ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য বাড়ছে না বরং সন্দেহ ও বিভাজনের নানা দোলাচল বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে পার্টির ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ৮০দিন: গতিমুখ ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সাইফুল হক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কি পথ হারিয়েছে? আমাদের মধ্যে ঐক্য বাড়ছে না বরং সন্দেহ ও বিভাজনের নানা দোলাচল বাড়ছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বোঝাপড়া বাড়িয়ে ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। ছাত্রদের নানা দাবি নিয়ে চারদিকে বিভ্রান্তি শুরু হয়েছে। সরকারের নিরপেক্ষ জায়গা প্রশ্নবিদ্ধ হলে নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে, সরকারের দড়ি ছিঁড়ে যেতে পারে।
সরকারের বেফাঁস ও আবেগি কথাবার্তায় জনমনে বিভ্রান্তির সুযোগ তৈরি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি না থাকলেও তাদের মধ্যে রয়েছে সমন্বয়হীনতার, শ্লথগতি, সরকার পরিচালনায় অনভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার অভাব। গত ৮০ দিনে তাদের নানা বেফাঁস ও আবেগি কথাবার্তায় তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তির সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাদের কিছু পদক্ষেপ ও ঘোষণাও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রসঙ্গে টেনে সাইফুল হক বলেন, নির্বাহী আদেশে কাউকে নিষিদ্ধ করলে গণেশ উল্টে গেলে অনেকেই নিষিদ্ধ আওতায় পড়তে পারেন। বরং তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাদেরকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে। অতীতে অনেককেই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তা বুমেরাং হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে জাতীয় মতৈক্যের ভিত্তিতে জরুরি সংস্কারগুলো শেষ করে সম্ভব স্বল্পতম সময়ের মধ্যে অবাধ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তক্ষেপ করে মর্যাদার সঙ্গে বিদায় নেওয়া। কিন্তু এই ব্যাপারে এখনও দৃষ্টিগোচর তেমন কোনো তৎপরতা নেই। এখনও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হয়নি।
এ রাজনীতিবিদ আরও বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সরকার গঠিত ১০ সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট চূড়ান্ত করে রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে মতৈক্যের ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন মহল থেকে নতুন নতুন ইস্যু সামনে নিয়ে আসায় গোটা সংস্কার এজেন্ডা এই মুহূর্তে অনেকটা পেছনে পড়ে গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন সে কারণে তাদের উত্থাপিত ইস্যুর পেছনে সরকারের সম্মতি বা সমর্থন রয়েছে কি না এই প্রশ্ন জোরালোভাবে দেখা দিয়েছে।
সাইফুল বলেন, এই পরিস্থিতি অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষ চরিত্র বৈশিষ্ট্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। আগামী দিনগুলোয় অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতার প্রশ্ন যদি বড় হতে থাকে তাহলে রাজনৈতিক দল ও বৃহত্তর রাজনৈতিক সমাজের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব বাড়তে থাকবে। রাজনৈতিক দল ও জনগণের বিপুল সমর্থনের সরকার অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অপ্রয়োজনীয় বিতর্কের মধ্যে পড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সরকারের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জরুরি সংস্কারসমুহের বাস্তবায়নও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যেতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকারের ৮০ দিন পার করা সাফল্য ও স্বস্তির উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের বিরাট প্রত্যাশার চাপ নিয়ে সরকার পরিচালনায় নানা ঘাটতি ও দুর্বলতা থাকলেও গত আশি দিনে দেশের ভঙ্গুর সামষ্টিক অর্থনীতিতে খানিকটা শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে, অর্থনীতি কিছুটা সচল হতে শুরু করেছে। গণঅভ্যুত্থানকালে নৃশংস গণহত্যা ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনাল ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে; ধীর গতিতে হলেও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় সদস্য আকবর খানের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২৪
ইএসএস/এমজে