ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন করার জন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার দরকার। সেটা করতে হলে এ সরকারকে হঠাতে হবে।
রোববার (১৭ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে খ্যাতিমান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাবির সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্বাধীনতা ফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মোশাররফ বলেন, যে দেশ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে। যে দেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল আকাঙ্ক্ষা ছিল গণতন্ত্র। আজকে সেই গণতন্ত্র নেই। যে মূল আকাঙ্ক্ষা ছিল সাম্য, সেখানে আজকে অর্থনৈতিক বৈষম্য এত বেশি যে পৃথিবীতে ধনী-গরিবের বৈষম্য বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। আজকে দেশে শুধু লুটপাটের কারণে অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। আজকে যারা ক্ষমতায় তারা যেহেতু গণতান্ত্রিক নয়, তারা যেহেতু গায়ের জোরে ক্ষমতায়। দিনের ভোট রাতে ডাকাতির সরকার, সেজন্য জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা লুট করে দেশ থেকে যে পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার করেছে সেটা বাংলাদেশ ব্যাংক স্বীকার করেছে, পত্রিকায়ও এসেছে। শ্রীলঙ্কাও মেগা প্রজেক্ট করে মেগা দুর্নীতি করেছে।
তিনি বলেন, এমাজউদ্দীন আহমদের সারাজীবনের চর্চা ছিল গণতন্ত্র। আজকে বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সেই গণতন্ত্র। যারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে তাদের হাতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। এটা কেউ বিশ্বাস করবে না। সরকার তাদের এজেন্ট নামিয়ে দিয়েছে। এদেশের মানুষকে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করছে। তাদের হাতেই নাকি সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। সেটা কীভাবে হবে। তারা গণতন্ত্র ডাকাতি করেছে। একবার নয়, স্বাধীনতার পরে ৭২-৭৫ সালে গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল করেছে। সব দল বাতিল করেছে, সংবাদপত্র বাতিল করেছে। আবার পর্যায়ক্রমে ১/১১ সরকার তাদের বসিয়ে দিয়ে যাওয়ার পর একটা বয়কটের আর একটা রাতে ডাকাতির নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় আছে। আবার স্বপ্ন দেখছে আগামীতে ইভিএমের মাধ্যমে কারসাজি করে আবার ক্ষমতায় থাকতে চায়। অতএব আমরা যে বলছি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে চাই, অবশ্যই আমরা আগামীতে ক্ষমতায় গিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবো।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপির দায়দায়িত্ব বেশি উল্লেখ করে ড. মোশাররফ বলেন, অবশ্যই বিএনপির দায়িত্ব বেশি। কেন না বিএনপি বার বার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাকশাল থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছেন। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এরশাদের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে আপসহীনভাবে আন্দোলন করে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রত্যেকটি নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় সেজন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিএনপি সংবিধানে সংযোজিত করেছিল। আর শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য সেই কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। আজকে যদি কেয়ার সরকার ব্যবস্থা স্থায়ী থাকতো তাহলে এ পরিবেশ সৃষ্টি হতো না। তাহলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করতে হতো না যে বিএনপি নির্বাচনে আনার জন্য। এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক। তারা কী বলেছে সেটাও আমরা শুনেছি।
তিনি বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক দল, নির্বাচনের দল। সত্যিকারভাবে যদি নির্বাচন হয় তাহলে বিএনপি নিজেই নির্বাচনে যাবে। সেখানে আমেরিকার বলার কী প্রয়োজন আছে। কিন্তু তারা দেশে সেই নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করবে না। কেন না গণতন্ত্র তারা হত্যা করেছে, সেই গণতন্ত্র তাদের দ্বারা ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব না। এদের দ্বারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। অতএব এদেরকে হঠাতে হবে। এদেরকে আমরা বলছি স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকার। আর আন্তর্জাতিকভাবে তারা হচ্ছে হাইব্রিড সরকার। আপনারা দেখেছেন আমেরিকায় গণতান্ত্রিক কনভেনশন হয়েছে বাংলাদেশ দাওয়াত পায়নি। সেটার ব্যাখ্যা আমেরিকা দিয়েছে যে বাংলাদেশ এখন গণতান্ত্রিক দেশ নেই। এটা একটা হাইব্রিড দেশ। অতএব সেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে প্রথম এ সরকারকে হঠাতে হবে।
স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, বিলকিস ইসলাম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২২
এমএইচ/আরবি