ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

ইউপি নির্বাচনে কী পেল বিএনপি

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৩ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৬
ইউপি নির্বাচনে কী পেল বিএনপি

ঢাকা: বর্তমান সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়- জনগণের কাছে এই বার্তা পৌঁছানোর জন্যই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি।

নির্বাচন শেষে দলটির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, ‘১১৬ জনের প্রাণহানি’ এবং ‘ব্যাপক কারচুপি’র মাধ্যমে ৬ ধাপে শেষ হওয়া নির্বাচনে বিএনপির উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে।

 

নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বিএনপি নেতাদের মতও প্রায় অভিন্ন। তারাও মনে করছেন, ফলাফল যাই হোক, নির্বাচনে ‘ব্যাপক কারচুপি’ ও প্রাণহানির ঘটনায় প্রমাণ হয়েছে, এই সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
 
বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে দলটির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, শুধু জেতার জন্য নয়, একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের কাছে একটা ম্যাসেজ পৌঁছানো দরকার ছিল- এই সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। কারণ, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে এক ধরনের ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ তৈরি হয়েছিল।
 
তবে দলের অনেক নেতাই ‘নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গের’ মধ্যে কোনো সাফল্য দেখতে পাচ্ছেন না। নির্বাচন পরবর্তী অনানুষ্ঠানিক মূল্যায়নে তারা বলছেন, ৬ ধাপে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১০২ ইউপিতে প্রার্থীই পায়নি বিএনপি। ১৮৮টিতে প্রতিপক্ষের বাধার মুখে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি দলের মনোনীত প্রার্থীরা। ৫৯টি ইউপিতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর প্রতিপক্ষের চাপের মুখে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে যাওয়া হওয়া প্রার্থী। বেশ কয়টি ইউপিতে মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। সব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত ৫৫৪টি ইউপিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে পারেনি বিএনপি।

 

অতএব কেবল সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ‘গাফিলতি’, ‘অযোগ্যতা’ ও ‘পক্ষপাতিত্ব’কে সামনে এনে তৃপ্তির ঢেকুর তোলার পক্ষে নন বিএনপির অনেক নেতাই। বরং এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা যেটুকু প্রকাশ পেয়েছে, তা ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছেন তারা।
 
কেউ কেউ আবার বলছেন, নির্বাচনের মাঠে বিএনপি কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি। পারেনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করতে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে মূলত আওয়ামী লীগের সঙ্গে দলটিরই বিদ্রোহী প্রার্থীর। গোলমাল, দাঙ্গা-হাঙ্গামাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের হয়েছে। হতাহতের শিকারও হয়েছেন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা।
 
তারা বলছেন, সাংগঠনিক ভিত মজবুত হলে বিএনপির পক্ষেও ভাল রেজাল্ট করার সুযোগ ছিল ইউপি নির্বাচনে। সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং বারবার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় নেতা মাঠে না যাওয়ায় কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করতে পারেনি বিএনপি।
 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির ইউপি নির্বাচনে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব মো. শাহজাহান বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচন  অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে আওয়ামী লীগ-বিএনপির প্রকৃত অবস্থানটা বোঝা যেতো। যেহেতু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, সেহেতু আমরাও ঠিক বুঝতে পারছি না কার সাংগঠনিক ভিতটা কেমন।
 
এদিকে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে ওঠা মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ নিয়েও চিন্তিত দলটির শীর্ষ নেতারা। দলের চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় ঘিরে থাকা ওইসব নেতা, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনৈতিক লেদদেন নিয়ে অনেক হৈ চৈ হয়েছে। নির্বাচন চলাকালীন শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বৈঠকে বিষয়টি তদন্তেরও দাবি ওঠে।

সূত্রমতে, দীর্ঘ দিন ক্ষমতা ও জাতীয় সংসদের বাইরে থাকার পর ছোট-খাটো নির্বাচনেও কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন মনোনয়ন বাণিজ্য ভাবিয়ে তুলেছে বিএনপির নীতি-নির্ধারকদের।
 
সব মিলিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ‘নিরপেক্ষতা’ ও ‘সুষ্ঠু নির্বাচন করার সদিচ্ছার অভাবের প্রমাণ’ ছাড়া ইউপি নির্বাচনে বিএনপির তেমন কোনো অর্জনই দেখছেন না দলটির নেতারা। বরং কাঙ্ক্ষিত ফলাফল করতে না পারায় দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে বলেই মনে করছেন তারা।
 
তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টিকে দেখছেন ভিন্নভাবে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে আমরা ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ভোটাররা ঠিক মতো ভোট দিতে পারলে ফল আমাদের পক্ষেই আসতো। ব্যাপক কারচুপি ও হাঙ্গামার কারণে ভয়ে অনেকেই কেন্দ্র যায়নি। ভোটাররা ঠিক মতো ভোট দিতে পারেনি। সুতরাং বিএনপির ফলাফল নিয়ে আমরা চিন্তিত নই, গোটা নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৭ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৬
এজেড/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।