ঢাকা: ঈদের পরই ঘোষণা আসছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির। নেতৃত্ব সংকটের কারণেই দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে নতুন কমিটি গঠনের কাজ।
অবিভক্ত কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ দক্ষিণের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া উত্তরের সভাপতির দায়িত্ব পেতে পারেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঢাকা মহানগর দলের প্রাণ হিসেবে কাজ করে থাকে। বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রাম এবং সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবেলায়ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আগামী দিনগুলোতেও সরকার ও দলকে নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হতে পারে। এ কারণেই নেতাকর্মীদের ঐক্য ধরে রাখতে এবং সংগঠনকে শক্তিশালী রাখতে নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে নানা হিসাব-নিকাশ করতে হচ্ছে দলটির নীতি-নির্ধারকদের।
বিকল্প ও যোগ্য নেতৃত্বের সংকটের কারণে সম্মেলনের পর প্রায় দুই বছর সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও নতুন কমিটি দিতে পারেনি দলটি। ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ সিদ্ধান্ত নেয় নতুন কমিটি গঠন না করা পর্যন্ত বর্তমান কমিটিই দায়িত্ব পালন করে যাবে। সে অনুযায়ী বর্তমান কমিটি কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অধিকাংশই বর্তমান নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার পক্ষে। আর এ কারণেই মহানগরকে দুই ভাগে ভাগ করা হলেও সংগঠনের ঐক্যের স্বার্থে নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী বর্তমান সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে যথাক্রমে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তরের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ঢাকা মহানগরের শীর্ষ নেতারা কথা বলেছেন। শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে ঢাকা মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া দেখা করে মহানগরের নেতাকর্মীদের মনোভাবের কথা জানিয়েছেন। তারা দু’জন দক্ষিণ ও উত্তরের সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহও ব্যক্ত করেছেন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
এর আগে ওই নেতারা মহানগরের শীর্ষস্থানীয় কয়েক নেতাকে নিয়ে মায়ার বাসায় বৈঠক করেন। সৈয়দ আশরাফ বিষয়টি নিয়ে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পেলে দুই মহানগরের সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদের খসড়া প্রস্তাব তৈরি করে তার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী তালিকা চূড়ান্ত করে কমিটি ঘোষণা দেবেন।
ঢাকা মহানগর সম্মেলনের পর কাউন্সিল সদস্যরা নতুন কমিটি গঠনের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর দায়িত্ব দেন। সূত্রগুলো আরও জানায়, সৈয়দ আশরাফ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর মহানগর নেতারা নিজেদের মধ্যে আবার আলোচনা করে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর খসড়া তৈরি করবেন। তবে ঈদের আগে নতুন কমিটি ঘোষণার সম্ভাবনা নেই। ঈদের পর মহানগরের নতুন কমিটি চূড়ান্ত হবে বলে সূত্র জানায়।
এদিকে মহানগরের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, নতুন কমিটি গঠনের জন্য সম্ভাব্য নেতাদের নাম ঠিক করতে এর আগে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) ফারুক খান ও কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুর রাজ্জাককে দায়িত্ব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা দক্ষিণে এম এ আজিজকে সভাপতি ও শাহে আলম মুরাদকে সাধারণ সম্পাদক এবং উত্তরে এ কে এম রহমত উল্লাহকে সভাপতি ও সাদেক খানকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রস্তাব করেন। এরপরই মহানগরের নেতারা নতুন করে এ উদ্যোগ নেন। সভাপতির ব্যাপারে তারা একমত হলেও সাধারণ সম্পাদকের ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে সূত্রটি জানায়।
সাধারণ সম্পাদক পদে সম্ভাব্য নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- দক্ষিণে অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সানজিদা খানম, মুকুল চৌধুরী ও আওলাদ হোসেন এবং উত্তরে আসলামুল হক আসলাম ও শেখ বজলুর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫
এসকে/আরএম/এএসআর