ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

যুবলীগ নেতা হত্যা: পরিচয় মিলেছে বোরকা পরে গুলি করা ৩ জনের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৯ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২৩
যুবলীগ নেতা হত্যা: পরিচয় মিলেছে বোরকা পরে গুলি করা ৩ জনের

কুমিল্লা: কুমিল্লায় যুবলীগ নেতা জামাল হোসেনকে যারা বোরকা পড়ে এসে গুলি করেছিলেন, তাদের পরিচয় মিলেছে।

তারা হলেন- দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলু (৩১), আরিফ ও কালা মনির।

 

এদিকে মঙ্গলবার (৯ মে) র‌্যাবের অভিযানে দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলু (৩১) ও সাদ্দাম মাস্টার (৩৩) এবং পুলিশের অভিযানে মাজহারুল ইসলাম সৈকত ধরা পড়েছেন।  এনিয়ে এ ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট নয়জনকে গ্রেফতার করা হলো।  

এছাড়া হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গুলি, রিভলবার ও পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে।  

বুধবার (১০ মে) পৃথক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কুমিল্লার পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান ও র‌্যাব-১১ সিপিসি-২ এর অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।

মেজর সাকিব হোসেন জানান, ৭ মে তিনজনকে ধরার পর ৯ মে বিকেলে ও রাতে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন বোরকা পরে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া দেলোয়ার। তিনি দাউদকান্দি থানার চর চারুয়া এলাকার মৃত জাহেদ আলীর ছেলে। তার নামে দুটি হত্যা মামলাসহ মোট ছয়টি মামলা রয়েছে। এছাড়া তিতাসের গাজীপুর এলাকা থেকে মো. সাহিদুল ইসলাম ওরফে সাদ্দাম মাস্টারকে (৩৩) আটক করা হয়েছে। তিনি এ হত্যা মামলার আসামিদের দেশের ভেতরে ও বাইরে পালানোর পথ করে দিয়েছিলেন। তিনি তিতাস বড় গাজীপুর এলাকার মো. ফজলুল হকের ছেলে।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) এ কর্মকর্তা বলেন, দেলোয়ার আমাদের জানিয়েছেন, গত ৩০ এপ্রিল বিকেলে দাউদকান্দির জিয়ারকান্দি এলাকার মাছের প্রজেক্টে (প্রজেক্টের মালিক আরিফ ও সুজন) কাজ করার সময় আরিফ (মামলার দুই নম্বর আসামি) তাকে গৌরিপুর পাওয়ার হাউজে নিয়ে যান। সেখানে একটি কালো মাইক্রোবাস ও ড্রাইভারসহ মনির (নয় নম্বর আসামি) ও জিয়ারকান্দির আবু মিয়ার ছেলে শাহ আলী ওরফে আল আমিন অপেক্ষা করছিলেন। আরিফ পরে দেলোয়ারকে বলেন, আজ আমরা জামালকে হত্যা করব। জামাল আগে আমার ও তোর অনেক ক্ষতি করেছে। বেঁচে থাকলে আমাদের আরও ক্ষতি করবে। আমাদের ভয়ের কিছু নেই। আমরা সম্পূর্ণ পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করব এবং কাজ শেষে কিছুদিনের জন্য কুমিল্লার বাইরে থাকব। এছাড়া এ কাজ শেষে তোর ঋণ পরিশোধ ও পরিবার চালানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়া হবে।

আরও জানা যায়, দেলোয়ার টাকার প্রয়োজনে ও পূর্ব শত্রুতার জেরে জামালকে হত্যা করতে রাজি হয়ে যান। আরিফ ও শাহ আলী গাড়ি থেকে নেমে মোবাইল ফোনে কয়েকজনকে কল করে নির্দেশনা দেন। তবে এ ব্যাপারে দেলোয়ারকে তারা কিছুই বলেননি। ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আরিফ সিএনজি চালিত একটি অটোরিকশার চালককে ফোন দিয়ে পাওয়ার হাউজের সামনে নিয়ে আসেন। এসময় আরিফ নিজে একটি পিস্তল নেন এবং দেলোয়ার ও কালা মনিরকে একটি করে পিস্তল দেন। পরে দেলোয়ার, আরিফ ও কালা মনির বোরকা পরে পিস্তলসহ অটোরিকশায় উঠে গৌরিপুর বাজারের উদ্দেশে রওনা হন। তারা শিকদার মেডিকেলের পাশের রাস্তা (গৌরিপুর বড় মসজিদ রোড) দিয়ে কিছু দূর গিয়ে অটোরিকশা থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করেন। পথে আরিফ কয়েকজনকে ফোন করে জামালের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হন। প্রতিনিয়ত ফোনে তাদের জামালের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে বলেন।

মেজর সাকিব আরও বলেন, ঘটনাস্থলে আসার পর তারা জামালকে দেখেই গুলি করে দ্রুত পালিয়ে যান। পরে তারা বোরকাগুলো খুলে বালুর মাঠের একটি ঝোপের মধ্যে রেখে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক গৌরিপুর মা মোটরস অ্যান্ড সার্ভিসিং সেন্টারের সামনে চলে যান। যেখানে শাহ আলী আগে থেকেই মাইক্রোবাস নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। পরে তারা চান্দিনায় আসার পর আরিফ তার পরিচিত এক ব্যক্তির কাছে অস্ত্রগুলো দিয়ে যান। ওই ব্যক্তির ভাড়া করা মাইক্রোবাসে করে আরিফ, কালা মনির, দেলোয়ার ও শাহ আলী নোয়াখালী চলে যান। ১ মে তারা ওই মাইক্রোবাসে করে আবার চান্দিনায় আসেন এবং বিপদ আঁচ করতে পেরে  আবার নোয়াখালী চলে যান। নোয়াখালীতে থাকাকালে ২ মে সকালে মনির তাকে (দেলোয়ারকে) জানান যে আরিফ বিদেশ চলে গেছেন। এরপর মনির আর দেলোয়ার ৮ মে পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেন। একই অবস্থানে বেশি দিন থাকলে গ্রেপ্তার হতে পারেন, এ ভয়ে ৯ মে বিকেলে দেলোয়ার তার খালার বাসা থেকে বের হয়ে যাত্রাবাড়ী এলাকায় অবস্থায় নেন। এসময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে একই দিন রাতে দেলোয়ারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সাদ্দামকে গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সাদ্দাম জানান, জামাল হত্যার ঘটনা সম্পর্কে তিনি কিছু জানতেন না। হত্যাকাণ্ডের পর গত ১ মে শাকিল (এজাহারভুক্ত ছয় নম্বর আসামি) তাকে ফোন দিয়ে আসামিদের পলায়নের ব্যাপারে সাহায্য চাইলে তিনি শাকিলকে সাহায্য করতে রাজি হন। শাহ আলী (পাসপোর্টে নাম আল-আমিন) গত ৩ মে দুবাইয়ের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। র‌্যাবের হাতে আটক আসামিদের দাউদকান্দি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান জানান, আসামিরা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গুলি, পিস্তল এবং একজন অন্যজনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য যেসব মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, সেগুলো দেবিদ্বারের নবিয়াবাদ গ্রামের মাজহারুল ইসলাম সৈকতের কাছে রেখে আসেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামিরা তার পূর্ব পরিচিত। হত্যাকাণ্ডের পর আসামিরা নিমসার এলজি ফিলিং স্টেশনের সামনে তাকে গুলি ও পিস্তল ভর্তি ব্যাগ দেন। এরপর তিনি আসামিদের সঙ্গে গাড়িতে ওঠেন। পরে তিনি সেগুলো চান্দিনা উপজেলা পরিষদের ২০০ গজ পূর্বে মহাসড়কের দক্ষিণ দিকের ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে রাখেন। তাকে গ্রেফতারের পর তার দেওয়া তথ্য মতে ওই স্থানে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল, একটি রিভলবার, ২৪টি গুলি, একটি নেকাব ও একটি জিন্সপ্যান্ট উদ্ধার করা হয়।  
তিনি জানান, আসামি সৈকত ও পলাতক আসামি সুজন, আরিফ, কালা মনির, শাহ আলীসহ অজ্ঞাতনামা তিন-চারজনের নামে চান্দিনা থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়েছে। র‌্যাব ও পুলিশের হাতে আগে ধরা পড়া ছয়জন তিনদিনের রিমান্ডে আছেন। নতুন করে র‌্যাব ও পুলিশের হাতে ধরা পড়া তিনজনের জন্যও রিমান্ড আবেদন করা হবে।

এর আগে ৩০ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরিপুর বাজারে হত্যা করা হয় জেলার তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেনকে। তিনজন বোরকা পরিহিত ব্যক্তি তাকে গুলি করে হত্যা করেন। জামাল হোসেন তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে। তিতাস উপজেলা বাড়ি হলেও তিনি ব্যবসা করতেন পাশের দাউদকান্দি উপজেলার গৌরিপুর বাজারে। বাজারের পাশে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। জামাল হোসেন হত্যাকাণ্ডের তিনদিনের মাথায় দাউদকান্দি থানায় মামলা দায়ের করেন তার স্ত্রী পপি আক্তার। মঙ্গলবার (২ মে) রাতে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলায় নয়জনকে এজাহারনামীয় ও সাত-আটজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২৩
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।