ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ভিন্ন ধরনের নীল নকশা করেছে। আর এই তা বাস্তবায়নের প্রধান ম্যানেজার হচ্ছেন বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)।
সোমবার (১৮ জুলাই) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে বিগত দিনে বিএনপির আন্দোলনে গুম, খুন হওয়া পরিবারগুলোর সঙ্গে এই ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের আয়োজন করে।
রিজভী বলেন, অবৈধভাবে টিকে থাকার জন্য ২০১৪ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিহীনভাবে নির্বাচন করেছে আওয়ামী লীগ। ২০১৮ সালে মিড নাইট নির্বাচন করেছে। এবার একটা অন্য ধরনের পরিকল্পনা তাদের আছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রধান ম্যানেজার হচ্ছেন সিইসি।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা নিজেই একটি দুর্যোগ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি দুর্যোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। দুর্যোগ বলেই তো গুম-খুনের পরিবার এখানে উপস্থিত হয়েছেন। শেখ হাসিনা যত দিন ক্ষমতায় থাকবেন, ততদিন গুমের সংখ্যা বাড়বে। ক্রসফায়ারের সংখ্যা বাড়বে। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটবে। কারণ এ ধরনের সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলে রাখতে এমন কোনো হীন কাজ নেই, যা তারা করবে না।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) যদি সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক সরকার হতেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতেন, তাহলে বিরোধী দলের অনেক নেতাকর্মী দুনিয়া থেকে চলে যাবে কেন? তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যাবে না কেন? তারা নিরুদ্দেশ হবে কেন? তাদের পরিবার আজ হাহাকার করছে কেন? তাদের আর্ত চিৎকার-বুক ফাটা কান্না আমাদের শুনতে হচ্ছে কেন? এজন্য সম্পূর্ণ দায়ী শেখ হাসিনা।
নির্বাচনে কেউ তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ালে আপনারা রাইফেল নিয়ে দাঁড়াবেন- সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, এই সিইসি শেখ হাসিনার নিজস্ব ক্রীতদাস হিসেবে কাজ করছেন। এটাই তিনি প্রমাণ করছেন। দেশের একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়ে তিনি কীভাবে এমন কথা বলতে পারেন। দেশে যত অবৈধ রাইফেল, বন্দুক তলোয়ার আছে, সবতো আওয়ামী লীগের হাতে। ভোটাররা তো তলোয়ার, রাইফেল নিয়ে যায় না। তারা নিজেদের অধিকারটা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সেই অধিকারটা হচ্ছে নির্বাচনে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেবে। এই নিশ্চয়তা চায় ভোটাররা।
তিনি আরও বলেন, তলোয়ার নিয়ে আসলে, রাইফেল নিয়ে নামবেন- এই কথা কেন আসবে? আপনিতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে রয়েছেন। নির্বিঘ্নে, নিশ্চিন্তে মানুষের ভোটের অধিকার প্রয়োগের পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব তো নির্বাচন কমিশনের (ইসির)। আপনিতো এটা করবেন না। যেদিন আপনাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেদিন থেকে সারা দেশের মানুষ জানে আপনি প্রধানমন্ত্রীর নীল নকশা বাস্তবায়ন করবেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, আজকে জ্বালানি কেনার টাকা নেই, যা দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরির উপকরণ কিনতে পারা যাবে। ব্যাংকে পর্যন্ত টাকা নেই। যা আছে, তার অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ও তাদের আত্মীয় স্বজন উত্তোলন করে বিদেশে পাচার করেছে। এই পরিস্থিতিতে জনগণ বেঁচে থাকতে পারবে কিনা সেই শঙ্কায় পড়েছে।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতা নয়, এদেরকে পদত্যাগ করতে হবে। শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই দলীয় সরকারের অধীনে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনেও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। নির্বাচন তখন সুষ্ঠু হবে যখন নির্দলীয় সরকার গঠন করা হবে। বিএনপি সেই লক্ষ্যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফীর ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান রিজভী।
অনুষ্ঠানে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২২
এমএইচ/এমএমজেড