ঢাকা: সরকারের গায়ে হাত দিতে ব্যর্থ হয়ে গুপ্তহত্যার ঘটনা চলছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, কোন গুপ্তহত্যাকারী পার পাবে না, প্রত্যেকের জন্য একটি করে ফাঁসির দড়ি প্রস্তুত হচ্ছে।
আগুন যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশকে অস্থিতিশীল করার কৌশল হিসেবে গুপ্তহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার (১৩ জুন) সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন ইনু।
গুপ্তহত্যার ব্যাপারে সরকার ২৪ ঘণ্টা সজাগ রয়েছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্রই শেখ হাসিনার সরকার সফল হতে দেবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন খুনি ছাড় পাবে না, প্রত্যেক খুনির জন্য একটি করে ফাঁসির দড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমাকেও যদি মেরে ফেলা হয়, আমি এটা ভেবে নিশ্চিত যে, আমাকে যারা হত্যা করবে তাদেরও বিচার হবে। সুতরাং আমার কোন দুঃখ নাই। কোন অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, সরকার দোষারোপের রাজনীতি করে না। বরং জঙ্গি-সন্ত্রাস-গুপ্তহত্যা দমনে সরকার বদ্ধপরিকর এবং এর সাথে বিএনপি-জামায়াতের অনেকের জড়িত থাকার প্রমাণ সরকারের হাতে রয়েছে। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই কাজ করে সরকার,ব্লেম-গেম খেলে না। খালেদা জিয়াই নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে দোষারোপের রাজনীতি করছেন, ব্লেম-গেম খেলছেন।
দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, অতীতে বিএনপি-জামায়াত-হেফাজতসহ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর তাণ্ডব সরকার সফলভাবে দমন করেছে। সুতরাং সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যাও সফলভাবে দমন করবে সরকার, আপনারা সহযোগিতা করুন, ধৈর্য ধরুন।
খালেদা জিয়া জঙ্গিবাদের পাহারাদার হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তার প্রতি আমার এখনও অনুরোধ, জঙ্গিবাদের সঙ্গ ত্যাগ করুন, জনগণের কাছে আত্মসমর্পণ করুন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ব্লগার হত্যা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ঘটনায় যারা জাড়িত তাদেরকে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। একটি ঘটনা ছাড়া প্রায় সবগুলোতে শনাক্ত করতে পেরেছি। সাম্প্রতিক মিতু, পুরোহিত, সেবাইত হত্যার ঘটনা বাদ দিয়ে। আশা করি, এই সব ব্যাপারেও ভাল খবর দিতে পারবো।
গত ৭-৮ বছরের জঙ্গি হামলার জড়িতদের মধ্যে ৭৩ জনের বেশি জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, উচ্চ আদালতে আপিল রয়েছে। আপিলে সাজা বহাল থাকলে তাদের সাজা কার্যকর করা হবে।
এছাড়া নিরাপত্তা চেয়ে ব্যবস্থা নিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাইরের কোন রাষ্ট্রনায়কের কাছে আর্জি জানানোর দরকার নেই বলেও মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী।
প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার একটি খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে ‘বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হস্তক্ষেপ চেয়েছেন’ বলে এ বিষয়ে সরকারের প্রতিক্রিয়া জানতে চান এক সাংবাদিক।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার সম্প্রীতি রক্ষা করছে। কোরবানির পাশাপাশি যেভাবে পুজা উদযাপন করছে। সরকার নিরাপত্তা দিতে পারছে বলেই তারা তাদের ধর্ম চর্চার সুযোগ পাচ্ছে। সুতরাং মনে করি না, বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধান করতে বাইরের কোন রাষ্ট্র নায়কের কাছে আর্জি করার প্রয়োজন আছে, আমরাই যথেষ্ট।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারকে বিব্রত করতে সরকার উৎখাত করতে বাংলাদেশে খালেদার নেতৃত্বে ক্রমাগত চক্রান্ত চলছে, সেই চক্রান্তের অংশ হিসাবে তারা সাধারণ নাগরিকের গায়েও যেভাবে হাত দিচ্ছে, তেমনি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের গায়েও হাত দিচ্ছে। এতে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে না। দাঙ্গা লাগছে না। এটা কতিপয় জঙ্গিবাদিরা আক্রমণ করছে।
‘প্রকৃত বিরোধী’ দলের সঙ্গে ‘প্রকৃত সংলাপ’ আয়োজন প্রসঙ্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বক্তব্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল বলেও মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রকৃত গণতান্ত্রিক শক্তির সাথে সংলাপ চলে। গণতন্ত্রের মুখোশ পরা, জঙ্গিবাদী-মৌলবাদী-উগ্রবাদী শক্তির পৃষ্ঠপোষকদের সাতে সংলাপ কোন সুফল বয়ে আনে না। তাই জঙ্গিবাদী-সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কোন আলোচনা নয়, প্রয়োজন তাদের বিচার ও শাস্তি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৬
এমআইএইচ/আরআই