মন্ত্রী বলেন, সংলাপের শুরুতে যখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের পরিচয় পর্ব চলছিলো, তখন অনেকেই অনেক পরিচয় দিচ্ছিলেন। তখন আমি বলতে চেয়েছিলাম, আপনারা আপনাদের আগের পরিচয়টি দেন।
শুক্রবার (২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম আয়োজিত 'রাজনীতিতে খুন, খুনের রাজনীতি' শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমি তরুণদের উদ্দেশে বলবো, ভয় ও লোভের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন না। যার সর্বশেষ উদাহরণ ড. কামাল। বঙ্গবন্ধু ছাড়া যিনি ড. কামাল হতে পারতেন না। কোনো রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই বঙ্গবন্ধুর আসনে তিনি সংসদ সদস্য (এমপি) হয়েছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর গুণগান করতেন। তিনি কিভাবে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন? হয়তো বয়স হয়েছে তাই বুঝতে ভুল করে বিভ্রান্ত হয়ে কাজ করেছেন।
সংলাপ ভালো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংলাপে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত নেতাদের বারবার বলেছেন, আপনাদের যা যা বক্তব্য আছে সবাই সবকিছু বলুন। আপনারা আপনাদের প্রয়োজনে সভা-সমাবেশ করুন। কেউ বাধা দেবে না। অহেতুক মিথ্যা মামলা থাকলে আমরা তা দেখবো। তাছাড়া এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছেন।
মন্ত্রী বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিলো তখন আমরা আমাদের আওয়ামী লীগ অফিসে যেতে পারতাম না। তখন আমরা রাজপথে মার খাওয়াসহ অনেক ধরনের অত্যাচার নিপীড়ন সহ্য করেছি। কিন্তু আমরা কখনো করুণা নেইনি বা লিখিত আকারে আবেদন জানাইনি। তাই বিএনপির প্রতি আমাদের আহ্বান, আপনারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন ও জনগণের সমর্থন নেন। জনগণ রায় দিতে ভুল করে না। বর্তমান মিডিয়ার যুগে নির্বাচনের কারচুপি সম্ভব নয়। আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গোল দিতে ভালো লাগে না। আবার রাজনীতি করবেন নির্বাচন ছাড়া তা তো হয় না। মাছ যেমন পানি ছাড়া বাঁচে না, তেমনি একজন রাজনীতিবিদও নির্বাচন ছাড়া বাঁচতে পারে না। এজন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ক্ষমতায় আসতে না পারলেও সংসদে অন্তত আসেন। তাহলে সঠিক জায়গায় আপনাদের দাবিগুলো তুলে ধরতে পারবেন।
রাজনীতিতে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আওয়ামী লীগের এ প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীরা জানতো এই চারজনের যেকোনো একজন বেঁচে থাকলেই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেবে। তাই তাদের কাউকে বাঁচিয়ে রাখেননি। আমি দেখেছি, এই চার নেতা যুদ্ধের সময় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। তারা সামান্য একটি ঘরে এক কাপড় পড়ে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
এদিকে, চার নেতার খুনের পর বাংলাদেশ ২১ বছর পিছিয়ে ছিলো পাকিস্তানের ছায়া হয়ে। ছায়াটা বহন করেছিল জিয়াউর রহমান এরপর হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও খালেদা জিয়া।
অনেক বিচারকার্য এখনও সম্পন্ন হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এখনও অনেক দণ্ডিত পলাতক আসামিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারিনি। তবে আমরা চেষ্টায় আছি। আমি বিশ্বাস করি এসব অপরাধীদের ফিরে আসতে হবে ও বিচারের মুখোমুখি হতে তাদের বাধ্য করা হবে।
এদিকে, গত এক দশকে রাজনৈতিক কোনো হত্যাকাণ্ড নেই। হলেও বিচার হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা কারাগারে আছেন অপরাধের শাস্তি পেয়ে। আবার অপরাধ করে মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন এমন নজিরও রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বাবার (শহীদ এম মনসুর আলী) জানাজা আমি পড়তে পারিনি। কিন্তু আমার গর্ব আমি তার সন্তান। জাতীয় চার নেতা দেশকে ভালোবেসে বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করেনি। শহীদ এম মনসুর আলী ন্যায়ের পক্ষে লড়াই করতে কখনও মাথা নত করেননি।
সংগঠনটির আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন- পরিকল্পনা কমিশনের অর্থনীতি বিভাগের সদস্য অধ্যাপক ড. শামসুল আলম, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ মান্নান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনীতিতে বিভিন্ন সময়ের হত্যাকাণ্ড ও অপরাজনীতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৮
এমএএম/আরবি/