ঢাকা: মনোনীত করে গঠন করা হতে পারে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি। সিন্ডিকেট দৌরাত্ম ঠেকিয়ে মেধাবী, দক্ষ ও যোগ্যদের নেতৃত্বে আনতে সমঝোতার ভিত্তিতে এ কমিটি গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে।
চার বছর পর শনি ও রোববার (২৫ ও ২৬ জুলাই) ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের ২৮তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দু’বছর পর পর সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও এবার সম্মেলন হচ্ছে চার বছর পর।
সূত্র বলছে, নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন না হওয়ায় ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা যোগ্য ও অভিজ্ঞ নেতাদের অনেকেই বয়সের কারণে নতুন কমিটিতে আসতে পারবেন না। এদের মধ্যে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে আসার মতো যোগ্য ও অভিজ্ঞ নেতারাও রয়েছেন।
একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব চিন্তা-ভাবনা করছে। যোগ্য নেতৃত্ব আনতে বয়সসীমা এক বছর বাড়িয়ে ৩০ বছর করা হতে পারে।
ছাত্রদের হাতে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব রাখতে গঠনতন্ত্রে ২৯ বছর বয়সসীমা বেধে দেওয়া হয়। এই বয়সসীমা অনুসরণ করে ছাত্রলীগের গত দু’টি সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। ২০১১ সালের ১০ ও ১১ জুলাই ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তার দু’বছর সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও এবার সম্মেলন হচ্ছে চার বছর পর। এর ফলে ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির অনেকেই নতুন কমিটি থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছেন। কারণ, সম্মেলনের নির্ধারিত সময় অতিক্রমের সঙ্গে সঙ্গে নেতৃত্বের জন্য বাধ্যতামূলক ২৯ বছর বয়সের সীমাও পেরিয়ে গেছে তাদের।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী বর্তমান কমিটির এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, বয়সের কোঠায় ফেলে যোগ্যদের শীর্ষ নেতৃত্বে আসা আটকানো জন্য নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন করা হয়নি।
মাত্র কয়েকমাস আগেও সম্মেলন হলে ওই নেতার বয়সসীমা অতিক্রম করতো না বলেও জানান তিনি।
ওই নেতা অভিযোগ করেন, সম্মেলন পেছানোর পেছনে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের হাত রয়েছে। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন ছাত্রলীগের একজন সাবেক সভাপতি। ছাত্রলীগের নতুন কমিটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই সিন্ডিকেটের রয়েছে ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ। ছাত্রলীগের গত দু‘টি কমিটি নির্বাচনও এই সিন্ডিকেট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। এবারের সম্মেলনকে ঘিরেও সিন্ডিকেটটি অনেক আগে থেকেই সক্রিয়। এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণেই সম্মেলনের প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়েছে। প্রতিটি সাংগঠনিক জেলার মূল নেতৃত্বকে প্রভাবিত করে অনুগতদের প্রতিনিধি করা হয়েছে। ফলে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে এই সিন্ডিকেট যাদের সমর্থন দেবে তারা নির্বাচিত হবে।
এসব প্রক্রিয়ার পেছনে বড় ধরনের আর্থিক লেনদেন রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে সংগঠনের নেতাকর্মীদের।
দলীয় সূত্র জানায়, বিষয়টি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব অনেক আগ থেকে অবগত রয়েছে। সিন্ডিকেটটি ভেঙে দেওয়া বা সিন্ডিকেটের প্রভাবমুক্ত কমিটি গঠনের চিন্তা-ভাবনা চলছে। কমিটি নির্বাচনের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হচ্ছে নির্বাচন। কিন্তু যোগ্য নেতৃত্ব গঠনে সিন্ডিকেটটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিধায় তাদের বিকল্প ভাবতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকদের কেউ কেউ দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলেও জানা গেছে।
যোগ্য ও অভিজ্ঞ নেতৃত্ব আনতে শেষ মুহূর্তে নির্বাচনের পরিবর্তে মনোনীত করে নতুন কমিটি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলেও আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রটি জানায়।
এদিকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মেধাবী ও দক্ষ নেতৃত্ব আনার উপর এবার বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সে অনুযায়ী প্রার্থীদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে শিবিরের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে মাদরাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের যারা আছে তাদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। মাদরাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের তালিকায় যারা আছেন তারা শক্তিশালী প্রার্থী হলেও বাদ পড়বেন। তাদের স্কুল-কলেজ জীবনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও পারিবারিক বিষয়েও বিভিন্নভাবে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসেন। সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির দক্ষ ও মেধাবীদের নিয়ে আসার নির্দেশ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩১ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৫
এসকে/এইচএ