ঢাকা, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

হাওরে বাঁধের নামে লুটপাট: কপাল পোড়ে কৃষকের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২২
হাওরে বাঁধের নামে লুটপাট: কপাল পোড়ে কৃষকের

ঢাকা: হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ এখন লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। কৃষকদের স্বার্থে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা দেয়, কিন্তু যারা কাজ বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত, তারা কৃষকের নয়, নিজেদের স্বার্থ বড় করে দেখেন।

স্থানীয় রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক প্রভাবশালীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলে হাওরে বাঁধ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। যে কারণে কাজে দুর্নীতি, অনিয়ম হচ্ছে। বাঁধের নামে টাকার অপচয় ও লুটপাট হয়। এতে কপাল পোড়ে কৃষকের।

মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর নয়াপল্টনে যাদু মিয়া মিলনায়তনে 'বাঁচাও হাওর-বাঁচাও দেশ' আয়োজিত মতবিনিময় সভায় নেতৃবৃন্দ এমন কথা বলেন।

জাসদের উপদেষ্টা ও সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি এনামুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা।

তারা বলেন, উজান থেকে আসা ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জে একের পর এক বাঁধ ভেঙে ও পানি ঢুকে হাওরের বোরো ধান তলিয়ে যাচ্ছে। হবিগঞ্জের কয়েকটি হাওরেও ঢলের পানিতে ফসলহানি হয়েছে। প্রতিবছরই কৃষকরা এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অথচ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। প্রতিবছর হাওরের বাঁধ নির্মাণের জন্য সরকার বরাদ্দ দিলেও তা যথাযথভাবে কাজে লাগছে না।

 

নেতৃবৃন্দ বলেন, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ এখন লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। কৃষকদের স্বার্থে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা দেয়, কিন্তু যারা কাজ বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত, তারা কৃষকের নয়, নিজেদের স্বার্থ বড় করে দেখেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা, স্থানীয় রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক প্রভাবশালীর মিলে হাওরে বাঁধ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। যে কারণে কাজে দুর্নীতি, অনিয়ম হচ্ছে। বাঁধের নামে টাকার অপচয় ও লুটপাট হয়। এতে কপাল পোড়ে কৃষকের।
 
তারা আরও বলেন, একসময় হাওরে ঠিকাদারদের মাধ্যমে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ হতো। কিন্তু ২০১৭ ফসলডুবির পর ঠিকাদারি প্রথা বাদ দিয়ে স্থানীয় কৃষক ও সুবিধাভোগীদের নিয়ে গঠিত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে কাজ হচ্ছে। বেশি মানুষকে সম্পৃক্ত করে কাজ করার এই পদ্ধতিটি গ্রহণযোগ্য। প্রথম দুয়েক বছর কাজ ভালোই হয়েছে, এখন এটিকে নিষ্ক্রীয় ও বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র চলছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারের বরাদ্দের অধিকাংশ দুর্নীতিবাজদের পেটে চলে যাওয়ায় বাঁধ নির্মাণ যেমন যথাযথভাবে হয় না, তেমনি রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির দায়িত্বটিও ঠিকমতো হয় না। এখন পাহাড়ি ঢল আসায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। এক পক্ষ, আরেক পক্ষকে দোষারোপ করে দায় এড়াতে চায়।

তারা বলেন, এ সংকট থেকে উত্তরণে হাওর এলাকার নদ-নদী খনন জরুরি। বাঁধ নির্মাণে পিআইসি পদ্ধতি রাখতে হবে। তবে অনিময় ও দুর্নীতিমুক্ত করতে পিআইসির সংস্কার দরকার। কাজে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। প্রশাসন ও পাউবো কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে কাজ অবশ্যই যথা সময়ে শুরু এবং শেষ করতে হবে। এবার যারা বাঁধের অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত, তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

 বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৩ ঘণ্টা, ১৯, ২০২২
 এমএইচ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।