নাটোর: নাটোরের সিংড়া উপজেলায় বিএনপির জনসভার মঞ্চে অতিথি আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক ডাক টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালিকা ডা. ফারজানা রহমান দৃষ্টির বসার ঘটনায় উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনুককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ সাক্ষরিত এক চিঠিতে আনোয়ারুল ইসলাম আনুকে এই শোকজ করা হয়।
ডা. ফারজানা রহমান দৃষ্টি উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনুর ভাতিজি এবং সাবেক ডাক টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালিকা। তিনি উপজেলা যুব মহিলা লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন।
শোকজ নোটিশে বলা হয়, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে গত শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে সিংড়া উপজেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভার মঞ্চে ফ্যাসিস্ট সরকারের অবৈধ আইসিটিমন্ত্রী পলকের শ্যালিকা ডা. ফারজানা রহমানের উপস্থিত হওয়া এবং আসন নেওয়ার ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
দেশের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর এ নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠে। যা দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থি বলে বিবেচিত হয়। আপনাদের এহেন কর্মকাণ্ডে বিএনপির ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। এমতাবস্থায় আপনার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সশরীরে হাজির হয়ে বা লিখিতভাবে জানানোর জন্য নিদের্শ দেওয়া হলো।
এ বিষয়ে সিংড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন আনু বাংলানিউজকে বলেন, তাকে (ভাতিজি ডা. ফারজানা রহমান দৃষ্টিকে) মঞ্চে উঠানো হয়নি। অনেক মানুষ জনসভায় এসেছেন, তিনি (ফারজানা) কীভাবে মঞ্চে উঠেছেন তা জানা নেই। আর তিনি যে যুব মহিলা লীগের কোন পদে রয়েছেন, এ বিষয়টিও জানা নেই। আর শোকজপত্র এখনও হাতে পাইনি। তবে লোকমুখে শুনেছি, জেলা বিএনপি থেকে ওই ঘটনায় আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। দলের প্রতি আনুগত্য ও সম্মান রেখে নোটিশের জবাব দেবো।
শোকজের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ বাংলানিউজকে জানান, গতকালকের বিষয়টি নিয়ে সিংড়া উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আনোয়ারুল ইসলাম আনুকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তার জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে সিংড়া কোর্ট মাঠে জনসভা মঞ্চে ডা. উপস্থিত হয়ে ফারজানা রহমান দৃষ্টির অতিথি আসন গ্রহণের ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কড়া নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে। এছাড়া তোলপাড় চলছিল সিংড়ার রাজনৈতিক অঙ্গনেও। ওই জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু।
জানা গেছে, গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ডা. ফারজানা রহমান দৃষ্টি তার দুলাভাই সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের প্রভাব খাটিয়ে চলতেন। বিগত সময় সিংড়ায় ডা. ফারজানা রহমান দৃষ্টি কর্তৃক পরিচালিত একটি ক্লিনিকের বিরুদ্ধে লাইসেন্সবিহীন পরিচালনা করার অভিযোগ উঠলে গণমাধ্যমকর্মীরা সংবাদ প্রচার করতে গেলে পলকের প্রভাবে সংবাদকর্মীদের দেখে নেওয়ার ও হুমকিও দেন দৃষ্টি। পলকের শ্যালিকা হওয়ার সুবাদে ২০২০ সালে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন ডা. ফারজানা। তিনি উপজেলা যুব মহিলা লীগের কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতেন। তাকে নিয়ে অনেক বির্তক রয়েছে এলাকায়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০২৪
এসআরএস