ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

৬ ঘণ্টা বন্ধের আদেশ মানছে না সিএনজি স্টেশন

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১২
৬ ঘণ্টা বন্ধের আদেশ মানছে না সিএনজি স্টেশন

ঢাকা: বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে সিএনজি স্টেশন ৬ ঘণ্টা বন্ধের আদেশ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বন্ধের সময়ে চলছে সিএনজি (রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস) বিক্রি।

এ অনিয়মে সংশ্লিষ্ট পাম্প মালিক ও তদারককারী কর্মকর্তাদের যোগসাজসের অভিযোগ উঠেছে।

এর আগে ২২ মার্চ থেকে আগামী ২ মাসের জন্য বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টা সিএনজি পাম্প বন্ধ রাখার আদেশ দেয় জ্বালানি মন্ত্রণালয়।

কিন্তু রাজধানীসহ সারাদেশের সিএনজি স্টেশনগুলোতে বিকেল ৪টা, কোথাও কোথাও ৫টা পর্যন্ত সিএনজি সরবরাহ করতে দেখা গেছে। আর হাইওয়ের পাম্পগুলোতে বিকেল ৫টার পরও নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত টাকা আদায় করে চলছে সিএনজি বিক্রি।

আজ বুধবার বিকেলে ৩টায় পর নগরীর অনেক পাম্পেই সিএনজি দিতে দেখা গেছে। বুধবার বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে মধ্যবাড্ডার মডার্ন টেকনোলজি সিএনজি কনভারশনে গিয়ে দেখা যায় বিশাল লাইন। একদিকে গোপনে টাকা নেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে সমান তালে চলছে সিএনজি বিক্রি।

নিষিদ্ধ সময়ে সিএনজি বিক্রির এই ছবি তুলতে গেলেই তেড়ে এলেন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যাক্তি। তিনি নিজেকে ওই স্টেশনের মালিক আলহাজ্ব সিদ্দিকুর রহমান বলে দাবি করে বললেন, `এখানে ছবি তুলছেন কেন?`

জবাবে সংবাদকর্মী পরিচয় দিতেই বললেন- ` আপনি যেই হোন না কেন, ছবি তোলা যাবে না। ’

এক প্রশ্নের জবাবে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘বিকেল তিনটায় যে স্টেশন বন্ধ করতে হয় তা ভালো করেই জানি। কিন্তু লাইনে আরো কিছু গাড়ি রয়েছে, এগুলোতে সিএনজি না দিলে তারা আস্ত রাখবে না। তাই তাদেরগুলো দিয়েই শেষ করা হবে। ’

গতকাল মঙ্গলবারও তার স্টেশনে বাড়তি টাকা নিয়ে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সিএনজি দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাড়তি কিছু সময়তো দিতেই হয়। লাইনে যারা দাঁড়ায় তাদের তো ফিরিয়ে দিতে পারি না। তবে বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। ’

ফারুক নামের এক সিএনজিচালক বাংলানিউজকে জানান, এই দেশে কোনো আইন করা মানেই অনিয়মের রাস্তা করে দেওয়া। বন্ধের আদেশ দিয়ে বন্ধ হয়নি। শুধু দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল ৫০ টাকা বাড়তি দিয়ে ২০০ টাকার সিএনজি নিয়েছি। ’

‘বাড়তি টাকা কেন দিলেন?’ জানতে চাইলে তার সরল উত্তর, ‘গ্যাস নিতে না পারলে গাড়ি বসিয়ে রাখতে হবে। রাতে জমার টাকা পাব কোথায়?’

‘মধ্যবাড্ডার প্রগতি সরণিতে অবস্থিত সিটিজেন সিএনজি অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ফিলিং স্টেশনে সাড়ে তিনটায় গিয়ে দেখা গেলো- সেখানে সিএনজি বিক্রি হচ্ছে অবাধে। সেখানে রশি টানানো থাকলেও সিএনজি দেওয়া শেষ হলে পর্যায়ক্রমে আরেকটি ভেতরে নেওয়া হচ্ছে। ’

‘সিটিজেন সিএনজি অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার বাবুল মিয়া বাংলানিউজকে জানান, আমরা আর ১০ থেকে ১২ মিনিটের মধ্যে বিক্রি বন্ধ করে দেব। ’

‘বাড়তি সময়ে সিএনজি বিক্রির বিষয়টি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্টিবিউশন কোম্পানি জানে দাবি করে ওই ম্যানেজার জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত লাইনে গ্যাস ছিল না। তাই একটু বেশি সময় বিক্রি করা হচ্ছে। ’

‘বন্ধের আদেশ দেওয়ার পর থেকেই তারা এ অনিয়ম করছেন’ এমন অভিযোগ সম্পর্কে বাবুল মিয়া বলেন, ‘যারা লাইনে থাকে তাদের তো দিতেই হয়। ’

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল আজিজ খানের সেল ফোনে কথা হলে বাংলানিউজকে তিনি জানান, কেউ অনিয়ম করলে তার সংযোগ বিছিন্ন করা হবে। মধ্যবাড্ডার বিষয়টি তিনি জানেন না দাবি করে বলেন- `আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো। `

উল্লেখ্য, গত ২১ মার্চ জ্বালানি বিভাগ থেকে এক গেজেট নোটিফিকেশন জারি করা হয়। তাতে ২২ মার্চ থেকে আগামী ২১ মে পর্যন্ত বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই আদেশে আরও বলা হয়- ২১ মে এর পর আগের নিয়মানুসারে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা সিএনজি স্টেশন বন্ধ থাকবে। এতে করে যে গ্যাস উদ্বৃত্ত হবে সেই গ্যাস দিয়ে বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। সেচ মৌসুমের জন্যও এই উদ্যোগ বলেও জানানো হয় ওই নোটিফিকেশনে।

এ আদেশ অমান্যকারীদের জ্বালানি ব্যবহার আইন ২০১০ এর ৮/(৩)(খ) ধারা অনুযায়ী শাস্তি দেওয়ার কথাও বলা হয় তখন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১২

ইএস/ সম্পাদনা: জাকারিয়া মন্ডল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।