ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

দেশের মালিকানা ছিনতাই হওয়ার পথে: জিএম কাদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২১ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২২
দেশের মালিকানা ছিনতাই হওয়ার পথে: জিএম কাদের

নারায়ণগঞ্জ: জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, আমরা কারো সঙ্গে নেই। আমরা দূরে আছি।

সরকারি দলেও নেই, বিরোধী দলেও নেই। আমরা জনগণের সঙ্গে আছি। দেশের মালিক সমালোচনা করতে পারবে এবং দায়িত্বশীলকে শুনতে হবে- এটাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মালিকানা ছিনতাই হওয়ার পথে। এটা জনগণের দেশ হবে এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই দেশ চালাবে- এটাই আমাদের রাজনীতি। আমরা জনগণের রাজনীতি করি। আমরা দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিলাম। আওয়ামী লীগ বলেছিল খুন, গুম ও  বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ করবে। সেটা তারা করেনি। তারা বলেছিল দুর্নীতি কমাবে, কিন্তু কমেনি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে আদর্শগত বিরোধ রয়েছে, তবে চরিত্রগত মিল রয়েছে। আমরা জনগনকে সঙ্গে নিয়ে তাদের দখলকৃত মালিকানাস্বত্ব ফিরিয়ে দেব।

শুক্রবার (১৭ জুন) বিকেলে বন্দরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর জাপার সম্মেলনে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, পাকিস্তানিরা আগে এদেশের সম্পদ লুটে নিজ দেশে নিয়ে যেত। এখনও আমাদের দেশের টাকা বাইরে পাচার হচ্ছে। সেই টাকা এ দেশের মানুষের। তারা এই টাকা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এখানে শতভাগ টাকাই অসৎ টাকা। এবার বাজেটে আইন করে কালো টাকা দেশে আনার সুযোগ দিতে চাইছে। এটা একটা অনৈতিক সুবিধা। আর যারা ক্ষমতায় আসার জন্য লাফালাফি করছে তারাও একই লুটপাট করেছে।

তিনি বলেন, রাজনীতি হল রাজার কাজকর্ম। এখন মানুষ বলে এটা আমার দেশ, আমরাই সব ঠিক করব। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ দেশের মালিক। এর ক্ষমতা ও সম্পদের মালিক জনগণ। তবে দেশে সে অবস্থা আর নেই। এখন আর নির্বাচন নেই। নির্বাচন ব্যাবস্থা প্রহসনে পরিণত হয়েছে।   তাই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করার জনগণের ক্ষমতাও চলে গেছে। আমাদের সবাইকে সমানভাবে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয় না।

জাপা প্রধান বলেন, এরশাদ যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, আমরা তা বাস্তবায়ন করব। আমাদের নেত্রী রওশন এরশাদ অসুস্থ, আপনারা সবাই তার জন্য দোয়া করবেন। সেলিম ওসমানের আগে তার ভাই নাসিম ওসমানের সঙ্গে আমার খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। আমি তার জন্যও দোয়া চাই।

তিনি বলেন, আমি এখানে এক সময় চাকরি করতাম। আজ এখানে এসে আবারো পুরানো দিনগুলো মনে পড়ে গেল। আজ যারা এত বিশাল একটি আয়োজন করেছেন, আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনাদের এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী হওয়া। এতে প্রমাণ হয়েছে জাপা সজীব ও শক্তিশালী। এটা মানুষ দেখছে, ৩২ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকেও জাপা শক্তিশালী।

২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে আওয়ামী লীগের কী অবস্থা হয়েছিল দেখেছেন। বিএনপিও আজ ১৪ বছর যাবৎ ক্ষমতার বাইরে। তাদেরও টালমাটাল অবস্থা। তবে জাপা আজও উজ্জীবিত। আমরা এ বাংলাদেশকে পরিবর্তন করে উপহার দেব, যোগ করেন তিনি।

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে জিএম কাদের বলেন, সবাইকে নেতৃত্ব মেনে চলতে হবে। দেশ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সামনে নির্বাচন আসছে। নির্বাচন যত কাছে আসছে, দেশ ততো সাংঘর্ষিক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দল যেনতেন ভাবে ক্ষমতায় থাকতে চাইছে, আর বিরোধী দল যে কোন মূল্যে ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছে। সারাদেশের মানুষ উৎকণ্ঠার সঙ্গে তা দেখছে। প্রশাসনকে দলীয়করণ করে সরকার ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছেন। বিরোধী দলও মরিয়া ক্ষমতায় আসতে। কারণ তারা জানে, যে হারবে, তারা হারিয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়া বাকি দলগুলো কিন্তু সারাদেশে সক্রিয় নয়। বাংলাদেশের মানুষ সংগ্রাম করছে মুক্তির জন্য। দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও নির্যাতন থেকে মুক্তি চায়। ব্রিটিশরা এ দেশের কিছু মানুষকে দিয়েই আমাদের শোষণ করত। পাকিস্তানিরাও আমাদের শোষণ করেছে। বৈষম্য ছিল সেখানে, ধনীরা আরও ধনী হত, আর গরিবরা আরও গরিব। আজ আমরা বাঙালিরাও নিজ দেশে এটা সৃষ্টি করেছি। নিজ দলের লোক হলে চাকরি সুযোগ সুবিধা পাবে, নয়ত পাবে না। এটা একা আওয়ামী লীগ বা বিএনপি করেনি। দু’জনেই করেছে। সাধারণ মানুষ এখনো অত্যাচারিত, নিপীড়িত।

এ সময় জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২২
এমআরপি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।