ঢাকা, সোমবার, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

খালেদা জিয়ার ৫ বারের আসন এবার নাসিমের?

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২৩
খালেদা জিয়ার ৫ বারের আসন এবার নাসিমের?

ফেনী: বিএনপির এক সময়ের ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত ফেনী-১ (ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম) আসনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ আসন থেকে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ৩ বার প্রধানমন্ত্রী এবং ২ বার বিরোধীদলীয় নেত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

 

আর সেই আসনে এবার ভিন্ন মোড় নিতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আলাউদ্দিন আহমেদ নাসিম ভোটে স্মরণকালের ইতিহাস গড়বেন বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীরা।  

একই আসন থেকে সংসদ নির্বাচন করে জাসদ নেত্রী শিরীন আখতার ২ বার সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এবারের নির্বাচনে তিনিও এ আসনে প্রার্থী।  

দেশের জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব, ভৌগোলিক অবস্থান এবং নানা কারণে ফেনীর সীমান্তবর্তী উপজেলা পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী নিয়ে গঠিত ফেনী-১ আসনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।  

১৯৭৩ সালের পর থেকে এ আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেননি।  

আওয়ামী লীগের টানা ১৫ বছর শাসনকালে ২০০৮ সালের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ফাইজ আহমেদ খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটে পরাজিত হন। এরপর ২০১৪ সাল ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোট থেকে শিরীন আখতার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।  

স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে এ অঞ্চল থেকে নির্বাচিত হন প্রখ্যাত সাংবাদিক আবদুস সালাম, অবিভক্ত বাংলার প্রথম নারী মুসলিম গ্র্যাজুয়েট বেগম সামছুন্নাহার, হাবিবুল্লাহ বাহার চৌধুরীর মত খ্যাতিমান বাঘা বাঘা ব্যক্তিরা।  

যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এ আসনে আওয়ামী লীগ হেভিওয়েট কোনো প্রার্থী না দিতে পারায় দলীয় অবস্থান তলানিতে পড়তে থাকে। দীর্ঘ কয়েক যুগ পর সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ নাসিম আগামী নির্বাচনে প্রার্থিতায় আগ্রহের কথা জানালে ভোটের হিসাব নিকাশে নতুন সমীকরণ শুরু হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ আসন থেকে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে সর্বপ্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন খ্যাতিমান সাংবাদিক এবিএম মূসা।  ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে জাফর ইমাম বীরবিক্রম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি একই আসনে ১৯৯১, ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে লাঙ্গল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।  

২০০১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে তিনি একই আসনে খালেদা জিয়ার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। ফেনী-১ আসনে ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাকারিয়া ভূঞাকে পরাজিত করে খালেদা জিয়া সর্বপ্রথম বিজয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।  

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম ওয়াজী উল্লাহ ভূঞাকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী ও ১৯৯৬ সালের পুনর্নির্বাচনে প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রীর দায়িত্ব পালন করেন খালেদা জিয়া।  

২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাফর ইমামকে পরাজিত করে ৩য় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দেশজুড়ে বিএনপির দলীয় প্রার্থীদের অবস্থান নড়বটে থাকলেও ফেনী-১ আসনে বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফাইজ আহমেদকে পরাজিত করে প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রীর দায়িত্ব পালন করেন খালেদা জিয়া।  

পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে এ আসনে ১৪ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার।  

২০১৮ সালে বিএনপি প্রার্থী রফিকুল আলম মজনুকে পরাজিত করে শিরীন আখতার দ্বিতীয় মেয়াদে সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলেন, ফেনী-১ আসনটি ১৯৭৩ সালের পর থেকেই আমাদের হাতছাড়া। বিগত ১৫টি বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় এখন নৌকার নেতাকর্মীরা অনেক বেশি সংগঠিত ও শক্তিশালী। আগামী নির্বাচনে ফেনী-১ আসনে নৌকার প্রার্থী দিয়ে এ আসনটি উদ্ধার করা না গেলে স্থায়ীভাবেই এটি হাতছাড়া হয়ে যাবে।  

ফেনী-১ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী প্রার্থিতার দৌড়ে ছিলেন ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ আবদুল্লাহ, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মিজানুর রহমান মজুমদার, ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেলসহ অনেকেই।  

তবে বছরের পর বছর নির্বাচনে প্রার্থীবিমুখ থাকা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম শেষ পর্যন্ত নৌকার টিকিট নিশ্চিত করেছেন। ভোটের মাঠে নেমেও ব্যাপক সাড়া জুগিয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মীরাও উচ্ছ্বসিত হয়ে তার জন্য কাজ করছে।  

ফেনী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুল বশর মজুমদার তপন বলেন, আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম এসব এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। বড় চাকুরে হওয়ার পরও গ্রামে নিয়মিত যাতায়াত থাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার একটি সম্পর্ক রয়েছে।  নৌকা প্রতীকে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে শুধু আওয়ামী লীগ নয়; সব দলের মানুষ তাকে ভোট দেবে।  

তবে বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, ফেনী-১ আসনে বিগত ২টি মেয়াদে জাসদ নেত্রী শিরীন আখতার এমপির দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি এ সময়ে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন দৃশ্যমান করতে পারেননি। বিশেষ করে এ এলাকার প্রধান সমস্যা নদী রক্ষা বাঁধের কোনো স্থায়ী সমাধান করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। পক্ষান্তরে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এ এলাকা বিএনপির ভোটদূর্গ বলেই খ্যাত। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে, বিএনপি অংশ নিলে এখানে কারো জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই।  

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম বলেন, বিগত নির্বাচনগুলোতেও বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার জন্য বলে হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে আমার আগ্রহ ছিল না। এবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও স্থানীয় ভোটারদের অনুরোধে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মনোনয়ন চেয়েছি। তিনি চাইছেন বলে আমি ভোট করছি। এখানে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা দলীয় প্রার্থী, আর সাধারণ ভোটারদের প্রত্যাশা যিনি এলাকার উন্নয়ন কাজে আগে থেকেই জড়িয়ে ছিলেন এমন ব্যক্তি প্রার্থী হোক। এক্ষেত্রে আমি দুই অংশেরই প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছি।  

এদিকে ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য জাসদ নেত্রী শিরীন আখতার বলেন, ফেনীর এ অঞ্চলে খালেদা জিয়া বারবার নির্বাচিত হলেও তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ এলাকার উন্নয়ন করার জন্য আমাকে ২০১৪ সালে পাঠিয়েছেন। এমপি হওয়ার পর রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। ফেনী-১ আসন সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের সাথে চমৎকার সমন্বয় থাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি এসব এলাকার মানুষের আস্থা বেড়েছে। এখন মানুষ উন্নয়নের সঙ্গে আছে। আমাদের সঙ্গে আছে।

ফেনীর সীমান্তবর্তী উপজেলা ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া নিয়ে জাতীয় সংসদের ২৫৬ নং আসন ফেনী-২ গঠিত। সর্বশেষ হিসেব মতে, তিন উপজেলায় ১ লাখ ৮২ হাজার ৭৫৯ জন পুরুষ ভোটার ও ১ লাখ ৭৩ হাজার ৬৯৭ জন নারী ভোটার রয়েছে। এ আসনে সর্বমোট ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৪৫৬ জন ভোটার ও ১১৫ টি ভোটকেন্দ্র এবং ৫৬০টি ভোট কক্ষ রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২৩
এসএইচডি/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।