বিজয়ের রাতেই আরিফুলকে দলীয় কর্মীর মরদেহ উপহার দিলো ছাত্রদল। নিহত ফয়জুর হক রাজু জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ প্রচার সম্পাদক।
দলীয় সূত্র জানায়, সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচন চলাকালে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কার্যালয়ে হামলার মামলায় রাজুও ছিলেন আসামি। মাত্র দু’দিন আগে এসব মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন রাজু।
জামিনে এসে ধানের শীষের প্রার্থী আরিফের পক্ষে চালিয়েছেন প্রচার-প্রচারণা। খেটেছেন রাত-দিন। কিন্তু যাদের হাতে হাত ধরে রাজু স্বপ্ন দেখেছেন দলীয় প্রার্থীর বিজয়ের, তাদের হাতেই নৃশংসভাবে খুন হয়ে নিথর দেহে সফেদ কাপড় জড়ালেন তিনি।
এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডে নগরবাসী স্থম্ভিত হওয়ার একটাই কারণ অভিযুক্ত জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রকিব চৌধুরী নব নির্বাচিত মেয়র আরিফুল ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্ঠা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের ঘনিষ্ঠ লোক। রকিবের অতীত রেকর্ডে রয়েছে আরও খুনাখুনির ঘটনা।
ছাত্রদলের পদবঞ্চিত একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৫ সালে জাফলং পাথর কোয়ারি দখল করতে গিয়ে রকিব ও তার সহযোগীদের গুলিতে এক কিশোর নিহত হয়। ওই ঘটনায় রকিবসহ পাঁচ জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে জনতা। পরে সেসব ঘটনা আড়াল করতে আরিফ-মুক্তাদিরের কাছাকাছি আসেন রকিব।
দলীয় সূত্রমতে, সম্প্রতি জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি নিয়ে বিভেদ তৈরির পেছনে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের হাত রয়েছে। ফলে নতুন কমিটি ও পদবঞ্চিতদের মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। যার বাস্তব প্রতিফলন ঘটে রাজু হত্যার মধ্যে দিয়ে। ফলে মেয়র পদে বিজয়ের দিনে আরিফের গায়ে রক্ত ছিটিয়ে দিলেন কতিপয় ছাত্রদল ক্যাডাররা।
শনিবার (১১ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টার দিকে আরিফুলের কুমারপাড়ার বাসভবন সংলগ্ন সড়কে গলির মুখে হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহত ছাত্রদল নেতা রাজু উপশহর এ-ব্লকের ৯নং রোডের ১২নং বাসার বাসিন্দা ফজর আলীর ছেলে। তিনি সাবেক ছাত্রদল নেতা ইমরান চৌধুরী-রেজাউল করিম নাচন ও আজিজ গ্রুপের সদস্য ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রাতে নগরের মেন্দিবাগ রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসার পর বিজয় মিছিল সহকারে নগরের কুমারপাড়া বাসায় যান আরিফুল। সেখান থেকে ফিরছিলেন পদবঞ্চিত কমিটির ছাত্রদল নেতা রাজু, উজ্জ্বলসহ তিনজন। একটি মোটরসাইকেলে তারা আরিফের বাসার গলি থেকে বের হচ্ছিলেন। এমন সময় আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশিয় অস্ত্র হাতে কয়েকটি মোটরসাইকেলে করে যুবকরা হামলা করেন। দেশিয় অস্ত্রের আঘাতে রাজু, উজ্জ্বল ও অন্য কর্মী রাস্তায় পড়ে যান। তাদের রক্তে ভিজে পিচঢালা পথ। হামলাকারী এক যুবক গুলি করেন। আহতদের বাঁচাতে পদবঞ্চিত অন্য নেতাকর্মীরা এগিয়ে এলে এক যুবক তাদের লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পালিয়ে যান।
রাজুর সতীর্থদের দাবি ছাত্রদলের আব্দুর রকিব চৌধুরী রজবের নেতৃত্বে জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটির সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমনসহ সভাপতি এনামুল, সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনার, মোস্তাফিজ, রাসেল ও জাহাঙ্গীর এ হামলায় জড়িত। মোটরসাইকেলে থাকা রাজুসহ অন্য দলীয় কর্মীদের কুপিয়ে ও গুলি বর্ষণ করেন। পরে গুরুতর অবস্থায় রাজু, উজ্জ্বল ও আরেক কর্মীকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রপচারকালে মারা যান রাজু।
এদিকে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে হত্যাকারীদের গ্রেফতার দাবি করেছেন আরিফ। রোববার (১২ আগস্ট) দুপুরে রাজুর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়। দুপুরে সেখানেও উপস্থিত হন আরিফুল। তিনি রাজুর স্বজনদের সান্তনা দিতে গিয়ে অশ্রু ঝরান।
অন্যদিকে, ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা হাসপাতাল মর্গের সামনে অবস্থান নেন। মরদেহ নিয়ে তারা নগরে মিছিল বের করেন।
এ ঘটনায় রাতভর অভিযান চালালেও পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি এবং মামলাও হয়নি বলে জানিয়েছেন সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৮
এনইউ/টিএ