মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার কালকিনিতে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের সমর্থকদের মিছিলে বোমা হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুর হক বেপারীকে প্রধান আসামি করে ৫৭ জনের নামে মামলা করা হয়।
শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কালকিনি থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও মামলা নিতে পুলিশের গড়িমসি ছিল বলে অভিযোগ করেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম।
কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নামজুল হাসান বলেন, বোমা হামলার ঘটনায় স্বতন্ত্রপ্রার্থীর সমর্থক কাজী মোফাজ্জেল হোসেন বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। পুলিশ অভিযোগটি আমলে নিয়ে মামলাটি রেকর্ড করেছেন। এতে ৫৭ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকি আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন- লক্ষ্মীপুর এলাকার খলিলুর তালুকদারের ছেলে এবাদুল ইসলাম (২৫) ও একই এলাকার জব্বার করিকরের ছেলে ইমরান হোসেন (২৬)।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের সমর্থকরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের মৃধার মোড় থেকে হাবিবুর সরদারের বাড়ি পর্যন্ত গেলে নৌকার এজেন্ট ফজলুর হক বেপারীর লোকজন তাদের বাধা দেন। এ সময় নৌকা নৌকা স্লোগান দিয়ে মিছিলে অতর্কিত কয়েকটি হাতবোমা নিক্ষেপ করা হয়। পরে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় একটি মাইকও ভাঙচুর করা হয়। এতে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেনসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করা হলেও পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম বলেন, নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে লক্ষ্মীপুরে আমাদের মিছিলে বোমা হামলা করেছে। লক্ষ্মীপুরে এর আগেও এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ফজলুর হক বেপারী করেছেন। পুলিশকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বারবার বলা হলেও পুলিশ নেয়নি। ওই সন্ত্রাসীর (ফজলুর হক) নির্দেশনায় আবারও বোমা হামলা হলো। বিকেলে মিছিলে বোমা হামলার পরে রাতে সমর্থকদের বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। এসবই নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফজলু।
পুলিশের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে তাহমিনা বেগম আরও বলেন, অভিযোগ দেওয়ার পরেও পুলিশ মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করছে না। আসামিরা নৌকার প্রচারণা চালাচ্ছে। যারা বোমা হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। নয়তো নির্বাচনে এই এলাকায় সহিংসতা কমবে না।
মামলার বাদী কাজী মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, আমাদের মিছিলে পরিকল্পিতভাবে বোমা হামলা করা হয়েছে। হামলার মূল পরিকল্পকারী ফজলুর হক বেপারীসহ ৫৭ জনকে আসামি করে এজাহার দিলেও পুলিশ মূল অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অনীহা করছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের জোড় দাবি জানাচ্ছি।
ফজলুর হক বেপারী লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান। তার স্ত্রী মৌসুমী হক এই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ঈগলের লোকজন আমাদের লক্ষ্য করে বোমা মারেন। এতে আমাদের লোকজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তারাও থানায় লিখিত অভিযোগও দেবেন। পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। তারা অপরাধ করে আমার দিকে দোষ দিচ্ছেন। আমরা শান্তিপূর্ণ নৌকার প্রচারণায় আছি।
উল্লেখ্য, ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। আবদুস সোবহান গোলাপ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ আসনে প্রথমবার সংসদ সদস্য হন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২৩
এসএম