ঢাকা: আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মাঠের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। সরকারের পদত্যাগের দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে বিএনপি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি আন্দোলনে নেমেছে বিএনপি। এরই মধ্যে এসব দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি দিয়ে আসছে বিএনপি ও এ দলটির নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত দলগুলো।
এদিকে বিএনপিকে ফাঁকা মাঠ ছেড়ে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। রাজনীতির মাঠ যাতে বিএনপির দখলে চলে না যায়, সে বিষয়ে আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সতর্ক অবস্থানে। আর এ কারণে আওয়ামী লীগ মাঠের রাজনীতিতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে সার্বক্ষণিক সক্রিয় রাখতে চায়। এরই অংশ হিসেবে বিএনপির যেদিন কর্মসূচি থাকছে, সেদিনই পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে দলের নেতাকর্মীকে মাঠে নামানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগ তাদের কর্মসূচির নাম দিয়েছে শান্তির সমাবেশ। এরই মধ্যে বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচির দিনই আওয়ামী লীগ ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে এ কর্মসূচি দিয়ে মাঠে অবস্থান নিয়েছে।
মূলত বিএনপি যাতে মাঠ দখলে নিতে না পারে সে জন্য আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচি। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নৈরাজ্য, অপরাজনীতি ও অব্যাহত দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এ শান্তি সমাবেশ করা হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অর্থাৎ চলতি বছর জুড়েই এ ধরনের লাগাতার কর্মসুচি দিয়ে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা জানান, বিএনপির অতীত কর্মকাণ্ডের অভিজ্ঞতা থেকেই আওয়ামী লীগ সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি যাতে আন্দোলনের নামে ফাঁকা মাঠের সুযোগ নিয়ে নাশকতা, সহিংসতার পথে ফিরে যেতে না পারে, দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাতে না পারে সে কারণে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের কথা বললেও সহিংসতার দিকেই যাবে বলেও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের ধারণা।
ওই নেতারা জানান, অতীতে ২০১৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের নামে দেশে ব্যাপক সংহিসংতা, নাশকতা চালিয়েছিলো। ওই নির্বাচন বর্জনের পর ২০১৫ সালেও বিএনপি একই ধরনের নাশকতা চালায়। এসব ঘটনায় প্রায় ২০০ মতো মানুষ নিহত, অনেকে আহত হন, সম্পদেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। বিএনপি আন্দোলনের নামে আবারও ওই ধরনের ঘটনার জন্ম দেবে না বা ওই পথে যাবে না এ নিশ্চয়তা নেই।
গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশকে করে বিএনপি ওই ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল। সরকার ও আওয়ামী লীগের কঠোর অবস্থানের কারণে সে পরিকল্পনা সফল হয়নি। তাছাড়া অন্য কোনো গোষ্ঠীর আন্দোলনের ওপর ভর করার সুযোগও যাতে বিএনপি নিতে পারে সে দিকে দৃষ্টি রেখেছে সরকার ও আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, অতীতে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও আদালতের রায় কার্যকরের সময় জামায়াত-শিবিরসহ স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠীর সহিংসতা, নাশকতাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে বিএনপি। হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনসহ কিছু কিছু ঘটনাকে তারা সরকারের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে।
একইদিকে, প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের বিপরিতমুখী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠার আশঙ্কা রয়েছে। শুধু তাই নয়, সংঘাত, সংঘর্ষেরও আশঙ্কা করছেন অনেকে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচির দিন সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, যশোর, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে। আওয়ামী লীগের অভিযোগ তাদের পূর্ব ঘোষিত শান্তির সমাবেশের ওপর বিএনপির কর্মীরা আক্রমণ করেছেন। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি মহানগরে পদযাত্রা করবে। এদিন আওয়ামী লীগেরও কর্মসূচি থাকতে পারে। এ কর্মসুচিকে কেন্দ্র করেও উত্তপ্ত পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে। আওয়ামী লীগ ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি চালিয়ে যাবে এটা দলের নেতারা বারবার বলে আসছেন। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন তারা আগ বাড়িয়ে সংঘর্ষে জড়াবে না। কেউ আক্রমণ করলে ছাড় দেওয়া হবে না বলে দলের ওই নেতারা হুঁশিয়ারি দেন।
এদিকে আন্দোলনের নামে বিএনপি কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে যাবে বলে সরকারের সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
সূত্রগুলো জানায়, গত ১১ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন স্থানের ঘটনা থেকে সরকারের নীতি নির্ধারকরা ধারণা করছেন আগামীতে বিএনপি-জামায়াত আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। আগের মতো একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি চেষ্টা চালাতে পারে। ওই ঘটনার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেন বিএনপি-জামায়াত আবারও আগুন সন্ত্রাস শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী আগামীতে কঠোর পদক্ষেপে যাবে বলেও সূত্রগুলো জানায়।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এখন বিএনপি যতই নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের কথা বলুক সামনে খারাপের দিকে যাবে, সন্ত্রাসের ধারায়, সহিংসতার পথে ফিরে যাবে। অতীতেও তারা যেটা করেছে। জনদুর্ভোগ তৈরি, সম্পদের ক্ষতির পথেই বিএনপি ধাবিত হবে। কারণ তারা যে দাবিতে আন্দোলনের কথা বলছে তাতে জনগণের সমর্থন নেই, জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারছে না। আমরা আগামী নির্বাচন পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকবো, এটা কোনো পাল্টা কর্মসূচি না। কেউ আক্রমণ করতে আসলে অবশ্যই মোকাবিলা করা হবে। তবে আমরা সহজেই কারো সঙ্গে সংঘাতে জড়াবো না।
এ বিষয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আসলে বিএনপি একটা দেশ বিরোধী গোষ্ঠীর অংশ। দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়াই তাদের কর্মসূচি যেটা জিয়াউর রহমান শুরু করেছিল। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে বিএনপি। জনগণ এটা বোঝে, জনগণের কাছে প্রমাণিত তারা দেশ বিরোধী তাই তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে, হবে। করোনা পরিস্থিতির পর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুষ্ঠুভাবে দেশকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এটা বিএনপির ভালো লাগছে না। কিন্তু জনগণ অনেক সচেতন তাই বিএনপির কোনো প্রচেষ্টাই সফল হবে না। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা প্রতিহত করতে আইনশঙ্খলা রক্ষাবাহিনী তৎপর আছে। দেশ বিরোধী যে কোনো কর্মকাণ্ড তারা শক্ত হাতে প্রতিহত করবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩
এসকে/জেএইচ