ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

ওয়াশিংটন টাইমসে জয়ের নিবন্ধ

জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করা উচিত

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৫
জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করা উচিত ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কারণে জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের দরকার স্থিতিশীল, সন্ত্রাস-মুক্ত দক্ষিণ এশিয়া।

এ ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় রয়েছে শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ। শক্তিশালী ও উদীয়মান বাংলাদেশ তাদের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক পরিসর বাড়িয়েছে বিধায় দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে বাংলাদেশই থাকা উচিত। এ কারণে জামায়াতকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করতে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিধায় ভোগা উচিত নয়। ’

মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক ‘ওয়াশিংটন টাইমসে’ লেখা এক কলামে তিনি এ কথা বলেন। ‘আনমাস্কিং টেরোরিস্টস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক কলামটি বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

“ভয়ংকর ইসলামিক স্টেট (আইএস) ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার সার্বভৌম বিভিন্ন অঞ্চলের সীমান্ত নতুন করে এঁকেছে। আইএস ও এ ধরনের সন্ত্রাসী সংগঠন বিশ্বব্যাপী হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে এবং এ প্রবণতা বাড়ছেই।

এ ধরনের আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে প্রতিরোধ ও পরাজিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতা এবং কর্তাব্যক্তিরা নতুন মিত্র ও কৌশলের খোঁজে অবিরাম কাজ করছেন।

এক্ষেত্রে নির্ভরশীল হতে পারে দেশি-বিদেশি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করা মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের গর্বিত মিত্র বাংলাদেশকে পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের মডেল হিসেবে দেখা হয়। দেখা হয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সাহসী শক্তি হিসেবেও।

বাংলাদেশে সন্ত্রাসের প্রধান সংগঠক হলো কট্টর ইসলামপন্থি দল জামায়াত।

পুলিশ সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার একটি দোতলা অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালিয়ে ২০টি শক্তিশালী বিস্ফোরক, ২৫টি বাঁশের মুগুর এবং জামায়াতের কিছু জিহাদি বই জব্দ করে। পুলিশের বর্ণনানুযায়ী, বিস্ফোরক বোমাগুলো খুবই শক্তিশালী ছিল। এ ধরনের বিস্ফোরক দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতের সন্ত্রাসী হামলায় ব্যবহার করা হচ্ছে।

কর্তৃপক্ষের মতে, এই বিস্ফোরকগুলো বিশেষত পোশাক শ্রমিকসহ নিরীহ বেসামরিক লোকদের লক্ষ্য করে হামলার জন্য তৈরি করা। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, এই হামলার জন্য ছক কষা হয়েছিল, ইসলাম ধর্মের পবিত্র ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর ঈদুল আজহার দিন।

শান্তিকামী বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্যবস্তু বানানো জামায়াতের জন্য নতুন কিছু নয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় থেকে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা, সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর ধারাবাহিকভাবে নির্বিচারে সহিংসতা চালিয়েছে দলটি। এই রক্তাক্ত সংঘাতে জামায়াতের লোকেরা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মিলে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে, দুই লাখ নারীর সম্ভ্রমহানি করেছে, দেশান্তরী হতে বাধ্য করেছে লাখ লাখ মানুষকে।

সম্প্রতি নস্যাৎ হওয়া সন্ত্রাসী হামলার ছক জামায়াতের গত ক’বছরের উগ্র সহিংসতারই ধারাবাহিকতা। চার ব্লগারকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শিরোনাম হয়েছে। কিন্তু অনেক পর্যবেক্ষক বিস্মিত হননি এ কারণে যে, খুন হওয়া এই ব্লগারদের বেশিরভাগই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিটি) দোষী সাব্যস্ত জামায়াত নেতাদের যুদ্ধাপরাধের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে লেখালেখি করেছেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইসিটির রায়ের পর সারাদেশে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে জামায়াত। শত শত বোমা ফাটিয়েছে তারা। এতে শিশুসহ অনেক লোক নিহত হয়েছে।

সম্প্রতি বিস্ফোরক পাওয়ার ঘটনায় জামায়াতের ১৩ নেতা আটক হয়েছেন, এদের মধ্যে দু’জন সাবেক সংসদ সদস্যও রয়েছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের মতে, এই সংসদ সদস্যরাই কার্যত জামায়াতকে এখন চালাচ্ছেন। এটা যদি সত্য হয়, তবে  দেশ যে বৈধ রাজনৈতিক দলের মুখোশে কট্টর-সন্ত্রাসী সংগঠনের কবলে পড়েছে, সে বিষয়ে বাড়তি প্রমাণ পাওয়া যায়।

এই কট্টরপন্থি সহিংসতা আরও দুঃশ্চিন্তার কারণ হলো, জামায়াত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল কায়েদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তৎপরতা চালাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে অনলাইনে একটি ভিডিও প্রকাশ করে আল কায়েদার প্রধান নেতা আইমান আল জাওয়াহিরি বাংলাদেশিদের দক্ষিণ এশিয়ায় ‘জিহাদের পতাকা ওড়ানো‘র আহ্বান জানান। বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে খতিয়ে দেখছে।

জামায়াতের নেতৃত্ব কখনো তাদের দুরভিসন্ধি থেকে সরে আসার উদ্যোগ নেয়নি। জামায়াত ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো তরুণ শিক্ষার্থীদের দলে ভেড়াচ্ছে এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে ইসলাম ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। যে সংগঠনকে প্রতিনিয়ত সহযোগিতা করে, সেই আল কায়েদার মতো জামায়াতও যে কোনো মূল্যে উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চাইছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোর দরকার স্থিতিশীল, সন্ত্রাস-মুক্ত দক্ষিণ এশিয়া। এ ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় রয়েছে শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ। শক্তিশালী ও উদীয়মান বাংলাদেশ তাদের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক পরিসর বাড়িয়েছে বিধায় দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে বাংলাদেশই থাকা উচিত। এ কারণে জামায়াতকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করতে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিধায় ভোগা উচিত নয়। ”

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৫
এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।