ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

জিয়ার ভাস্কর্য যেন ‘করুণ’ বিএনপির সাক্ষী!

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৫
জিয়ার ভাস্কর্য যেন ‘করুণ’ বিএনপির সাক্ষী! ছবি: শাকিল আহমেদ/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম/ফাইল ফটো

ঢাকা: রোববার (২৪ অক্টোবর) বিকাল চারটা। কয়েক মাস আগেও যে বাড়িটিতে লোকজনের আনাগোনা থাকতো সব সময়।

গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিও থাকতো চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এদিন গিয়ে দেখা গেল শুনশান নীরবতা। যেন পরিত্যক্ত কোনো ভবন।
 
যে বাড়িটির কথা বলা হচ্ছে সেটি কোনো মামুলি বাড়ি নয়। রাজধানীর গুলশান-২ এর ৮৬ নম্বর রোডের ৬ নম্বর বাড়ি। বিএনপির চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয় এটি। দ্বিতল এ বাড়িটি এখন ভেতর থেকেই থাকে তালাবদ্ধ। বাইরে নিরাপত্তা প্রহরীর জন্য ছোট বক্স থাকলে সেখানেও কাউকে দেখা গেলো না। একটি বেসরকারি সিকিউরিটি কোম্পানির কর্মী ভেতর থেকে ফটকে পাহারা দিচ্ছেন।
 
দলীয় প্রধান নেই, তাই নেতাকর্মীদের আনাগোনাও নেই এখন বাড়িটিতে। বিকেলের শক্তিহীন নরম আলোয় বাড়িটিও যেন তার প্রাধান্য হারিয়েছে। মোটরসাইকেলের গতিতেও যা দৃষ্টিগোচর হলো।
 
কৌতুহল জাগলো- বাড়িটির এ অবস্থা কেন? আর কারাই বা নিরাপত্তা আর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন?
 
ফটো করেসপন্ডেন্ট শাকিল আহমেদের বাইকটাও যেন আপনা আপনি থেমে গেল। বাইক থেকে নেমে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম দু’জনেই। ফটকের ফাঁক গলে উঁকি দিতেই বেসরকারি কোম্পানির সিকিউরিটি গার্ডের দেখা মিলল। তিনি ভাবলেশহীনভাবে বসে আছেন চেয়ারে। ঠিক ভেতর দিক থেকে ফটকের সামনেই। চোখ ফাঁকি দিয়ে ভেতরে ঢোকার কোনো সুযোগ না রাখতেই যে তার এ অবস্থান, বিষয়টি স্পষ্ট বোঝা গেল।
 
নিজেদের পরিচয় দিয়ে জিজ্ঞেস করতেই নিরাপত্তী রক্ষী তার নাম জানালেন। কথা বলতে চাওয়ায় মোহাম্মদ শ্যামল নামের ওই রক্ষী ফটক খুলে দিয়ে ভেতরে ঢোকার আহ্বান জানালেন। ফটকের পকেট গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হলো।
 
ফটক দিয়ে ঢুকলেই দুই মিটার দূরত্বেই হাতের বাঁপাশে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্য। এক ফুট উঁচু বেদির ওপর স্থাপন করা হয়েছে। দু’হাঁটুর ওপর দু’হাত রেখে ভি কলারের টি-শার্ট, মাথায় ক্যাপ, গলায় লকেট সমেত মোটা চেইন আর চোখে চশমা পরে বসে আছেন জিয়াউর রহমান। দৃষ্টি যেন দূরের কোনো গাঁয়ে নিবদ্ধ।
 
কিন্তু একি অবস্থা এ ভাস্কর্যটির! অনাদর আর অযত্নে শ্যাওলার আস্তরণ, ধুলোর প্রলেপ পড়েছে অনেক আগেই।
 
জিয়াউর রহমানের মৃত্যু হয়েছে ৩৫ বছর আগে। তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী খালেদা জিয়া হাল ধরেছেন দলের। পিছিয়ে নেই বড় ছেলে তারেক রহমানও। দলের পোস্টার ব্যানারে জিয়াউর রহমানের অবস্থান আস্তে আস্তে গুরুত্ব হারিয়েছে। বড় হয়েছে মা-ছেলের ছবি। সময়ের নিষ্ঠুরতার এ এক অমোঘ নিয়ম হলেও দলের স্বপ্নদ্রষ্টার প্রতি অশ্রদ্ধা-অসম্মান জ্ঞাপন করা নেহাত অনুসারীদের ভঙ্গুর মনোনভাবকেই যেন ফুটিয়ে তোলে। ফুটিয়ে তোলে বিএনপির নেতাকর্মীদের ভালোবাসতে না পারার দৈন্যতাকেও!
 
বলা হয়, যে দেশে নেতাকে সম্মান জানানো হয় না, সেখানে নেতা জন্মগ্রহণ করেন না। বিএনপিতেও বুঝি একই অবস্থা চলছে। দলের নেতারা সভা-সেমিনারে জিয়ার অবদানের কথা তুলে ধরে অনেক অনেক হাততালি পেলেও দলীয় কার্যালয়ে তাকে কোনো সম্মান দেন না। এর স্পষ্ট উদাহরণ জিয়াউর রহমানে ওই ভাস্কর্য। যার দু’পাশের কাঁধ থেকে বাহু পর্যন্ত ফাটল ধরেছে অনেক আগে। যেকোনো সময় তা খসে যেতে পারে। অথচ দেখার কেউ নেই।
 
তবে জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্যের এ ফাটল যেন দেশজুড়ে বিএনপির ইউনিটগুলোর ফাটলকেও প্রতিনিধিত্ব করছে। এ যেন বিএনপির করুণ অবস্থাকেই নির্দেশ করছে।
 
দশম সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে এ বছরের  শুরু দিকেও খালেদা জিয়া যতো আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন কোনোটিতে সফল হতে পারেনি। তাকে পুলিশ বাড়ির সামনে আটকে দিলেও গৃহকর্মী ছাড়া কোনো নেতাকর্মী সঙ্গে ছিলেন না। সরকারের কড়াকড়িই এর অন্যতম কারণ নয়। বরং দলের প্রতি কমিটমেন্ট সম্পন্ন নেতাকর্মীর অভাবও বিএনপির বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী, তা আজ সকলের জানা বিষয়। যে কারণে জিয়ার ভাস্কর্যে ফাটল ধরলেও, শ্যাওলা-ধুলোর আস্তরণ পড়লেও কারো ভাবনা উদ্রেক করে না।
 
নিরাপত্তারক্ষী শ্যামল বাংলানিউজকে বলেন, নেতাকর্মীরা এখন আর কেউ আসেন না। ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) যখন দেশে ছিলেন, তখন বড় বড় নেতারা মাঝে মধ্যে আসতেন। কিন্তু এখন অফিসের কর্মচারীরা ছাড়া কেউ আসেন না। তারা এসে কেবল পরিস্কারের কাজ করে চলে যান।
 
গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছেন। বর্তমানে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। আগামী নভেম্বরে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৫
ইইউডি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।