ঢাকা: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার চায় না খেলাফত মজলিস। একই সঙ্গে নির্বাচকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানিয়েছে দলটি।
সোমবার (১৮ জুলাই) নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত সংলাপে এমন কথা বলেছে তারা।
সংলাপে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আবদুল কাদের স্বাক্ষরিত লিখিত প্রস্তাবনায় সুনির্দিষ্ট করে চারটি দাবির কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে-
১. নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর ও নিরপেক্ষকরণ: ক) নির্বাচন কমিশনের কাজের ক্ষেত্রে সরকার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনভাবেই হস্তক্ষেপ করতে পারবে না, এমন নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
খ) তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা ও নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, তথ্য ও আইন মন্ত্রণালয়সহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিশেষত: মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন যারা নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করবেন তাদেরকে ইসির অধীনে থাকতে হবে। ইসি চাইলে তাদের যে কাউকে বদলি করতে পারবেন, এমন বিধান থাকতে হবে।
গ) ইসির নিজস্ব জনবলের মাধ্যমেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নেওয়া।
২. নির্বাচনের পরিবেশ রক্ষা: ক) নির্বাচনকে অর্থ ও পেশী শক্তির প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় নির্বাচনী আইন প্রণয়ন ও পদক্ষেপ নিতে হবে।
খ) ভোটারদের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ নিশ্চিত করা ও যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া।
গ) প্রত্যেকটি নির্বাচনী বুথে সিসিটিভি স্থাপন করতে হবে।
ঘ) সব দলীয় প্রার্থীর ব্যক্তিগত প্রচারণা ছাড়া অন্যান্য আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণার দায়িত্ব ও ব্যয় নির্বাচন কমিশন বহন করবে, এমন ব্যবস্থা করা। ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোনো গুরুতর অনিয়ম প্রমাণ হলে প্রার্থীতা বাতিল, এমনকি নির্বাচিত হলেও তার পদ বাতিল ঘোষণার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
ঙ) সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতের লক্ষ্যে বিদায়ী সংসদ ভেঙে দেওয়া অথবা দলীয় এমপি, মন্ত্রীদের পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নেওয়া। প্রয়োজনে সংবিধানে সংশোধনী আনতে হবে।
৩. আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম পরিহার: ইভিএম যেহেতু অদ্যাবধি জনগণ ও রাজনীতিকদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি, তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে এটা ব্যবহার করা যাবে না। তবে, ভোটার ভেরিফাইয়েবল পেপার ট্রেলার সংযুক্ত করে স্থানীয় নির্বাচনে পরীক্ষা করা যেতে পারে। মেশিন যেহেতু মানুষ পরিচালনা করে, তাই সেগুলো ব্যবহারের আগে রাজনৈতিক সমঝোতা ও সবদলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া ইভিএম চালুর চেষ্টা করলে সন্দেহ আরও প্রবল আকার ধারণ করবে, যা কোনো অবস্থায়ই কাম্য নয়।
৪. জাতীয় নির্বাচনকালীন সরকার: ক) নির্বাচনী ব্যবস্থায় আস্থা ফিরিয়ে আনা। সুষ্ঠু অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতের লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ একটি সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এ জন্য প্রয়োজনীয় সংলাপের সূচনা করা জরুরি।
খ) নির্বাচনকালীন সরকার শুধু সরকারের দৈনন্দিন (Routine) কার্য সম্পাদন করবে। সে জন্য প্রয়োজনীয় আইন তৈরি করা যেতে পারে।
সংলাপে দলটির পক্ষে ১১ সদস্য অংশ নেন। এছাড়া অন্যদের মধ্যে চার নির্বাচন কমিশনারসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২২
ইইউডি/এমএমজেড