয়ারিতেই সিলেটসহ সব বিভাগীয় শহরে সমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি।  

আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টায় নগরের রেজিষ্ট্রারি মাঠে এ সমাবেশ শুরু হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমান।

সমাবেশ সফলে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সিলেটজুড়ে কর্মী সভা, পথসভা, জনসংযোগের মাধ্যমে সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগমের চেষ্টা করছেন তারা। সমাবেশের বিষয়টি অবহিত করে দলটির পক্ষ থেকে মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবরে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

একই দিনে সিলেটে ‘শান্তি সমাবেশ’করার ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। প্রথমে এই সমাবেশ বিএনপির সমাবেশস্থল রেজিস্টারি মাঠে করার ঘোষণা দেয় দলটি। তবে পরে স্থান পরিবর্তন করে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকাল ৩টায় এই সমাবেশ শুরু হবে। শান্তি সমাবেশ সফলেও প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। এই সমাবেশের মাধ্যমে রাজপথে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে চায় দলটি।  

শান্তি সমাবেশ সফলে বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় প্রস্তুতি সভা করে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ। এতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে স্ব স্ব ওয়ার্ড থেকে মিছিলসহ সমাবেশে অংশ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

একই দিনে উভয় দলের সমাবেশ ঘিরে সিলেটে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কারণে দেখা দিয়েছে সংঘাতের আশঙ্কা।

উভয় দল সিলেটের রাজপথে নিজেদের শক্তিমত্তার পরিচয় দিতে কর্মসূচি আহ্বান করেছে, এমনটিই ধারণা নগরবাসীর।

যদিও উভয় দলের নেতারা বলছেন, সিলেটে সম্প্রীতির রাজনীতি বিদ্যমান। অতীতেও কখনো কর্মসূচি নিয়ে উভয় দলের সংঘাত হয়নি। সেই কৃষ্টি এবারও বজায় থাকবে।

তবে উভয় দলের কর্মসূচি নিয়ে উদ্বিগ্ন পুলিশ প্রশাসন। তাই সংঘাত এড়াতে সিলেটে ঢেলে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দুই দলের সমাবেশ ঘিরে সাজোয়া যানসহ মাঠে অবস্থান করবে অন্তত ৩ শতাধিক পুলিশ সদস্য।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) সুদীপ দাস বলেন, দুই দলের সমাবেশ ঘিরে যাতে কোনো ধরণের অস্প্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, এ কারণে নগরের মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নগরের প্রবেশদ্বারগুলোতে তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে। সমাবেশ চলাকালে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকবে।

দুই বড় দলের সমাবেশ ঘিরে মিছিলের কোনো রোডম্যাপ করা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে  সুদীপ দাস বলেন, আসলে রোড ম্যাপের বিষয়টি আগেও কখনো করিনি। এবারও থাকছে না। তবে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবে।  

এ বিষয়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমরা সব সময় শান্তির পক্ষে। বিএনপি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করলে সংঘাত হবে না। আমরা চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক। তারা ২০১৮ সালে সন্ত্রাস করেছে, এর জবাবও মানুষ ভোটের মাধ্যমে দিয়েছে।  

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ওপর বিশ্বাস রাখে। কিন্তু বিএনপি বন্দুকের নলের ওপর বিশ্বাসী। সিলেট সম্প্রীতির নগরী হিসেবে আমরা চাই, সৌহার্দ্য বজায় রেখে যেন বিএনপি কর্মসূচি পালন করে। আমাদের সমাবেশ রেজিস্ট্রারি মাঠে ছিল। তারা বলেছে, সেখানে সমাবেশ ঘিরে প্রচার-প্রচারণা, পোস্টার বিতরণ করেছে। যে কারণে স্থান পাল্টে আমরা শহীদ মিনারে শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেছি।

জেলা আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় শান্তিপূর্ণ রাজনীতির পক্ষে। রাজনৈতিক সহাবস্থানের পক্ষে। তাই আমরা উদারতা দেখিয়ে নিজেদের কর্মসূচির স্থানও পরিবর্তন করেছি। এখন বিএনপি যদি বিশৃঙ্খলা না করে, তবে আমাদের শান্তি সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হবে।

সমাবেশ ঘিরে বিশৃঙ্খলা হবে না জানিয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে চাই। অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যেতে চাই। নেতাকর্মীদেরও বলেছি, সমাবেশের দিকে নজর দিতে। কোনো বিশৃঙ্খলায় না জড়াতে। যদি সমাবেশ বানচাল করতে হঠকারিতা হয়, সেটা জনগণ প্রতিহত করবে। তবে অতীতে সমাবেশ ঘিরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির কোনো সংঘাত হয়নি, এবারও হবে না। কেননা, সিলেট শান্তির নগরী। এখানের রাজনৈতিক কৃষ্টি অন্য জায়গার তুলনায় আলাদা।  

বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে চায় জানিয়ে দলের মহানগরের সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, বিগত দিনের মতো শান্তি-শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে বিএনপি বিভাগীয় গণ সমাবেশ করেছে। শনিবারের সমাবেশও বিশালতর হবে। কেউ ‘গায়ে গা, পায়ে পা’ দিয়ে ঝগড়া করতে আসবে না বলে আমি বিশ্বাস করি। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে বলে আশাবাদী আমি।

উভয় দল শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও গত বছরের ৬ নভেম্বর রাতে জেলা বিএনপির নেতা আ ফ ম কামাল হত্যাকাণ্ড ঘিরে রাতে নগরের রিকাবীবাজারে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদেও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। যেটা কোনো সমাবেশ কেন্দ্রিক ছিল না।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩
এনইউ/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।