ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

সাড়া নেই ড. কামালের জাতীয় ঐক্যের

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৫
সাড়া নেই ড. কামালের জাতীয় ঐক্যের গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন

ঢাকা: গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যের কোনো অগ্রগতি নেই। এক সনদের ভিত্তিতে ঐক্যের আহ্বান জানালেও এর কোনো সাড়া নেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে।

তিনি নিজেও লোকোচক্ষুর আড়ালে থেকে অনেকটা নিষ্ক্রিয়।
 
গত ৩০ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে ‘সুস্থ রাজনীতি ও কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা’র লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হতে ১১ দফা সম্বলিত ‘জাতীয় ঐক্যের সনদ’ ঘোষণা করেছিলেন ড. কামাল হোসেন।  

রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সাধারণ জনগণকেও ঐক্যে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সনদ ঘোষণার পরপরই চলে যান মালয়েশিয়ায়। এখনও অবস্থান করছেন বিদেশে। এরপর বিষয়টি নিয়ে আর কোনো তৎপরতা বা আলোচনা নেই।

তবে গণফোরাম নেতারা বলছেন, ড. কামাল দেশে ফিরলেই ফের জাতীয় ঐক্য নিয়ে তৎপরতা শুরু হতে পারে। তবে এ প্রক্রিয়া (জাতীয় ঐক্য) কতদূর অগ্রসর বা ত্বরান্বিত হবে সে বিষয়ে বড় কোনো প্রত্যাশার কথা শোনাতে পারেননি তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণফোরামের এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, উদ্যোগ আছে, অগ্রগতি নেই। আহ্বান আছে, সাড়া নেই। ড. কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্যের সনদ ঘোষণা করে বিদেশে গেছেন। তিনি দেশে ফেরার পর হয়তো আবারও কিছু তৎপরতা দেখা যেতে পারে।

তবে ড. কামাল কোন দেশে আছেন বা কবে দেশে ফিরবেন সে বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেননি ওই নেতা।

দেশের বাইরে অবস্থান করায় ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলাও সম্ভব হয়নি।

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আগামী ২ অক্টোবর ড. কামাল দেশে ফিরতে পারেন। কিন্তু কোন দেশে এখন অবস্থান করছেন সেটা আমি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।

জাতীয় ঐক্যের অগ্রগতির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা গণফোরামকে আগে গোছানোর চেষ্টা করছি। অন্য দলের সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে জাসদ (রব) ও নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে।

আর কোনো দলের সঙ্গে কথা হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমরা তো সবাইকে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছি।

এদিকে জাতীয় ঐক্য সনদের ১১ দফার প্রথম দফায় বলা হয়েছে, সমগ্র জাতি একটি অর্থপূর্ণ পরিবর্তনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। যা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা, সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।

সনদের অন্য দফায় উল্লেখ করা হয়েছে, কেবল কালো টাকা, সন্ত্রাস ও সশস্ত্র ক্যাডারমুক্ত অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণ সৎ, যোগ্য ও কার্যকর জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবে।

এছাড়া সংবিধান অনুযায়ী আইনের প্রতি অনুগত থেকে জনপ্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত এবং নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে বলেও সনদের আরেক দফায় বলা হয়েছে।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর আগেও কয়েকবার ড. কামাল হোসেন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের ডাক দেন। উদ্যোগ নিয়েছেন জোট, মহাজোট, বৃহৎ রাজনৈতিক ঐক্য বা প্লাটফর্ম তৈরির। কিন্তু কোনো উদ্যোগই বাস্তবায়ন হয়নি।

১৯৯২ সালে গণফোরাম গঠনের সময়ও জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন তিনি। বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা ড. কামাল দল ছেড়ে গঠন করেন গণফোরাম। সঙ্গে নেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ-মোজাফফর), আওয়ামী লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) থেকে বেরিয়ে আসা প্রভাবশালী নেতাদের।

কিন্তু নতুন ওই দলটি দেশের রাজনীতিতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। এর কিছুদিন পর গণফোরামসহ ১১টি বাম-গণতান্ত্রিক দলের সমন্বয়ে গড়ে তোলেন ১১দল নামে একটি নতুন জোট।

এই জোটের নেতৃত্বের কেন্দ্র বিন্দুতে ছিলেন ড. কামাল হোসেন। কয়েক বছর চলার পর ১১দলের অধিকাংশ দলই কামাল হোসেন নেতৃত্বে গিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪দল নামে একটি বড় জোট গঠন করে।

২০০৫ সালে এই ১৪দলীয় জোট গঠনের সময়ও জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছিলেন সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল। তবে ওই জোটে যোগদানের পর মুখ থুবড়ে পড়ে ১১দল। আর গণফোরামও ১৪দলে বেশিদিন ছিল না।

ওয়ান ইলেভেনের পর দেশে জরুরি অবস্থা চলাকালে শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. ইউনূসের রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া, গণফোরাম, জাসদ (রব), বাসদ (খালেকুজ্জামান), সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা, কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ কয়েকটি দল নিয়ে জোট গঠনের প্রক্রিয়ার সঙ্গেও তৎপর ছিলেন ড. কামাল। তবে কোনোটিই শেষ পর্যন্ত দাঁড়াতে পারেনি। আর ওই সময়ই ১৪দল থেকে ছিঁটকে পড়ে গণফোরাম।

সংশ্লিষ্টরা সূত্রগুলো জানায়, ১৪ দলীয় জোট থেকে বের হওয়ার পর আবারও ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে নিয়ে বৃহৎ ঐক্য গড়ার চেষ্টা করেন ড. কামাল হোসেন।

২০১২ সালের ২১ অক্টোবরে রাজধানীর একটি হোটেলে এবং ২০১৩ সালে নবম জাতীয় সংসদের মেয়াদের শেষ দিকে সরকারবিরোধী আন্দোলন ও নির্বাচনের রূপরেখা তৈরি করে মাঠে নামার কথা বলেছিলেন তারা। সেটাও দৃশ্যমান হয়নি।

এরপর গত বছর সেপ্টেম্বরে ফের জাতীয় ঐক্যের উদ্যোগ নেন প্রবীণ এই আইনজীবী। এ বিষয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি।

এতে সিপিবি, বাসদ, জাসদ (রব), নাগরিক ঐক্য অংশ নিলেও শেষ পর্যন্ত এ উদ্যোগও আলোর মুখ দেখেনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৫
এসকে/এমএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।