সিলেট: ভোটের আগে বিদ্যুৎ ইস্যুতে নৌকা নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন হাবিবুর রহমান হাবিব। এই ইস্যুতে সংসদে কথা বলায় ভোটের মাঠে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তার।
এ কারণে ভোটাররা শেষ মুহূর্তে ট্রাকে ঝুঁকছেন। এমনিতে সিলেট-৩ আসনে হাবিব পাশে পাননি আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশকে। শেষ মুহূর্তে যোগ হয়েছে বিদ্যুৎ ইস্যু। এসবের পরও এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) প্রয়াত মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর পরিবার ও তার অনুসারীরা হাবিবের বিপক্ষে থাকার বিষয়টি ভোটের মাঠে আলোচনায় ওঠে এসেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোটারদের অনেকে বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে উপ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবকে ভোট দিয়ে সংসদে পাঠালাম। তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে সম্পূরক বাজেট বক্তৃতায় আরেক দফা বিদ্যুৎ বিল বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। অথচ নিত্যপণ্যের দামে মানুষের নাভিশ্বাস ছুটছে, সংসার চালানো কষ্টসাধ্য, তখন সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি গণমানুষের বিপক্ষে গিয়ে কথা বলেছেন। তিনি লন্ডনে ছিলেন, এটাতো লন্ডন-আমেরিকা না?
গত বছরের জুনে সংসদে দাঁড়িয়ে সম্পূরক বাজেট বক্তৃতায় হাবিবুর রহমান হাবিব বলেছিলেন, আমাদের উচিত বিদ্যুৎ বিল আরও বাড়িয়ে দেওয়া। ইউরোপ-আমেরিকার মতো বিদ্যুৎ বিল বাড়িয়ে দিলে আর লোডশেডিং হবে না। কারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ভালো। সেই সময় সারা দেশের মতো ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন সিলেটের মানুষ। পুষে রাখা সেই ক্ষোভ এবার ভোটের মাঠে নৌকায় ঝাঁকুনি দিচ্ছে। যে কারণে ফুরফুরে মেজাজে স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. দুলাল।
নির্বাচনী এলাকা ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপ নির্বাচনে হাবিবুর রহমান বিজয়ী হওয়ার পর থেকে হয়রানির শিকার হয়ে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর অনুসারী অনেক নেতাকর্মী দেশ ছেড়েছেন। এসব কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগে ফাঁটল ধরে। সেটিও এখন ভোটের মাঠে আলোচনায়।
এছাড়াও উপ-নির্বাচনে হলফনামায় আড়াই বছরে নয় কোটি ঋণ নেওয়ার তথ্য দিয়েছেন হাবিব। এবারের নির্বাচনে এসে ওই ঋণ পরিশোধে তথ্য দেননি। যে কারণে গণমাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে মানুষের মনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। অল্প সময়ে ঋণের বোঝা কমানোর বিষয়টি আলাদিনের চেরাগের ন্যায় দেখছেন ভোটাররা। সেই সঙ্গে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের ছয় কোটি টাকার সংস্কার কাজে সওজের অনিয়মের বিষয়টিও পাশ কাটিয়ে যাওয়া এবং সংস্কার কাজের পর উদ্বোধন করা নিয়েও নির্বাচনী মাঠে চলছে মাতামাতি।
এসব সমালোচনা উতরেও নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠ দখলে রেখে হাবিবুর রহমান হাবিব নেতাকর্মীদের নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন। অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাক প্রতীক স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. দুলালও দলমত নির্বিশেষে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের ভোট আদায়ের কৌশলে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। এছাড়া এ আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী চেনামুখ আতিকুর রহমান আতিকও রয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। তবে এ দুই প্রার্থীর ভিড়ে ছন্দপতনের লাঙ্গলের ইশ ধরে এগিয়েছেন আতিকও।
প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে বিএনপির প্রার্থীরা বিচরণ করেছেন ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে। এবার প্রার্থীদের খতিয়ান নিয়ে হিসাব চালাচ্ছেন ভোটারাও।
নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রসঙ্গে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাছিত টুটুল অনেকটা কৌশলী উত্তরে গণমাধ্যমকে বলেন, মাঠপর্যায়ে যার গ্রহণ যোগ্যতা রয়েছে, তিনি বিজয়ী হবেন।
দীর্ঘ নির্বাচনী অভিজ্ঞতা নিয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান মফুর গণমাধ্যমকে বলেন, ডা. দুলালের দৃশ্যমান ভোট লক্ষ্য করা না গেলেও নীরবে কী অবস্থান রয়েছে, সেটা ভাবার বিষয়। তবে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার পক্ষেই কাজ করছেন বলে জানান।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৩ আসন থেকে বিজয়ী সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী করোনায় মারা যান। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে এ আসনে উপ নির্বাচনে ভোটে হাবিবকে বেছে নেন এলাকার মানুষ। বর্তমান এ সংসদ সদস্য এবারও নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন।
সিলেট-৩ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৭৬ হাজার ৭শ ১০জন। এরমধ্যে পুরুষ এক লাখ ৯০ হাজার ৭০১ এবং নারী এক লাখ ৮৬ হাজার ৮ জন, হিজড়া ভোটার একজন।
এ আসনে কেন্দ্র সংখ্যা ১৫১টি। এসব কেন্দ্র অস্থায়ী ৮৫টিসহ ৮৭৫টি কক্ষে ভোটগ্রহণ করা হবে। এরমধ্যে পুরুষ কক্ষ ৪২৯ এবং নারী কক্ষ ৪৪৬টি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২৪
এনইউ/এএটি