ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

আপাতত কিছুই করার নেই বিএনপির

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৫
আপাতত কিছুই করার নেই বিএনপির

ঢাকা: নানামুখী চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়া বিএনপি এখন রাজনীতির মাঠের নীরব দর্শক। উদ্ভূত পরিস্থিতির নিবিড় পর্যবেক্ষণ দলটির এখন একমাত্র কাজ।

কোনো ইস্যুতে ‘রা’ করতে পারছে না তারা। আপাতত কিছুই করার নেই তাদের। দীর্ঘ রাজনীতির পথচলায় এমন পরিস্থিতিতে এর আগে পড়েনি দলটি।
 
বিএনপি সম্পর্কে এ ধরনের মূল্যায়ন এখন দলটির নেতা-কর্মী-সমর্থক থেকে শুরু করে সর্বস্তরে। বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতি বিশ্লেষকদের মূল্যায়নও প্রায় একই রকম।
 
সম্প্রতি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সংসদ ভবন এলাকা থেকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরসহ লুই আই কানের নকশা বহির্ভূত সব স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
 
ওই সুপারিশের খবর সংবাদ মাধ্যমে আসার পর বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয়। জানতে চাওয়া হয় এ ইস্যুতে বিএনপি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাবে কি-না?
 
এরপর বুধবার (১৮ নভেম্বর) বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর রিভিউ আবেদন খারিজ করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখার পর ফের ওইসব নেতার সঙ্গে কথা হয়। রায় কার্যকরের পরও যোগাযোগ করা হয় তাদের সঙ্গে।
 
তিন দফার যোগাযোগে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের ওইসব নেতা বাংলানিউজকে যা বলেন, তার সারকথা হলো-আপাতত কিছুই করার নেই বিএনপির। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং ধৈর্যের সঙ্গে ‘সুদিনের’ অপেক্ষা করাই এখন একমাত্র কাজ।

সূত্র মতে, বিএনপির চরম সংকট মুহূর্তে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এম এম শাহরিয়ার রুমীর পদত্যাগ, বহিস্কৃত ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হুদার নতুন দল ‘তৃণমূল বিএনপি’ গঠন, সংস্কারপন্থিদের নতুন দল গঠনের ঘোষণা পর্যবেক্ষণ ছাড়া আপাতত কিছুই করার নেই বিএনপির।
 
জানা গেছে, দলের চেয়াপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য দুই মাসের বেশি সময় লন্ডন অবস্থান শেষে শনিবার (২১ নভেম্বর) দেশে ফিরে এখন পর্যন্ত কাউকে দেখা করার সময় দেননি। গুলশানের বাসায় অবস্থান করছেন তিনি।
 
ব্যক্তিগত সফর শেষে দেশ ফেরা খালেদা জিয়া তার সফর নিয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনেরও যৌক্তিকতা দেখছেন না। জোরাল কোনো রাজনৈতিক ইস্যু না থাকায় মিডিয়ার সামনে আসার প্রয়োজনবোধ করছেন না তিনি। তবে স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি নিয়ে হয়তো বা শিগগিরই কথা বলবেন বিএনপির চেয়ারপারসন।  
 
সূত্র মতে, সব ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার খালেদা জিয়ার ওপর ন্যস্ত থাকলেও সাধারণত বড় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটিকে নিয়ে বৈঠক করে থাকেন তিনি।
 
কিন্তু স্থায়ী কমিটির বেশিরভাগ সদস্যই এখন নিষ্ক্রিয়। তিন-চার জন ছাড়া স্থায়ী কমিটির বাকি সদস্যরা কারাগার, হাসপাতাল, আত্মগোপন ও বিদেশযাপনে রয়েছেন। ফলে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামকে নিয়ে বসে দ্রুত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো খালেদা জিয়ার জন্য খুবই কঠিন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য ড. আর এ গণি, এম সামছুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম, সারোয়ারী রহমান দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। বেশিরভাগ সময়ই তাদের কাটছে হাসপাতালে।
 
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও এমকে আনোয়ার আছেন কারাগারে। খুব শিগগিরই মুক্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা তাদের নেই। একাধিক মামলার আসামি এই দুই প্রবীণ নেতা দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন।
 
ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ও মির্জা আব্বাস গ্রেফতার এড়াতে দীর্ঘ দিন ধরে আত্মগোপনে আছেন।
 
এক সময় বিএনপির বিদেশনীতি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. ‌আব্দুল মঈন খান। কিন্তু ইদানিং তাকে আর দেখা যাচ্ছে না। শমশের মবিন চৌধুরীর পদত্যাগের পর কূটনৈতিক কোরের গুরুত্বপূর্ণ এ সদস্য রহস্যজনকভাবে নীরব রয়েছেন।
 
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কারাগারে আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছেন। তবে দলের গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে খুব একটা প্রয়োজন হয় না বলে জানা গেছে।
 
১৯ সদস্য বিশিষ্ট স্থায়ী কমিটির মধ্যে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ ও নজরুল ইসলাম খানই কেবল সক্রিয় রয়েছেন। তবে এ তিন নেতার মধ্যে নজরুল ইসলাম খান ‍ছাড়া বাকি দু’জন দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে খুব একটা ভূমিকা রাখার সুযোগ পান না।
 
ফলে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সঙ্গে বৈঠক করে কঠিন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ আপাতত খালেদা জিয়া পাচ্ছেন না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সুতরাং আপাতত কিছুই করার নেই বিএনপির।
 
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক পন্থায় বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক দল। গণতন্ত্রের সবগুলো নিয়ম মেনে সরকারের অপশাসন ও জনবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করা হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন অর্গানাইজড হওয়া। আপাতত আমরা অর্গানাইজড হচ্ছি।
 
নজরুল ইসলাম খান বলেন, চলমান পরিস্থিতি আমরা অবজার্ভ করছি। সবই আমাদের নখদর্পণে রয়েছে। সময় হলেই যথোপযুক্ত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামা হবে।
 
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ  স ম হান্নান শাহ বলেন, সরকারের অগণতান্ত্রিক সব আচরণেরই জবাব দেওয়া হবে। আপাতত আমরা বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৫
এজেড/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।