ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

প্রাপ্ত ভোটের হারে আসন বন্টন চায় সাম্যবাদী দল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০২২
প্রাপ্ত ভোটের হারে আসন বন্টন চায় সাম্যবাদী দল

ঢাকা: প্রাপ্ত ভোটের হারের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসন বন্টন করার প্রস্তাব দিলো সাম্যবাদী দল। এছাড়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করাসহ নয় দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে দলটি।

মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বসে এমন প্রস্তাবনা দেন বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া।

লিখিত আকারে যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয় সেগুলো হলো-

১) সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন:

ক) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধানের আলোকে বর্তমান সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সরকার দৈনন্দিন কার্যাবলী ছাড়া নীতিগত কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে না।

খ) অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নির্বাচনকালীন নির্বাচন কমিশনের অধিনস্ত থাকবে।

গ) নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা নির্বাচনের আগে ও পরে একটি নির্দিষ্ট সময় নির্বাচন কমিশনের অধীন থাকবে। এই সময়কালে তাদের করা কোনো অপরাধ ও কর্তব্যে অবহেলার জন্য নির্বাচন কমিশন তাৎক্ষনিকভাবে যেকোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে এবং সরকার তা বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে।

২) এনআইডি কার্ড সংশোধন: এনআইডি কার্ডের ভুল সংশোধন করতে গিয়ে অনেক সময় অনেকে হয়রানীর সম্মুখীন হন, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যত দ্রুত সম্ভব কার্যকরি পদক্ষেপ নিয়ে সংশোধনকারীদের হয়রানি থেকে রেহাই দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। হয়রানীকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিতে হবে।  

৩) ভোটার তালিকা:

ক) ভোটার তালিকা প্রকাশের আগে তার সংশোধনের জন্য আইন অনুযায়ী প্রকাশ্য স্থানে টাঙ্গিয়ে দেওয়ার বিধান রয়েছে, তার বাস্তবায়ন করতে হবে।

খ) যুদ্ধাপরাধের কারণে দণ্ডিত কেউ ভোটার হতে পারবে না; হয়ে থাকলে ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবে। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ও জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত ব্যক্তি, মায়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত না করার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।

গ) প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্তকরণ ও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।

ঘ) পার্বত্য শান্তি চুক্তি অনুযায়ী প্রকৃত ভোটার তালিকা প্রণয়ণ করে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

৪) নির্বাচনে টাকার খেলা বন্ধ করা:

ক) প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে যারা যে ভাবেই ব্যয় করুক, তা প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় হিসাবে গন্য হবে এবং তা কোনোক্রমে নির্বাচনী ব্যয়ের সীমানা লঙ্ঘন করবে না। প্রতি নির্বাচনী এলাকায় একজন নির্বাচনী কর্মকর্তা এই ব্যয় মনিটর করবেন এবং নির্বাচন কমিশনকে নিয়মিত রিপোর্ট দেবেন। এই রিপোর্টের সঙ্গে প্রার্থী দেওয়া নির্বাচনী ব্যয়ের বিবরণ মিলিয়ে দেখা হবে।

খ) প্রার্থীর নির্বাচনী আয়-ব্যয়ের বিবরণ সর্বসাধারণকে জ্ঞাত করতে উন্মুক্ত দলিল হিসাবে রাখতে হবে এবং প্রচার মাধ্যমকে তা সরবরাহ করতে হবে। যে কোনো ভোটার এ ব্যাপারে তাদের আপত্তি জানাতে পারবে।

গ) নির্বাচনী কাজে আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে এবং তা করতে না পারলে নির্বাচিত সদস্যদের শপথ নেওয়া রাখতে হবে। ঐ বিবরনীর যথার্থতা যাচাইয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

ঘ) ভবিষ্যতে প্রার্থীদের রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নির্বাচনী ব্যয় বহনের ব্যবস্থার পদক্ষেপ নিতে হবে।  

৫) নির্বাচনকে সন্ত্রাস পেশীশক্তির প্রভাব ও দুর্বৃত্তমুক্ত করতে হবে:

ক) নির্বাচনে সব প্রকার বল প্রয়োগ অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন পরিপূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা এবং বল প্রয়োগের ঘটনার শাস্তিবিধান করতে হবে।

 খ) ফৌজদারী দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত এবং দুর্নীতির দায়ে যে কোনো সময়ের জন্য সাজাপ্রাপ্তদের নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া যাবে না।

৬) নির্বাচনে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকদের প্রভাব বন্ধ রাখতে হবে:

ক) নির্বাচনে ধর্মের সর্বপ্রকার ব্যবহার সাম্প্রদায়িক প্রচার-প্রচারনা ও ভোট চাওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করতে হবে।

খ) ধর্মীয় উপাসনালয়, মন্দির, মসজিদ, গীর্জা, মঠ, ওয়াজ ও ধর্ম সভায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচার পোষ্টার হ্যান্ডবিল বিলি নিষিদ্ধ করতে হবে।

গ) ভোটের দিন সংখ্যালুঘু অঞ্চলগুলিতে নিরাপত্তার বিষয়টিকে অতীব গুরুত্ব দিতে হবে।

৭) নির্বাচনে সকলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা:

ক) পোষ্টার, লিফলেট, বেদ্যুতিক, ডিজিটাল, বিজ্ঞাপন, মাইক, নির্বাচন ব্যানার, ফেস্টুন, দেয়াল লিখন গেইট নির্মাণ ইত্যাদি বিষয়ে যেসব নিয়ন্ত্রনমূলক ব্যবস্থা আছে তা ব্যতিক্রমহীন ভাবে পালন করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন কর্মকর্তা এই বিষয়ে নিশ্চিত করবেন। এক্ষেত্রে কোনো আইন ও বিধি ভঙ্গ হলে তাৎক্ষনিক ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে জানাবেন।  

খ) নির্বাচন কমিশন প্রত্যেক নিবাচনী এলাকায় সভার আয়োজন করবে।

গ) নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার দিন থেকে সব দলের কেন্দ্রীয় সমাবেশ, মহাসমাবেশ, র‍্যালী, জনসভার ব্যয় কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রন করতে হবে।

ঘ) নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রচলিত আইন অনুযায়ী নির্বাচনী অফিস ব্যতিরেকে কোনো নির্বাচনী ক্লাব, ক্যাম্প নির্বাচনী প্রচারকেন্দ্র হিসেবে কোনো কাঠামো করা যাবে না।

ঙ) রেডিও টিভির সময় সমভাবে বন্টন করা এবং ব্যয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা। এসব প্রতিটি বিষয়ে নির্ধারণ কমিশনের তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং লঙ্ঘনকারীদের প্রার্থীতা বাতিল করতে হবে।

৮) নির্বাচন ব্যবস্থাকে আধুনিক রূপ প্রদানের জন্য ইভিএম প্রদ্ধতি চালু সময়ের জরুরি দাবি বলে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএম) যুক্তিযুক্ত বলে মনে করে ।

৯) সংসদে প্রতিনিধিত্বে ধরন: পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নির্বাচনী এলাকা ভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের বদলে আনুপাতিক প্রতিনিধিদের পদ্ধতি চালু আছে। এই অবস্থা ভোটপ্রাপ্তির হারের উপর আসন সংখ্যা নির্ধারিত হয়। নির্বাচন, সংসদ ও গণতন্ত্রকে অর্থবহ করতে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল) উক্ত বিষয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি জানাচ্ছে।

সংলাপে দলটির অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার নির্বাচন কমিশনারসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০২২
ইইউডি/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।