ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

পর্যবেক্ষণের কিছু বিষয় প্রত্যাহার চায় আওয়ামী লীগ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৭
 পর্যবেক্ষণের কিছু বিষয় প্রত্যাহার চায় আওয়ামী লীগ

ঢাকা: ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে বিচার্য বিষয়ের বাইরে সর্বোচ্চ আদালত যেসব বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, তার কিছু কিছু প্রত্যাহার চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পর্যবেক্ষণগুলো প্রাসঙ্গিক ছিলো না বলেও মনে করে দলটি।

এ রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে সরকার আবেদন জানানোর চিন্তা-ভাবনা করছে বলেও জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা ও মন্ত্রী।

তারা বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি নিয়ে দলের ভেতরে ও বাইরে এবং আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।

তাদের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

অন্যদিকে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে রাখার যে বিষয়টি সুপ্রিম কার্টের আপিল বিভাগ বাতিল করেছেন, সেটিকে অন্য কোনো ফর্মে আনা যায় কি-না- সে বিষয়টিও পর্যালোচনা করছে সরকারি দল।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বাংলানিউজকে বলেন, ‘কিছু বিষয়ে আদালত যে মতামত দিয়েছেন, সেগুলো বিচার্য বিষয় ছিলো না। যে পর্যবেক্ষণগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলোও বিচার্য বিষয়ের বাইরে। এ বিষয়গুলো এক্সপাঞ্জ (প্রত্যাহার) চায় আওয়ামী লীগ। এগুলো এক্সপাঞ্জের সুযোগও রয়েছে’।

এজন্য রিভিউ আবেদনের সুযোগ রয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান তারা।

এ লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীর জরুরি যৌথসভা আহ্বান করা হয়েছে। এ সভায় সার্বিক বিষয়ে আলোচনা ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।

এদিকে সকালে সংবাদ সম্মেলনে সরকারের পক্ষ থেকে রায়ের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

গত ০১ আগস্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দেওয়া ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। গত ০৩ জুলাই হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে সর্বসম্মতিক্রমে চূড়ান্ত রায়টি দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলও খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত।

গত বছরের ০৫ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে মূল রায়টি দিয়েছিলেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ।

২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের ফলে প্রথম দফার মহাজোট সরকারের আমলে আনা সংশোধনীটি বাতিল হয়ে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা ফের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে চলে এসেছে।

রায়ের পরে গত ০৬ আগস্ট প্রথম সভাও করেছেন পুনর্বহাল হওয়া সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল।

পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, রায়ের পর্যবেক্ষণে রাজনীতি, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ও সংসদ ‘অকার্যকর’ এবং গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ বলা আওয়ামী লীগের জন্য স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংসদ সদস্যদের বিষয়ে যে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোতেও বিব্রত হয়েছে এবং সব বিষয়ে আপত্তি রয়েছে দলটির।

এ বিষয়গুলো রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিষয়। এগুলো অকার্যকর হয়ে গেলে রাষ্ট্রের কোনো কিছুই তো বাকি থাকে না বলেও মনে করছে আওয়ামী লীগ।

এছাড়া ‘আমিত্ব বা কোনো একজন ব্যক্তি দ্বারা কোনো একটি রাষ্ট্র বা জাতি তৈরি হয়নি’ বলা হয়েছে রায়ে। এটি বঙ্গবন্ধুকে ইঙ্গিত করা হয়েছে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। এতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং তাকে ঘিরে যে বাংলাদেশের অর্জন সেটিকে অবজ্ঞা করা হয়েছে বলে দাবি করে এ বিষয়গুলো প্রত্যাহার চায় দলটি।

বুধবার (০৯ আগস্ট) বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু বলেন, ‘ষোড়শ সংধোনীর কয়েকটি পর্যবক্ষেণ আপত্তিকর। রায়ের সঙ্গে এসবের কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই। আমরা রায় নিয়ে দলগতভাবে পর্যালোচনা করছি। দলীয়ভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো, এ রায়ের রিভিউ করবো কি-না’।

পর্যবেক্ষণগুলো প্রত্যাহারের সুযোগ আছে কি-না- জানতে চাওয়া হলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ রায়ের রিভিউ করা যেতে পারে। সরকার কি করবে বা কি সিদ্ধান্ত নেবে জানি না। বিচার্য বিষয়ের বাইরে কিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আসলে সেগুলো বিচার্য বিষয় ছিলো না, এক্সপাঞ্জের সুযোগ আছে’।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৭
এসকে/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।