ঢাকা: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা ও সালথা) আসন থেকে নির্বাচন করতে চান নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. জামাল হোসেন মিয়া। এজন্য তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।
রোববার (১৯ নভেম্বর) সকাল ১১টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তিনি।
মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পর গণমাধ্যমকর্মীদের জামাল হোসেন মিয়া বলেন, আমি ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা ও সালথা) আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী। আজকে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি। আমি ছাত্রলীগ করেছি, ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছি। দক্ষিণবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র সংসদের নেতৃত্ব দিয়েছি। আমি যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলাম। এখন আমি নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি এবং ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আমার পরিবারের ওপর অনেক অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে, অনেক হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন। তিনি জন্মলগ্ন থেকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ করে মৃত্যু অবধি আওয়ামী লীগের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। আমি জন্ম সূত্রে আওয়ামী লীগ করি। আমি বিশ্বাস করি, নেত্রী আমাকে মূল্যায়ন করবেন।
তিনি আরও বলেন, উনি (প্রধানমন্ত্রী) তৃণমূলের সঙ্গে যার সম্পর্ক রয়েছে, যারা ত্যাগী, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যার সম্পর্ক রয়েছে, তাদের মূল্যায়ন করেন। আমি নগরকান্দা-সালথার জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য সর্বদা কাজ করে যাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন। আমি যদি মনোনয়ন পাই, ইনশাআল্লাহ এ আসন বিপুল ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে নগরকান্দা-সালথার জনগণ উপহার দেবে।
জামাল হোসেন মিয়া ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতি করেছেন। রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তিনি বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য, নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদকও ছিলেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স অব সোশ্যাল সায়েন্স অর্জন করা জামাল হোসেন মিয়া বর্তমানে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক এবং জারিন কনস্ট্রাকশনের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত। এছাড়া তিনি শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের পরিচালক, ফরিদপুর জেলা শেখ জামাল ক্রীড়া চক্রের সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সদস্য, ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সদস্য, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সদস্যসহ স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
জামাল হোসেন মিয়ার বাবা প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সহিদ মিয়া মুক্তিযুদ্ধকালীন নগরকান্দা উপজেলার কমান্ডার ছিলেন। এছাড়া তিনি নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, তালমা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) পাঁচবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নগরকান্দা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
জামাল হোসেনের মা দেলোয়ারা বেগমও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তালমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তার ভাই কামাল হোসেন মিয়া। বোন রিক্তা আক্তার নগরকান্দা উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আওয়ামী পরিবারে বেড়ে ওঠা জামাল হোসেন এখনো আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের বার্তা নিয়ে ছুটছেন উপজেলার শহর থেকে গ্রামে। শুধু রাজনীতিতেই নয়, সামাজিক কাজেও উপজেলাব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। দেশের নানা ক্রান্তিকালে মানবিক সেবা দিয়ে তিনি ইতোমধ্যে নগরকান্দা-সালথার গণমানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বার্তা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে দ্বারে দ্বারে ছুটছেন প্রতিনিয়তই।
শুধু রাজনীতির ভেতরেই সীমাবদ্ধ নন জামাল হোসেন মিয়া। একজন মানবিক সহানুভূতিশীল মানুষ হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে তার। বিশেষ করে করোনায় যখন জনজীবন স্থবির হয়ে গিয়েছিল তখন প্রায় ১১ হাজার পরিবারের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন তিনি। করোনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করেন। এছাড়াও প্রতিবছর রমজানে প্রায় দুই হাজার পরিবারের মধ্যে ইফতার সামগ্রী বিতরণ, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় তিন হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী ও পাঁচ হাজার অসহায় পরিবারের মাঝে নতুন কাপড় বিতরণ করেন তিনি।
এছাড়াও এলাকার পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই, খাতা, কলমসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেন। শীতে অসহায় শীতার্তদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ, এলাকার ভাঙা রাস্তা মেরামত ও সাঁকো-পুল এবং মাটির রাস্তা নির্মাণ করে এলাকায় ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন। এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় সরকারি বরাদ্দ ছাড়াই সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে ব্রিজ, কালভার্ট, বাঁশের সাঁকো, কাঁচা রাস্তা, মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ, স্কুল নির্মাণ, গরিব অসহায় শিক্ষার্থীদের এককালীন নগদ অর্থ সহায়তা, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে নগদ অর্থ সহায়তা ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ ছাড়াও দুই উপজেলাবাসীর জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করছেন তিনি। সামাজিক নানা উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই জড়িত রয়েছেন তিনি। উপজেলার অসহায় গৃহহীনদের কাঁচা-পাকা ঘর নির্মাণে অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন।
প্রত্যন্ত ইউনিয়নগুলোর মানুষের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে এক কাতারে দাঁড়িয়ে রাস্তাঘাট উন্নয়ন, মাদক নিয়ন্ত্রণ, করোনাকালে কর্মহীনদের মধ্যে চাল, আলু বিতরণ, আগুনে পোড়া পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া, অসুস্থ ব্যক্তিদের আর্থিক সাহায্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ নানাবিধ জনকল্যাণমূলক কাজ করে এলাকায় আলো ছড়াচ্ছেন তিনি।
শনিবার (১৮ নভেম্বর) সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের মাধ্যমে দলটির মনোনয়ন ফরম বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়। এদিন শেখ হাসিনার পক্ষে গোপালগঞ্জ-৩ আসনের (টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া উপজেলা) মনোনয়ন ফরম কেনেন দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম উদ্দীন আহমদ।
২১ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কেনা ও জমা দেওয়া যাবে। অনলাইনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা যাবে। এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরমের দাম ৫০ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২৩
এসসি/আরআইএস